Published : 10 Dec 2022, 05:49 PM
কিশোরগঞ্জ থেকে গোলাপবাগের সমাবেশে এসেছেন জোনায়েদ রাব্বানী। পথে পথে বাধা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত অংশ নিতে পেরে তার আশা পূরণ হইছে। শীতের মধ্যে কষ্ট হলেও মাঠ ভর্তি মানুষজন দেখে আর ঝামেলাবিহীন সমাবেশে থাকতে পেরে জয়ের আনন্দই পেয়েছেন তিনি।
শনিবার অনেক ঘটনা, বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগে মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসেছিলেন দলের প্রতি টান থেকেই।
যাত্রাপথের বর্ণনা তুলে ধরে রাব্বানী বলেন, “এই শীতের মধ্যে আমরা ঢাকায় এসেছি। পথে পথে কত বাধা, কত চেকিং। কিন্তু পারেনি আটকাতে আমাদেরকে।
‘‘সুন্দর শান্তিপূর্ণ এই সমাবেশ সরকার করতে দিতে চায়নি। দেখেন আমরা যুবদল বলে লাল টুপি পড়েছি। দলের একজন টুপি দিয়েছে। খুব ভালো লাগছে। দেশে গিয়ে বলব, আমরা করেছি জয়, আমরা জিতবই।”
কিছুটা কম দূরত্বের নারায়ণগঞ্জ থেকে ভ্যানে এসেছেন পাঁচজন নারী। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সদস্য তারা। তাদের একজন সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘‘একটা ভ্যান ভাড়া করে এসেছি। ভ্যানচালক করিম মিয়াও বিএনপি করে। খুব কম ভাড়ায় এখানে আসছি। ভালো লাগছে খুবই।”
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘দেখেন ভাই আমরা কত দুঃখের মধ্যে আছি। তারপর মানুষজন মিছিলের পর মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসছে, সবার কণ্ঠে শ্লোগান, সবার মনে আনন্দ। কারণ একটাই- আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে সরকারের মুখে ছাই ছুঁড়ে দিয়েছি।“
তার ভাষ্য, “ওরা (সরকার) মিথ্যা কথা বলেছে যে, আমরা না কি সমাবেশে নামে সন্ত্রাস করব। এভাবে খাড়া মিথ্যা কথা বলে সরকার মানুষের সঙ্গে দিনে রাতে প্রতারণা করছে।”
বড়দের সঙ্গে ছোটদেরও দেখা গেছে মাঠের বাইরে সমাবেশের জমায়েতে। ছয় বছরের মুন্নী বাবার সঙ্গে সমাবেশের পথে অনেকটা এসেছিলেন। হাজার হাজার মানুষের ভিড় ঠেলে গোলাপবাগ মাঠ পর্যন্ত যেতে পারেননি। হাতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছবি। তার সঙ্গে আসা চার বছরের বোন সুমিরও হাতে একই ছবি।
দুই বোনেরই শখ ছিল সমাবেশে খালেদা জিয়াকে দেখার বলে জানালেন তাদের বাবা মনিরুছ সালেহীন। তাদের বোঝাতে না পেরে বায়না মেটাতে সমাবেশে আসার উদ্দেশ্যে শাহজাহানপুর থেকে রওনা দেন তারা।
বাবার ভাষ্য, সকাল থেকে মেয়েরা সমাবেশে আসতে কান্না করছিল। সেজন্য ওদের নিয়ে বের হয়েছেন এতটা ভিড় ঠেলে এগোতে পারেননি বলে ওদেরকে কিছুটা ঘুরিয়ে বাসার পথ ধরেন।
সালেহীন কাছে যেতে না পারলেও সবুজবাগের ভ্যানচালক সবুজ মিয়া মেয়ে তামান্নাকে কাঁধে চড়িয়ে সমাবেশস্থলে পৌঁছে গেছেন।
এখানে আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “চালের দাম বাইড়্যা গেছে। বাচ্চাদের ঠিক মত খাওন দিতে পারি নাই। এ সমাবেশ চাল-ডালের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ শুইনা আইছি প্রতিবাদ জানাতে। আর সংসার চালাতে পারি না।”
মুন্সিগঞ্জ থেকে শুক্রবার দুপুরে এসেছেন সোহরাব আলী। তিনি বলেন, ‘‘বিকাল বেলা মাঠে এসেছি। রাতে এখানে চাটাইতে ঘুমাইছি। খিচুরি খাইয়া রাত গেছে, সকালের নাস্তাও করেছি।
“কিন্তু দেখবেন, এই এলাকার সব হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিছে। আমি এক মাইল হেঁটেও একটা খোলা পাইনি। এইভাবে কী সমাবেশে লোক কমানো যায় ভাই।”
এত কষ্ট করে কেনইবা আসছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ভাই আমার বিরুদ্ধে ২৫টি মিথ্যা মামলা, আমার ছেলের বিরুদ্ধে ৭টি মামলা, আমার মেয়ের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা, আমার বৃদ্ধ মায়ের বিরুদ্ধে ২টি মামলা। এভাবে আর দিন চলে না। সেজন্য সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি।”
সমাবেশে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণ দেখে যাত্রাপথ আর খাওয়ার কষ্ট ভুলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এত মানুষ দেখে আমার মন আনন্দে ভরে গেছে, চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে- আমরা মরি নাই, আমরা বেঁচে আছি।”
সমাবেশে গোলাপবাগের পুরো মাঠজুড়ে চোখে পড়েছে রঙের ছড়াছড়ি। কেউ নীল গেঞ্জি, কেউ সাদা, কেউবা লাল আর অনেকে সবুজ গেঞ্জিতে দলবেধে বসেছিলেন। নেতাকর্মীদের ক্ষণে ক্ষণে করতালি ও শ্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো প্রাঙ্গণ।
হাসিমুখে মোবাইলে একে অপরের সঙ্গে ছবি তোলার দৃশ্যও আনন্দ যুগিয়েছে তাদের। নেতা-নেত্রীর সঙ্গে সেলফি তুলতে পেরে খুশিই হয়েছেন তারা। তাদেরই একজন রাজশাহী থেকে আসা বাস শ্রমিক আরিফুর রহমান তমাল।
তার ভাষ্য, ‘‘গত কয়েকটি দিন কী কষ্টই না করছি। হোটেল বন্ধ, রাস্তা-ঘাটে সাদা পোশাকে পুলিশ ওৎ পেতে ছিল গ্রেপ্তার করতে। মাঠে আজকে খন্দকার মোশাররফ স্যার, এমপি রুমিন ফারহানা আর লিডার মিজানুর রহমান মিনু ভাইয়ের সাথে সেলফি তুলেছি- সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে আমার।”
রাতেই বাসে রাজশাহী রওনা হবেন বলে জানান তমাল।