৬২ স্বতন্ত্র এমপির সঙ্গে মতৈক্য হওয়ায় তাদের ভাগের ১০ আসনেও আওয়ামী লীগই প্রার্থী দেবে।
Published : 31 Jan 2024, 04:17 PM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ৪৮টিই এবার যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ভাগে।
সংসদে নৌকা প্রতীকে জয় পাওয়া ২২৫ এমপির হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী আনুপাতিক হারে নিজেরা পচ্ছে ৩৮টি সংরক্ষিত আসন। ৬২ স্বতন্ত্র এমপির সঙ্গে মতৈক্য হওয়ায় তাদের ভাগের ১০ আসনেও আওয়ামী লীগই প্রার্থী দেবে। বাকি দুটি সংরক্ষিত আসন পাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।
১৪ দলীয় শরিকদের জোটবদ্ধ করার এবং স্বতন্ত্রদের সমর্থনের চিঠি বুধবার নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দ্বাদশ সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন ভবনে গিয়ে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমের কাছে ওই চিঠি হস্তান্তর করে।
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, “দ্বাদশ সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনের বিষয়ে আমরা কাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছি সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত পত্র নিয়ে এসেছি।”
আর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের প্রধান হুইপ স্বপন বলেন, “আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদেরকে স্বতন্ত্র ৬২ জন সংসদ সদস্য সমর্থন দেবেন। সেই সমর্থনসূচক আলাদা আালাদা চিঠি তাদের স্বাক্ষরসহ আওয়ামী লীগের মাধ্যমে সন্নিবেশিত করে ইসি সচিবের কাছে জমা দিয়েছি। কমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।”
বাংলাদেশের আইনে সাংসদের ৩০০ আসনে সরাসরি ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০ আসন বণ্টন হয় আনুপাতিক পদ্ধতিতে। সাধারণভাবে বললে, প্রতি ছয়টি আসনের বিপরীতে একটি দল বা জোট সংরক্ষিত একটি আসন পায়।
গত ৭ জানুয়ারি সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হয় ২৯৯ আসনে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি, ১৪ দলীয় শরিক জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি, কল্যাণ পার্টি একটি আসন পেয়েছে। জাতীয় পার্টি ১১টি আসন পেয়ে আবারও প্রধান বিরোধী দল হয়েছে। তবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬২টি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র এমপিরা।
নিয়ম অনুযায়ী জোটবদ্ধ হলে স্বতন্ত্র এমপিরা জোটবদ্ধ হলে সংখ্যানুপাতিক হারে ১০টি সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী মনোনয়নের সুযোগ পেতেন। নির্বাচনের পর থেকে সেই আলোচনাই ঘুরে ফিরে আসছিল।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববার স্বতন্ত্র এমপিদের গণভবনে ডেকে নেন। সেই বৈঠকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার হাতেই ছেড়ে দেন।
হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বুধবার দলের চিঠি ইসিতে পৌঁছে দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের পাশাপাশি ১৪ দলীয় জেটের আরও দুজন সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন। ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন; তারাও সম্মতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত নারী আসনে যাদের মনোনয়ন দেবেন তাদেরকে সমর্থন দেবেন।”
তিনি বলেন, “স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা স্বেচ্ছায় তাদের ভোটাধিকার আওয়ামী লীগের কাছে সমর্পণ করেছেন। তারা আওয়ামী লীগ যে প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে, তাদের সমর্থন দেবেন, সেই সম্মতি তারা জ্ঞাপন করেছেন।
“ইসি সচিব প্রত্যেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন, তাদের অবস্থান কী। তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের ক্ষমতাটি অর্পণ করেছেন। ৬২ জনই তাদের ভোটাধিকার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নিকট সমর্পণ করেছেন। আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দেবেন, তাকে সমর্থন দেবেন।”
স্বতন্ত্রদের স্বাতন্ত্র্য থাকবে?
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করায় সংসদে তাদের ভূমিকায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না, সেই প্রশ্ন সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সামনে রেখেছিলেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, “স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা আমাদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী যে সব সুবিধা প্রাপ্ত হওয়ার কথা, সেটি তারা প্রাপ্ত হবেন এবং সংসদকে প্রাণবন্ত করার জন্য নিজস্ব পদ্ধতিতে ভূমিকা পালন করবেন।”
সরকারি দলের এই হুইপের ভাষায়, সংসদ হচ্ছে ‘জবাবদিহিতার জায়গা’। আর কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সরকারি দলের চেয়ে পার্লামেন্টে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ‘ভূমিকা রাখার সুযোগ বেশি’।
“সেই ভূমিকাটি অতীতেও আমরা দেখেছি। গত জাতীয় সংসদেও দেখেছি, তার আগের সংসদেও দেখেছি। স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এবারও পার্লামেন্ট প্রাণবন্ত হবে, পার্লামেন্ট কার্যকর হবে। পার্লামেন্টে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার সংসদ সদস্যরা তারা সে বিষয়ে কাজ করবেন।”
স্বতন্ত্ররা কি আওয়ামী লীগের হুইপিংয়ে থাকবে? এ প্রশ্নে স্বপন বলেন, “তারা কার হুইপে থাকবে এ বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হবে। তবে এখানে হুইপিংটা বড় বিষয় নয়। হুইপিং মূলত সরকারি দলের ওপর প্রযোজ্য হয়। স্বতন্ত্রের উপর হুইপিংটা প্রযোজ্য হয় না। প্রত্যেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের আলাদা আইডেন্টিটি রয়েছে। তারা তাদের স্বীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, তারা সমালোচনা করবেন, সাধুবাদ দেবেন। নেতিবাচক-ইতিবাচক কথা বলবেন-এটি তাদের স্বীয় সিদ্ধান্ত।”
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “তাদের (স্ততন্ত্ররা) অধিকাংশই বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা। তাদের মূল নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তারা জননেত্রীর কাছে আবেদন করেছেন- তারা যেন ঘরের ছেলে ঘরে থাকতে পারেন।
“জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- ‘তোমরা কেউ আমার ডান হাত, কেউ আমার বাম হাত। সবাই তো আমার। সারা বাংলাদেশই আমার। আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, জাতির পিতার মেয়ে, সারা বাংলাদেশই আমার, আমি সারা বাংলাদেশকে ধারণ করি।”
স্বপন বলেন, “সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে, এখানে গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবার জন্যে এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে, সংসদকে সুন্দর ও কার্যকর করবার জন্যে, প্রাণবন্ত করার জন্যে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানও প্রতিনিধি দলে ছিলেন।
পুরনো খবর
সংরক্ষিত মহিলা আসনের জামানত হল ২০ হাজার টাকা