“বাংলাদেশের মানুষকে কি দাবানো সম্ভব হয়েছে? হয়নি, হবেও না।”
Published : 06 Nov 2022, 07:39 PM
সরকারের বিরুদ্ধে ‘জনগণ ঘুরে দাঁড়াতে’ শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “জনগণ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। জনগণ আমাদের থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। আপনার যে কয়েকটা সমাবেশ (বিভাগীয় সমাবেশ) হলো, এই সমাবেশে আমরা যেটা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে- দি পিপলস আর অ্যাহেড। বরিশালের সমাবেশ, খুলনার সমাবেশ, ময়মনসিংহের সমাবেশ- মানুষ সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে চলে এসেছে।”
বরিশালের সমাবেশের আগে সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “মানুষ নদী সাঁতরে পার হয়েছে, পরপর দুই রাত্র খোলা আকাশের নিচে তারা শুয়ে থেকেছে। এটা দেখে আমরা বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছি এই বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে। আমাদের মধ্যে বিশ্বাস জন্মে উঠেছে- মানুষের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে পরিবর্তনের, তারা পরিবর্তন চায়।”
মামলা-মোকদ্দমা করে বিএনপিকে সরকার দমাতে পারেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “স্তিমিত করে দিতে পারেননি। কত কথা বলেছেন, হাঁটুভাঙা, মাঝা ভাঙা, অনেক কিছু বলেছেন। তাই যদি হয় তাহলে কেনো এতো ঘাবড়ে গেছেন, এতো আশঙ্কা কেন?
আন্দোলন বন্ধে ‘দমন প্রক্রিয়া’ শুরু হয়েছে
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে সকালে আমাদের মহিলা দলের নেত্রী সুলতানা আহমেদকে র্যাব তুলে নিয়ে গেছে। দক্ষিণ সিটির আমাদের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনসহ ১১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, ভোলার আমাদের সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরসহ নেতা-কর্মীদের বহনকারী লঞ্চে হামলা করে মামলা দেওয়া হয়েছে।
“এখন গায়েবি মামলা শুরু হয়েছে আবার। সাভারে কোনো ঘটনাই ঘটেনি, মিছিল ছিল; সেখানে আমাদের সাভারের নেতা দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিনসহ দেড়শ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রসেস হ্যাজ স্টার্ডেড যে, আন্দোলনকে কীভাবে মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া যায় দমন নীতি চালিয়ে; সেই প্রসেস তারা শুরু করেছে।”
যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একসাথে আন্দোলনটা করতে চাই, যুগপৎভাবে করতে চাই; এটা আমাদের স্থির সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি।
“…তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি হবে না হবে বা নির্বাচনকালীন সরকার কি হবে না হবে, সেটা আমরা আলোচনার মধ্য দিয়ে ঠিক করে ফেলব। এটা বেশি সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করি না। আর জাতীয় সরকার আমরা বলেছি যে, আন্দোলনের পরে নির্বাচন শেষে যারা আসবেন আমরা সব দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। এটা আমাদের প্রস্তাব।”
‘পরিবর্তনের জন্য এক হোন’
মির্জা ফখরুল বলেন, “যে কথাটা কিছুক্ষণ আগে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন যে মন্ত্রী বানাতে হবে, ওগুলো না। আমরা বলি তো মন্ত্রী বানাতে হবে না। আমাদেরকে ক্ষমতা দিয়েন না, কিন্তু পরিবর্তনটা আনুন। এদেশের মানুষকে বাঁচতে দিন, এদেশের মানুষকে একটা উচ্চ সমাজে বাঁচতে দিন।
“এদেশের মানুষকে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা গুলো পূরণ করবার একটা ক্ষেত্র তৈরি করে দিন। আসুন, আমরা সবাই একসাথে হই; এটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।”
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “বিভিন্ন সমাবেশ থেকে বোঝা যায় দেশে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছে। গোটা পরিস্থিতি এখন বদলে গেছে। এখন আর কোনো ভয়ের চাঁদর নেই। এই যে সংকট চলছে, এই সংকটে বিএনপি একা নয়; আমরাও পাশে আছি।
“আসুন আমরা সকলে এই সংকট উত্তরণে এক হয়ে কাজ করি। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা নীতিগতভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই শর্তহীনভাবে, জনগণের কল্যাণ চাই, একটা সত্যিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই।”
‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ আগামী ১২-১৯ নভেম্বরের মধ্যে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে সংলাপ করবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “বিএনপির সমাবেশগুলোতে বাজারের আগুন ও মানুষের মনের আগুন এক হয়ে গেছে। এটাই বাস্তবতা। এই পরিস্থিতি এখন গণঅভ্যুত্থানের কাছাকাছি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, “আমরা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একটি নতুন রাজনৈতিক চুক্তির ভিত্তিতে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমাদের সরকার পতনের আন্দোলনকে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে হবে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের চৌধুরী হলে নাগরিক ঐক্যের ‘যুগপৎ আন্দোলন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম।
‘গণজাগরণ দমানো যাবে না’
এদিকে রোববার বিকালে নয়া পল্টনে এক সমাবেশে ফখরুল বলেন, “যারা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাতে আমি গুরুত্ব দেই না। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য ওয়ারেন্ট, অসংখ্য মামলা এবং তার বিরুদ্ধে সাজা। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাতে কি তারেক রহমান সাহেবের কিছু যায় আসে? আর আমাদের চেয়ারম্যান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে তাকে গৃহে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে …. ।
‘‘ এই মিথ্যা মামলা, এই হত্যা, এই অত্যাচার-নির্যাতনে কি আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে পেরেছে? বাংলাদেশের মানুষকে কি দাবানো সম্ভব হয়েছে? হয়নি, হবেও না। একটা কথা আছে, সমুদ্রে নদীতে শয্যা, শিশিরে কিবা ভয়। আরে আমি তো সমুদ্রে বাসা বেঁধেছি, সেখানে এক কোণা শিশিরে আমি ভয় পাই না। আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ ওই শপথ নিয়ে জেগে উঠেছে যে, এই ভয়াবহ দানবীয় এই কর্তৃত্ববাদী একনায়ক সরকারকে তারা হটাবেই।”
জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সহধর্মিনী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ারি জারির প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “ভেবেছিলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বন্দি করলে বিএনপি থাকবে না। তারেক রহমান রাজনীতিতে আসায় আপনাদের সহ্য হচ্ছে না, তাই না? কিন্তু আপনাদের সহ্য করতে হবে। তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবে এবং এদেশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবে। এটা আপনাদের সহ্য করতে হবে।”
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামরুজ্জামান রতন, সাইফুল আলম নিরব, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, মামুন হাসান, ইসাহাক সরকার, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ।