ইভিএমে প্রতিটি ভোট পুনর্গণনা কি সম্ভব? হলে কীভাবে?

ইভিএমের ভোট ‘পুনর্গণনা’র দাবি ইসি করলেও যার আবেদনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হল, সেই প্রার্থী বলছেন, এটা ‘লোক দেখানো’, বরং আগের ফলাফলের পুনঃপ্রিন্ট।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2022, 07:30 PM
Updated : 10 Nov 2022, 07:30 PM

নির্বাচনী আপিল ট্রাইবুনালের একটি রায়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) গৃহীত ভোট ‘পুনর্গণনা’ করার পর তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

২০১০ সালে দেশে চালুর পর এই প্রথম যন্ত্রে দেওয়া ভোট পুনর্গণনার দাবি করল নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

তবে ‘পুনর্গণনার’ পর ওই নির্বাচনের ফল একই থেকেছে। আর যার আবেদনে এই ভোট পুনর্গণনা হল, সেই প্রার্থী এই পুনর্গণনাকে বলেছেন ‘লোক দেখানো’। তার ভাষায়, এটা আগের ফলাফলের পুনঃপ্রিন্ট।

ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেছে, কাগজের ব্যালটে যেভাবে প্রতিটি ভোট পুনর্গণনা হয়, ইভিএমের ক্ষেত্রে সেভাবে হয়নি। এখানে শুধু কেন্দ্রের সমন্বিত ফল কেবল যোগ করা হয়েছে মাত্র।

তবে ইভিএমেও প্রতিটি ভোট পুনর্গণনা সম্ভব বলে দাবি করেছেন ইভিএমের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম। তবে তা অর্থ ও সময়সাপেক্ষ বলেও মনে করিয়ে দিলেন তিনি।

যাদের সময়ে ইভিএম প্রবর্তন হয়েছিল, সেই সময়কার নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, “আমাদের সময় ইভিএমে পুনঃগণনার বিষয়টি ছিল না। এখন তা হচ্ছে। আগামীতে জটিলতা যাতে না হয় এ বিষয়ে দৃষ্টান্ত হবে।”

“ব্যালটে যেভাবে সম্ভব সেভাবে তো হচ্ছে না। সবার জানা থাকলে ভালো হবে,” বলেন তিনি।

Also Read: প্রথমবার ইভিএমে ভোট ‘পুনঃগণনা’ করল ইসি

যে কারণে পুনর্গণনা

নির্বাচনী ট্রাইবুনাল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুই বছর আগের নির্বাচনের ভোট পুনর্গণনার আদেশ দিয়েছিল।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। কিন্তু উত্তর সিটির ৬ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী সালাউদ্দিন রবিন ভোট পুনর্গণনার জন্য নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল ওই ওয়ার্ডের ভোট পুনঃগণনার আদেশ দেয়।

ইসির যুগ্ম সচিব (পরিচালক জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান জানান, ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ভোট পুনর্গণনার জন্য নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেন।

ওই কমিটি গত শনিবার সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, প্রার্থী, এজেন্ট এবং তাদের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে ভোট পুনর্গণনা করে।

কাগজের ব্যালটে পুনর্গণনা যেভাবে হয়

২০১০ সালের আগে বাংলাদেশে নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হত শুধু কাগজের ব্যালটে। যে কোনো ভোট শেষ হওয়ার পর গণনা শেষে ফল প্রকাশ হয়। এরপর সব ব্যালট পেপার বস্তায় ভরে সিলগালা করে সংরক্ষণ করা হয়।

ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি কেন্দ্রের প্রতিটি বুথের ব্যালট আলাদা বস্তায় রাখা হয়। কখনও আদালত থেকে ভোট পুনর্গণনার আদেশ হলে প্রয়োজনীয় বস্তা খুলে ব্যালট পেপারগুলো গণনা করা হয়।

২০১০ সালের পর কাগজের ব্যালটের সঙ্গে আসে ইভিএমে। এখন দুই ভাবেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে দেশে।

ইভিএমে ৩ কার্ড ও দুই ডিভাইস

ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান জানান, ইভিএমে ভোটের ফলাফলের তথ্য সংরক্ষণ থাকে ‘অডিট কার্ডে’। এ তথ্য কোনোভাবে জালিয়াতি করাও সম্ভব না। সমন্বিত ফলটি ভোটের পরে দুই বছর, পাঁচ বছরও সংরক্ষিত করে রাখা যায়।

এ যন্ত্রে রয়েছে দুটি ডিভাইস। ব্যালট ইউনিট- ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র বা ডিভাইস। আর কন্ট্রোল ইউনিট-ভোটার সনাক্তকরণ, ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু ও ভোট দিতে তথ্য সংরক্ষণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র বা ডিভাইস।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিব জানান, ভোটের কাজে তিন ধরনের কার্ড ব্যবহার হয়। এর মধ্যে ‘অডিট কার্ড’ হচ্ছে ইভিএম কার্যকর (অপারেশনাল) করা এবং ভোট শেষে ভোটকেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশের কাজে ব্যবহৃত কার্ড। পোলিং কার্ড হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ভোটকক্ষের (পোলিং বুথ) ভোট নেওয়ার যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণের ব্যবহৃত কার্ড। ‘এসডি কার্ড’ হচ্ছে তথ্য ধারণের জন্য ব্যবহৃত মেমোরি কার্ড, যাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এবং ভোটকেন্দ্রের ভোটারদের বায়োমেট্রিকসহ ভোটার তালিকার তথ্য সংরক্ষিত থাকে।

ইভিএমে ভোট পুনর্গণনা হল যেভাবে

বাংলাদেশে যে ইভিএম ব্যবহার হয়, তাতে ভোটগ্রহণ শেষে যন্ত্রে ফল স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসে। এক্ষেত্রে গণনার কোনো প্রয়োজন হয় না। এই ইভিএমে আলাদা করে প্রতিটি ভোট পুনর্গণনার সুযোগ নেই বলেই এতদিন ইসি কর্মকর্তাদের কথায় জানা যাচ্ছিল।

কিন্তু এই সপ্তাহে প্রথম পুনর্গণনার দাবি তোলার পর বিষয়টি বুঝতে কথা বলা হয় ইভিএমের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিবের সঙ্গে।

তিনি জানান, ঢাকা উত্তর সিটির ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ৫৪টি ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল। সেখানকার ৫৪টি অডিট কার্ড নিয়ে পুনর্গণনা করা হয়।

ইভিএমের ভোটের তথ্য সংরক্ষিত থাকে দুটি কার্ডে, একটি হল পোলিং কার্ড, আরেকটি অডিট কার্ড। পোলিং কার্ডে ভোটের ডেটা থাকে, অডিট কার্ডে ফলাফলের ডেটা থাকে।

বিষয়টি বুঝিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিব বলেন, “ধরুন ২০২০ সালের একটি ওয়ার্ডে কলা মার্কায় একটা কেন্দ্রে ৫০০ ভোট পড়েছে, বটগাছ মার্কায় ৬০০ ভোট পড়েছে; আরেকটা মার্কায় ১০০০ ভোট পড়েছে, আরেক মার্কায় ১৯০০ ভোট পড়েছে- ওই রেজাল্টগুলোর তথ্যটা অডিট কার্ডে থেকে যায়। অর্থাৎ প্রতিটি প্রার্থীর পক্ষে প্রতীকের বিপরীতে মোট ভোট পড়ার তথ্য সংরক্ষিত থাকে অডিট কার্ডে।

“কার্ডের মধ্যে ডেটাগুলো সংরক্ষিত থাকে। পোলিং কার্ড ও অডিট কার্ড সংরক্ষণ করে রাখা হয়। সে কার্ডটা নিয়ে আবার যখন ইভিএম মেশিনে দেওয়া হয়, তখন তা প্রদর্শন করে। কেউ যখন চ্যালেঞ্জ করবেন, তখন এটা দেখানো যাবে। এটার প্রিন্টেড কপিটাই ভোটের পর সংশ্লিষ্ট সবাই সাইন করেছিল। এটা দুই বছর, পাঁচ বছর পরে দেখতে চাইলেও অডিট কার্ডে থাকবে।”

কমিশন লোক দেখানো একটা বিষয় করেছে; রেজাল্ট একই দেখিয়েছে।
সংক্ষুব্ধ প্রার্থী সালাউদ্দিন রবিন

কাগজের ব্যালটের ক্ষেত্রে গণনার পর যে ফল তৈরি করা হয় কাগজে, তাতে যেমন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা, প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের স্বাক্ষর থাকে; ইভিএমের ক্ষেত্রেও ফলের একটি প্রিন্টেড কপি কাগজে বেরিয়ে আসার পর ওই ব্যক্তিরা তাতে সই করেন।

কাগজের ব্যালটের সঙ্গে তুলনা করা নিয়ে এক প্রশ্নে লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিব বলেন, ব্যালটে কোন মার্কায় কত ভোট পড়েছে, তা গণনা করা হয়। ইভিএমে প্রতিটি ভোট গণনা করা হয় না। মোট ভোটের সংখ্যাটাই সংরক্ষিত থাকে অডিট কার্ডে।

তার কথায় স্পষ্ট, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুনর্গণনার ক্ষেত্রে প্রতিটি ভোট আবার গণনা করা হয়নি। শুধু প্রতিটি কেন্দ্রের মোট ভোট দেখে তা পুনরায় যোগ করে দেখা হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফলাফল পুনঃগণনা সংক্রান্ত কমিটির প্রধান ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মহাপরিচালক মো. আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা উত্তরের ৫৪টি কেন্দ্রে ৫৪ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন।

“আমরা সিলগালা করা বস্তাগুলো প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রার্থীদের সামনেই খুলেছি কোর্টের আদেশ অনুসারে। তিনটা বা চারটা অডিট কার্ড মিসিং আছে। তবে ওখানে আবার প্রিজাইডিং অফিসারের যে রেজাল্ট শিট, সেটা ছিল এবং ইভিএম থেকে ফলাফলের যে প্রিন্ট কপি থাকে, ভোটের দিন যেটা বস্তার ভেতর দিয়েছিল, সেটা পেয়েছি। সবাই সামনেই ওটা কাউন্ট করেছি।”

তাহলে প্রতিটি ভোট পুনর্গণনা কি সম্ভব?

ইভিএমের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিব বলেন, ইভিএমে মোট ভোটের পাশাপাশি প্রতিটি ভোটের তথ্যও প্রিন্ট করা হয়ত সম্ভব।

“কোন বুথে কে কত ভোট পেল, তার মোট সংখ্যাটার সামআপ রেজাল্টই জানা যায় ইভিএমে। আরও ডিটেইলস হয়ত সম্ভব।”

ইভিএমের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ইভিএমে ভোট পুনর্গণনা চাইলে পোলিং কার্ড ধরে এক একটি করে সবকিছু প্রিন্ট করা সম্ভব।

“সেক্ষেত্রে হাজার হাজার কপি প্রিন্ট করতে হবে। অনেক তথ্যই মেমোরি কার্ডে থাকে। কতটুকু প্রিন্ট করতে চান, সেটা বিষয়।”

ভারতের নির্বাচনে যে ইভিএম ব্যবহার হয়, তার সঙ্গে থাকে ভিভিপ্যাট (ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইল), যার মাধ্যমে ভোট দেওয়া নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ভোট গণনার সুযোগও থাকে।

সেখানে ভোটার ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর মেশিন থেকে একটি কাগজ প্রিন্ট হয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাশের বাক্সে পড়ে; অনেকটা কাগজের ব্যালট পেপারটি মুড়িয়ে বাক্সে ফেলার মতো। ফলে ইভিএমে যেমন ফল দেখা যায়, চাইলে ওই পেপার ট্রেইল গণনাও করে দেখার সুযোগ থাকে।

ভারতের সঙ্গে তুলনা করে অধ্যাপক মাহফুজ বলেন, “সেখানে প্রতি ভোটের তথ্য ইভিএমের পাশাপাশি কাগজেও প্রিন্ট থাকে; তাতে পুনর্গণনার মতো চ্যালেঞ্জেও যেতে হয় না।

“কিন্তু বাংলাদেশের ইভিএমে ভিভিড্যাট (ভোটার ভেরিফায়েড ডিজিটাল অডিট ট্রেইল) থাকে। এখানে ভোট কনফার্মের পরপরই সব তথ্য মেমোরিতে চলে আসে। আর অডিট কার্ডে কেন্দ্রের একীভূত ফল সংরক্ষিত থাকে। এমন পরিস্থিতিতে মেমোরি কার্ডের পুনঃভোট গণনায় প্রতি ভোটের তথ্য প্রিন্ট করার বিষয়টিও বেশ জটিল।”

ইভিএমে পুনর্গণনার প্রয়োজন পড়ে না বলে মনে করেন তিনি।

“ব্যালট পেপারে পুনর্গণনা হত এক প্রতীকের ভোট অন্য প্রতীকে দিয়েছে কি না; কেউ এদিক-ওদিক করেছে কি না ব্যালট: সত্যি কি এত ভোট পড়েছে কি না, গণনায় ভুল করেছে না-এসব দেখার জন্য। কিন্তু ইভিএমে তো এসবের সুযোগ নেই। মেশিনে ভুল করে না।”

ইভিএমে ভোট পুনর্গণনার দুর্বলতা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অংশীজনের আলোচনায়ও উঠে এসেছিল। অনেক দল বলেছিল ইভিএমে ভিভিপ্যাট বা এ জাতীয় কিছুর সংযোজন করার জন্যে, যাতে ভোটাররা বুঝতে পারেন তারা কোন মার্কায় ভোট দিয়েছেন। তবে ইসির বক্তব্য হচ্ছে, বর্তমান ইভিএমে ভিভিপ্যাট সংযোজন করার সুযোগ নেই।

সন্তুষ্ট নন অভিযোগকারী

‘পুনর্গণনা’য় ফলাফলে কোনো হেরফের না হওয়ায় তা নিয়ে সন্তুষ্ট নন নির্বাচনী ট্রাইব্যুলের যাওয়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংক্ষুব্ধ প্রার্থী সালাউদ্দিন রবিন।

তিনি বলেন, “এটা যথাযথ রিকাউন্ট হয়নি। কোর্ট বলেছে- অডিট কার্ড থেকে পুনর্গণনা করতে হবে। তিনটা অডিট কার্ড তো নেই। কমিশন লোক দেখানো একটা বিষয় করেছে; রেজাল্ট একই দেখিয়েছে।”

আদালতে বিষয়টি তুলে ধরবেন জানিয়ে রবিন বলেন, “এখানে যা যা ঘটেছে, তা আগামী ২১ নভেম্বর আদালতে উপস্থাপন করা হবে আইনজীবীর মাধ্যমে। আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকব।”

ঢাকা মহানগর যুগ্ম জেলা জজ আদালত ১-এ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়।

বাদীর আইনজীবী নাজমা জলিল বলেন, “ভোট পুনঃগণনা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ীই হয়নি।”

রবিন ও তার আইনজীবীর ভাষ্য, ওয়ার্ডের ৫৪ কেন্দ্রের মধ্যে যে তিনটি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছিল, তা নিয়ে জটিলতা কাটেনি। ‘অডিট কার্ড’ হারিয়ে যাওয়া তিন কেন্দ্রেই তাদের ভোট বেশি ছিল।

অডিট কার্ড ‘খোয়া গেলে ব্যবস্থা’

ঢাকা উত্তর সিটির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফলাফল পুনঃগণনা সংক্রান্ত কমিটির প্রধান আবদুল বাতেন ওই ওয়ার্ডের ৫৪ কেন্দ্রের ৫৪ অডিট কার্ডের কয়েকটি ‘মিসিং’ বললেও এমন কোনো তথ্য ইসির কাছে নেই বলে দাবি নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “সিলগালা করা বস্তা থেকে অডিট কার্ড গায়েব হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি হয়ে থাকে সেটা আমরা তদন্ত করে দেখতে পারি।

“সিলগালা করা জিনিসপত্র প্রিজাইডিং অফিসার দিয়েই খুলতে হয়। এই রকম যদি কার্ড হারিয়ে থাকে অবশ্যই আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ব্যালট পেপার যেভাবে সংরক্ষণ করা হয়, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ইভিএমের মেমোরি কার্ডগুলোও সেভাবেই বস্তায় ভরে রাখা হয়।

সংরক্ষণ কীভাবে হওয়া দরকার?

ইসির আইনে বলা হয়েছে, ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী উপাদান ৫ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। কেননা প্রায় সব নির্বাচনে নির্বাচিতদের মেয়াদ পাঁচ বছর।

অধ্যাপক মাহফুজ বলেন, “আগে ব্যালট পেপারের এতগুলো কাগজ রাখা কঠিন ছিল, তাই হয়ত ফেলে দিত। এখন তো ছোট একটা চিপ। এক জায়গায় ফেলে রাখলেও ৫-১০ বছর এমনই ভালো থাকবে।”

এই কার্ডগুলো কীভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিশেষ কোনো পদ্ধতিতে সংরক্ষণের দরকার নেই, বস্তায় রাখারই দরকার কী? একটা ছোট প্লাস্টিকের বক্সে রাখলেও হবে।”