গোলাপবাগে বিএনপি, মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগ

বিএনপির সমাবেশের দিন ঢাকা শহরে তৎপর ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2022, 09:36 AM
Updated : 10 Dec 2022, 09:36 AM

সায়েদাবাদের গোলাপবাগে বিএনপির সমাবেশের দিন ঢাকার মোড়ে মোড়ে অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

বিএনপির নাশকতার যে কোনো চেষ্টা প্রতিরোধ করতেই এই অবস্থান বলে ক্ষমতাসীন দলটির নেতাদের দাবি। তবে বিএনপির কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের সমাবেশে যেতে বাধা দিতেই এই কর্মসূচি নিয়ে নামে ক্ষমতাসীন দলটি।

বিএনপির সমাবেশের দিন ‘খেলা হবে’ স্লোগানে উত্তেজনার পারদ তোলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১০ ডিসেম্বর নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছিলেন।

সেই নির্দেশনায় শনিবার সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। বিভিন্ন মোড় ও গলির মুখে তাদের লাঠিসোঁটা নিয়েও অবস্থান দেখা যায়। তারা বিভিন্ন জনকে তল্লাশিও করছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন তল্লাশিতে ৫ জনকে ধরে পুলিশে তুলে দেয় ছাত্রলীগ।

দুপুরে বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ডি মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। সেখানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সকাল থেকেই বসে ছিলেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা জানেন আজ ১০ ডিসেম্বর, বিজয়ের মাস। বিএনপি ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে এই মাসের পবিত্রতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। আপনাদের দোয়ায় শেখ হাসিনার সঠিক সিদ্ধান্তে তাদের এই ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেছে।

“তারা বলেছে, ১০ ডিসেম্বর তারা নাকি ঢাকা শহর দখল করবে। আজ খালেদা জিয়া সরকার দখল করবে। এই পরিকল্পনা নিয়ে তারা সন্ত্রাসী কায়দায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ঢাকাবাসীসহ সারা বাংলাদেশের মানুষ তাদের এই স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “তারা জানে না আওয়ামী লীগের সরকার, শেখ হাসিনার সরকার কচু পাতার পানি নয়। এই সরকারকে হটাতে গেলে মাজা ভাঙা বিএনপির পক্ষে কোনোভাবে সম্ভব না। তারা কাগুজে বাঘ। খেয়াল করে দেখেন, কাল মঞ্চ করতে লোকও খুঁজে পাওয়া যায়নি।"

যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগের শীর্ষ নেতারা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এলেও ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণ শাখা ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্ব পূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়ে ছিলেন।

কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু অ্যভিনিউয়ে।

ফার্মগেইটে সকালেই অবস্থান নেন যুবলীগ উত্তরের নেতা-কর্মীরা।যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধ করতে তারা মাঠে আছেন বলে জানান ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসবিরুল হক অনু।

তিনি বলেন, “আমাদের নেতা, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে সামস পরশের নির্দেশে সকাল থেকে ফার্মগেট তেজকুনি পাড়া, রাজার বাজার এলাকায় অবস্থান নিয়ে আছি। কোন ধরেনর সহিংসতা যাতে বিএনপি-জামায়াত করতে না পারে তার জন্য মাঠে আছি।”

মিরপুর পল্লবী থেকে শুরু করে ১০ নম্বর গোলচত্বর, সনি সিনেমা হলের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, “আমরা দুদিন আগে থেকেই প্রস্তুত আছি। আজ সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা রাজপথে আছে, বিভিন্ন পয়েন্টে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে আছে।

ঢাকার প্রবেশ মুখ যাত্রাবাড়ী, শনির আখরা, ধোলাইরপার, পোস্তগোলা এলাকায় বিপুল সংখ্যাক নেতা-কর্মী নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনকে।

তিনি বলেন, “আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ে পূর্বাঞ্চল থেকে আসা ও বের হওয়ার প্রবেশ মুখগুলোতে অবস্থান নিয়ে আছি।”

পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বাইক নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে।

মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদের সামনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। মিরপুর কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়া ও তালতলা আবাসিক এলাকার অলিগলিতে আওয়ামী লীগ কর্মীরা মিছিল করেন।

মুগদা থানার মান্ডা এলাকার বাসিন্দা ইকবাল জানান, তার এলাকাতেও সরকার সমর্থকরা কিছুক্ষণ পর পর মিছিল আর মহড়া দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ‘আগুন সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে সমাবেশ করেন।

৫ জনকে থানায় দিল ছাত্রলীগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রবেশমুখ মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে থেকে মোবাইল ফোন ঘেঁটে বিএনপি সমর্থক ৫ জনকে মারধর করে পুলিশে দিয়েছে ছাত্রলীগ।

শনিবার সকালে ও দুপুরে দুই দফায় বিএনপি সমর্থক সন্দেহে ১০-১২ জনকে নীলক্ষেতের তোরণের সামনে আটক করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে তাদের মধ্যে পাঁচজনকে থানায় সোপর্দ করা হয়।

শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, থানায় পাঁচজনকে আনা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ না পেলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি মোড়ে অবস্থান নিয়ে ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তাদের অনেকের হাতে রড় লাঠি এবং স্টাম্পও দেখা গেছে। এছাড়া তাদেরকে মোটর সাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল এবং স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কয়েকটি অটোরিকশা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে ঢুকতে চাইলে তাদের আটকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর সবাই মিলে তাদের কিল ঘুষি দিতে থাকে। পরে পাশে থাকা পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।

মারধরের শিকার ফারুক হোসেন জমাদ্দার নামে একজন বয়স্ক ব্যক্তি বলেন, তিনি ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে যাচ্ছিলেন সমাবেশে যোগ দিতে। নীলক্ষেতের মোড়ে চড়াও হয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তাদের ফোন কেড়ে নেয় তারা। এরপর তাদের কয়েকজনকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

থানায় সোপর্দ করার কথা স্বীকার করলেও মারধর করা হয়নি বলে দাবি করেছেন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসাইন। তিনি বলেন, “কাউকে আমরা আঘাত করিনি। ক্যাম্পাসে নাশকতা করার উদ্দেশ্যে তারা সংঘবদ্ধভাবে আসছিল। এরপর তাদেরকে আটকে আমরা শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেছি।”