তিনি জানান, ফোনে তাকে না পেয়ে মেয়ে, স্ত্রী, ছেলে ও জুনিয়র আইনজীবীর ফোনে এমনকি বন্ধুদের ফোনেও কল করে আজেবাজে কথা বলা হয়।
Published : 06 Dec 2023, 06:12 PM
নাটকীয় ‘ইউটার্নে’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে আওয়ামী লীগে এসে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া শাহজাহান ওমর সামাজিক মাধ্যমে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন জানিয়ে অভিযোগ করেছেন পুলিশের কাছে।
৪৮ বছর বিএনপিতে থাকার পর আওয়ামী লীগে আসার এক সপ্তাহ পর বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান ঝালকাঠি-১ আসনে ভোটে অংশ নিতে যাওয়া এই নেতা।
তিনি জানান, দলবদলের পর থেকে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা অনলাইনে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। তাদেরকে ফোন করেও ‘অকথ্য ভাষায়’ কথা বলা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদেরকে বলেন, "আর ১০ জন মানুষের মতো শাহজাহান ওমরও আমাদের এখানে এসেছেন তার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার ব্যাপারে অভিযোগ দিতে। তাকে সাইবার হেনেস্তা করা হচ্ছে, এই বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা তার অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখব৷"
আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে শাহজাহানের সাবেক দল বিএনপি। গত ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন বিকালে তাকে ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। পরে তিনি নিজেই সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শাহজাহান ওমর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে আসেন এবং ১৯৭৯ সালে ঝালকাঠির সেই আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন। এরপর ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনগুলোর মধ্যে কেবল ২০০৮ সালে অন্য একজনকে প্রার্থী করে বিএনপি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশ মঞ্চেও ছিলেন তিনি। সেদিন বাসে আগুন দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। ২৪ দিনের মাথায় ২৯ নভেম্বর বিকালে জামিন পেয়ে সন্ধ্যায় মুক্তি পাওয়ার পর নাটকীয় কিছুর ইঙ্গিত মেলে।
পর দিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে শাহজাহান ওমর জানান, বিএনপি যেন ভোটে আসে সেজন্য কারগারে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি, গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিলে ভোটে আসার কথা বলেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। পরে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না।
আর কতবার নির্বাচনের বাইরে থাকব: শাহজাহান ওমর
দুদিন পর শাহজাহান ওমর ঝালকাঠি যান, গিয়েই জড়ান বিতর্কে। কাঠালিয়া উপজেলায় একটি স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তার সঙ্গে এবং এক সঙ্গীর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়, যে কারণে তাকে কারণ দর্শাতে বলেছে জেলা নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।
শাহজাহান ওমরের পাশে বন্দুক নিয়ে বিএনপি নেতা, ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ দাবি
ঢাকায় ফিরে সাবেক বিএনপি নেতা নির্বাচন কমিশনে গিয়েও জড়ান বিতর্কে। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি ক্ষেপে গিয়ে জড়ান তর্কে। এরপর তার কর্মস্থল হাই কোর্টে আইন পেশায় যোগ দিতে গিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ক্ষোভ ও কটূক্তির মুখে পড়েন।
আদালত থেকে শাহজাহান ওমর যান গোয়েন্দা কার্যালয়ে। সেখানে তাকে ভাত খাইয়ে আপ্যায়ন করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ।
‘বিভিন্ন মানুষ আমাকে অকথ্য ভাষায় কথা বলে’
গোয়েন্দা কার্যালয়ে গিয়ে শাহজাহান ওমর বলেন, "আপনারা জানেন আগে আমি বিএনপি করতাম। এরপরে ব্যাক্তিগত কারণে আমি আওয়ামী লীগে জয়েন করেছি। আমি একজন সাবেক সংসদ সদস্য। আমি ইদানীং বিভিন্নভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি।
"বিভিন্ন মানুষ আমাকে অকথ্য ভাষায় কথা বলে। মাঝে মাঝে আমার ফোনে আমাকে না পেয়ে আমার মেয়ের ফোনে, স্ত্রীর ফোনে, ছেলে ও আমার জুনিয়র আইনজীবীর ফোনে এমনকি আমার বন্ধুবান্ধবের ফোনেও কল করে আজেবাজে কথা বলে।”
তিনি কল করলে তারা আবার ফোন কেটে দেয় জানিয়ে শাহজাহান ওমর বলেন, “এই জন্যই আমি ডিবি অফিসে হারুন সাহেবকে জানাতে আসলাম, ভাই আমি সাইবার বুলিংয়ের শিকার।"
কারা বুলিং করছে জানতে পেরেছেন কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা তো তারা (পুলিশ) খুঁজে বের করবে। তবে শুধু ফোন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না প্রকাশ্যেও (আদালতেও বিএনপি পন্থি আইনজীবীদের কটূক্তি) হেনেস্তা করা হচ্ছে।”
‘বন্দুকের বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি’
নির্বাচনি এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেখা যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে শাহজাহান ওমর বলেন, “না, না এটা মিসআন্ডারস্টান্ডিং (ভুল বোঝাবুঝি)। আমি আগে বিএনপি করতাম তো। অনেক দিন পরে এলাকাতে গিয়েছিলাম। বিএনপির অনেক লোক আমার সঙ্গে সঙ্গে গেল, আওয়ামী লীগ যারা...”
“এখন তো বিএনপি-আওয়ামী লীগ নাই আমার এলাকায়। আমরা সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে ওখানে। আমার লাইসেন্স করা পিস্তল আছে আপনারা জানেন হয়তবা। সেইটা আমার সঙ্গে ছিল এবং সেইটা আমি অফিসে রেখে চলে আসছি। ইটস অ্যা মিসটেক, অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি।”
তিনি বলেন, “আমার এক লোক সেইটা (বন্দুক) হাতে হাতে নিয়া গেছে। ওখানে কোনো ফরমাল মিটিংও ছিল না, কোনো সভাপতি ছিল না, কেউ বক্তব্যও রাখে নাই।"
‘সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্ক করিনি, অনুমতি ছাড়া ছবি তুলেছে’
নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কের বিষয়ে এক প্রশ্নে শাহজাহান ওমর জানান, তার অনুমতি ছাড়া ছবি তোলায় তিনি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তর্কাতর্কিকে ‘রং (ভুল) ইনফরমেশন’ জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনি আচরণবিধি আমার কাছে ছিল না, আমি গিয়েছিলাম সেটা আনতে। এখন দেখেন, আপনি আমার ছবি তুলতেই পারেন। কিন্তু বলতে হয় না ভাই, আপনার একটা ছবি তুলি?
“এটুকু তো আমি অন্তত আশা করতেই পারি। জানলার ফাঁক দিয়ে ছবি তোলে। আমি বলেছি যে, ‘আপনে এই কাম করেন কেন? আপনি সামনে আসেন। আমাকে বলেন যে, ভাই আপনার একটা ছবি তুলব। অসুবিধা কী? সাংবাদিক হিসাবে আপনারা ছবি তুলতেই পারেন, কথা বলতেই পারেন কিন্তু এ রকম লুকিয়ে লুকিয়ে কেন করেন ভাই?’।”
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেন, “ভাই, ছবি তোলার আগে আমার পারমিশন নেন, তারপর ১০ বার তোলেন আমার আপত্তি নাই। ওপাশ থেকে বলা হলো আপনি ধমক দিয়ে কথা বলেন। তখন আমি বললাম, ‘ধমক দিলাম কই? আপনারা আমার সঙ্গে সৌজন্যতাবোধ দেখান আমিও দেখাব’।"
সেই আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবেন কি না- এমন প্রশ্নে শাহজাহান ওমর বলেন, "নো ব্রাদার, সাংবাদিকদের সঙ্গে আমি কোনো দুর্ব্যবহার করিনি। খুবই সদাচরণ করেছি।"
আদালতে কেন গিয়েছিলেন
ডিবি কার্যালয়ে আসার আগে শাহজাহান ওমর যান সুপ্রিম কোর্টে। তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়ার পর আইন পেশাতেও জড়ান এবং তার ব্যরিস্টারি ডিগ্রিও আছে। তার চেম্বার উচ্চ আদালতেই।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে সাক্ষাৎ পাননি বলে যে প্রচার আছে, সে প্রশ্নে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া নেতা বলেন, “আমি সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। আইনজীবীদের বার কাউন্সিলে সদস্য হতে হয়। গত ১০ থেকে ১২ বছর 'বাই মিসটেক' সদস্যপদটা আমি রিনিউ করিনি। কিছু চাঁদা দিতে হয় বার কাউন্সিলে প্রতি বছর। এটা আমার জুনিয়ররাও বলে নাই, ক্লার্কও বলে নাই। এগুলো যখন করতে গেলাম তখন আমাকে বলা হলো রেজিস্ট্রার সাহেবের থেকে একটা ফর্ম আনেন। আমি রেজিস্ট্রারর সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম।
“সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের কাছে আমার যাওয়াটা সাজে না। তাছাড়া পলিটিক্যাল বিষয়ে তার কাছে কেন যাব?"