‘১০২, নট আউট’ সিনেমাটা দেখছেন? জন্মদিনে প্রশ্ন ফখরুলের

“আমার কাছে এখনকার জন্মদিন নিদারুণ কষ্টের…।“

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2023, 07:05 AM
Updated : 26 Jan 2023, 07:05 AM

সবাই শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন বটে, তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মনে আরও একটি বছর হারিয়ে ফেলার বেদনা। আবার সিনেমায় দেখা শতবর্ষীর জীবন তাকে প্রেরণাও যোগাচ্ছে। এই আশা-নিরাশাই তো জীবন!

বৃহস্পতিবার সকালে অস্ট্রেলিয়া থেকে বড় মেয়ে মির্জা শামারুহ ফোন পেয়ে ঘুম ভেঙেছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের। জীবনের ৭৫ বছর যে তিনি পূর্ণ করলেন! ১৯৪৮ সালের এই দিনে ঠাকুরগাঁওয়ে তার জন্ম।

সকালে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ফখরুল বলেন, “জন্মদিন মানে আরো একটি বছর চলে যাওয়া। বৃদ্ধ থেকে বৃদ্ধের পথে যাচ্ছি। সকালে দুই মেয়ের টেলিফোনে ঘুম ভেঙেছে আমার। দুই মেয়ে আর আপনাদের ভাবির (রাহাত আরা বেগম) শুভেচ্ছায় দিন শুরু করেছি। আমার বড় মেয়েই প্রথম ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ বলল।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল স্ত্রী রাহাত আরা বেগমকে নিয়ে উত্তরায় ভাড়া বাসায় থাকেন। সকালে স্ত্রী তাকে জন্মদিনের ‘উইশ’ করেছেন। একসাথে সকালের নাস্তা করেছেন। তারপর বাসা থেকে নিজের প্রাইভেট কারে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

পথে যেতে যেতে গাড়িতে বসেও অনেক নেতার ফোন পাওয়ার কথা জানালেন ফখরুল। তবে তাতে তার নিজের খুব একটা আনন্দ হচ্ছে না।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার কাছে এখনকার জন্মদিন নিদারুণ কষ্টের। কারণ আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী গণতন্ত্রের মাতা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি, এখন গৃহে অন্তরীণ হয়ে আছেন। নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণায় দিনযাপন করছেন। এরকম একটা অবস্থায় জন্মদিন নিয়ে কি বলার আছে?”

২০১১ সাল থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসা মির্জা ফখরুল ২০১৬ সালে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে মহাসচিব নির্বাচিত হন।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ার পর থেকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে অনুপস্থিত। তার ছেলে তারেক রহমান এখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, তিনিও প্রায় দেড় দশক হল পরিবার নিয়ে আছেন লন্ডনে।

এ অবস্থায় দেশে বিএনপির রাজনীতির মুখ বলতে মির্জা ফখরুলই কর্মীদের সামনে আছেন। গত এক যুগে তার এক দফা পদোন্নতি হলেও দলের অবস্থার উত্তরণ ঘটেনি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সাফল্য আসেনি, নির্বাচনে দেখতে হয়েছে ভরাডুবি।

উত্তরার বাসা থেকে সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হন মির্জা ফখরুল। আগেই তিনি বারণ করে দিয়েছিলেন, জন্মদিনে তাকে যেন ফুল দিয়ে বরণ করা না হয়।

নয়া পল্টনের সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সাংবাদিকরা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালে মির্জা ফখরুল বলেন, “ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, আমার সময় প্রায় শেষের দিকে।”

পাশে বসা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম এসময় বলেন, “একটা ছোট গোলাপ দিলে ভালো হতো।”

সঙ্গে সঙ্গে ‘না না’ করে উঠে মির্জা ফখরুল বলেন, “প্লিজ এটা করবেন না।”

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “‘ওয়ান হান্ড্রেড টু, নট আউট’, দেখছেন ছবিটা? এই ছবিটা সকলকে দেখতে বলব। ইটস এ ওয়ান্ডারফুল মাস্টার পিস। আমাদের মত মানুষদের এই জীবনকে পজিটিভলি নেওয়া– এটা এত চমৎকারভাবে এই ছবিতে উঠে এসেছে..।

 “অনেকে আছেন না, বৃদ্ধ হয়ে যায়, মরার আগে মরে যায়। তো ওটাকে নেগলেট করে ১০২ বছরের বৃদ্ধ সে জীবনকে উপভোগ করতেছে, এটা দেখার মত। সকলেরই এই ছবি দেখা উচিত।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মির্জা ফখরুল ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি।

তার বাবা প্রয়াত মির্জা রুহুল আমিন ছিলেন মুসলিম লীগের নেতা, পাকিস্তান আমলে মন্ত্রীও ছিলেন তিনি।

লেখাপড়া শেষ করে ঢাকা কলেজসহ কয়েকটি সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন ফখরুল। ১৯৮৬ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮৮ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে জিতে হন চেয়ারম্যান।

মির্জা ফখরুলের জাতীয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি আবদুল হামিদ খান ভাসানীর দল ন্যাপে। সেখান থেকেই তার বিএনপিতে যোগদান।

১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী এস এ বারীর একান্ত সচিব ছিলেন ফখরুল।

১৯৯২ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি, পরে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব পদে উঠে আসেন তিনি।

এই পদটি সৃষ্টি করা হয়েছিল তারেক রহমানের জন্য। তিনি দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পর ওই পদে মির্জা ফখরুলকে আনেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ২০১১ সালে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হন মির্জা ফখরুল। ২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তিনি মহাসচিব হন।

বিএনপির শীর্ষ পর্য়ায়ের নেতৃত্বে আসার আগে তিনি জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রথম সহসভাপতি এবং পরে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন।

ঠাকুরগাঁও ১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফখরুল। ২০০১-২০০৬ মেয়াদের বিএনপি সরকারে তাকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পরে কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।

২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তিনি শপথ না নেওয়ায় ওই আসনে উপ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপির জিএম সিরাজ সংসদে যান।

ফখরুলের বড় মেয়ে শামারুহ মির্জা স্বামী-সন্তান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আছেন। সিডনির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ছোট মেয়ে সাফারুহ মির্জা ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা করেন।