আইএমএফের ঋণের জন্য এখন মানুষকে নির্যাতন করছে: ফখরুল

পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিবের এমন মন্তব্য।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2022, 01:18 PM
Updated : 21 Nov 2022, 01:18 PM

‘দুর্নীতিতে নিমজ্জিত’ সরকার এখন আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য মানুষের ওপর ‘নির্যাতন’ শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করতে গিয়ে তার এমন মন্তব্য আসে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এদিন পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়ে বলেছে, সাধারণ গ্রাহকদের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না।

তবে ফখরুল ওই সিদ্ধান্তকে ‘মরার ওপরে খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সরকারকে স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এই দাম যদি না কমানো হয়, বিদ্যুতের দাম আগের জায়গা না নামায়, তাহলে জনগণই প্রতিরোধের ব্যবস্থা করবে।”

বিএনপি মহাসচিবের ভাষায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ‘জনগণের বিপরীতে’ অবস্থান নিয়ে ‘গণশত্রুতে’ পরিণত হয়েছে।

“দুর্নীতি এমন করেছে, প্রত্যেকটি খাতে, প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ে, প্রত্যেকটি অধিপ্তারে যে এখন কোনোমতেই সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে তারা জনগণের ওপরে অত্যাচার-নির্যাতন করা শুরু করেছে। আজকে যদি দুর্নীতি তারা (সরকার) কমাতে পারতেন, আজকে যদি জনগণের টাকা এভাবে পাচার না করতেন, তাহলে এই সঙ্কট মোকাবিলা করা জনগণের জন্য অনেক সহজ হত।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, দুই সদস্য সচিব আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।

রিজার্ভ সমাচার

সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে রিজার্ভ কমে যাওয়ার জন্য সরকারকে দায়ী করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “পত্রিকা লিখছে যে, ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলা যায় না, কারণ তাদের ডলার নেই...। রিজার্ভের টাকা তো লোপাট করে ফেলেছে আগে থেকেই এবং এতো বেশি লোপাট করেছে যে, নিজেই ডিফেন্সিভ হয়ে বলছেন, ‘না আমরা রিজার্ভ চিবিয়ে খাইনি’। আপনারা চিবিয়ে খাননি আমরা জানি, আপনারা গিলে ফেলেছেন এবং সেগুলো আবার পাচার করে দিয়েছেন।”

ফখরুল বলেন, “আপনি সাধারণ মানুষের কাছে যান, রিকশা শ্রমিকের কাছে যান, হকারের কাছে যান, সেই বলবে যে, এই সরকার চোর।” 

দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটের দায় সরকার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর ‘চাপাতে চাইছে’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “হয়ত কিছুটা আছে। কিন্তু শুরুটা করেছো তুমি অনেক আগের থেকে। দেশের সমস্ত সম্পদকে লুট করছো, ১০ বছরের ৮৬ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছো। গত এক বছরেই শুধুমাত্র ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছো। “

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “মানুষ জেগে উঠেছে। মানুষ কিন্তু পিছিয়ে নেই। প্রত্যেকটা সমাবেশে আমার এই বৃদ্ধ বয়সে আমাকে যে অনুপ্রাণিত করেছে যে, এখন আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ সেই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে এদের পরাজিত করতে হবে।”

প্রেকক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের যৌথ উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

‘দয়া করে ন্যায় বিচার করুন’

বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর ‘দমন-পীড়ন’ হচ্ছে অভিযোগ করে মহাসচিব বলেন, “আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি বিচার বিভাগকে বলতে চাই, বিচারকদের প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই, দয়া করে ন্যায়বিচার করুন।”

সরকারকে হুঁশিয়ার করে ফখরুল বলেন, “এখনো সময় আছে, আমি আগে বলেছি, এখনো বলছি, সরে দাঁড়ান, নিরাপদে সরে দাঁড়ান। তা না হলে জনগণের মধ্যে যে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে সুনামির মত, তাদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে এবং এর নেতৃত্বে আছেন আমাদের তারেক রহমান, তারুণ্যের প্রতীক।”

উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণিচৌধুরী, ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান থোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্র দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বক্তব্য দেন।