আইজিপিকে ১৬৯ ‘গায়েবী মামলার’ তালিকা দিল বিএনপি

গত তিন মাসের মধ্যে দায়ের করা এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ৬ হাজার ৭২৩ জন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2022, 12:35 PM
Updated : 1 Dec 2022, 12:35 PM

ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের আগে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে দেখা করে ১৬৯টি ‘গায়েবী’ মামলার তালিকা দিয়েছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল আইজিপির দপ্তরে গিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি চিঠি পৌঁছে দেন, যেখানে এসব মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়।

ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর প্রতিনিধি দলের নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বাংলাদেশে যে গায়েবী মামলা হচ্ছে, প্রতিনিয়ত পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের লোকজন বোমা ফাটিয়ে আমাদের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে, এর একটি স্মারকলিপি মহাসচিবের তরফ থেকে আমরা আইজিপিকে প্রদান করেছি।

“উনি আমাদের প্রতিনিধিদলের সবার বক্তব্য শুনেছেন। বিভিন্ন জায়গায় গায়েবী মামলা করা হচ্ছে, নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে, গ্রেপ্তার করছে, বাড়ি তল্লাশি করছে। আমরা এর প্রতিকার চেয়েছি। উনি বলেছেন এগুলো খতিয়ে দেখবেন।”

এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল (বুধবার) হাই কোর্ট থেকে বিভিন্ন জায়গার সাড়ে চারশ নেতা-কর্মী জামিন নেওয়ার পর হাই কোর্টের গেইট থেকে ৫০ জনকে তাদের লইয়ার্স সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলে গ্রেপ্তার করেছে।

“নরসিংদীতে একটা মামলা দিয়েছে, গায়েবী মামলা। সেই মামলায় উল্লেখ আছে- চলো চলো, ঢাকায় চলো, বেগম খালেদা জিয়া জিন্দাবাদ, তারেক রহমান জিন্দাবাদ বলে ককটেল ফাটিয়েছে। এজন্য এই মামলা দেওয়া হয়েছে।”

বুলু বলেন, “আমরা বলেছি যে, আমি যদি আমার লোকজনকে ঢাকায় আসার জন্য দাওয়াত দিই, তাহলে আমি বোমা ফাটাব কেন? তাহলে তো মানুষ আতঙ্কিত হবে, তারা সমাবেশে আসবে না। এভাবে আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে।”

মহাসচিবের চিঠির সঙ্গে ২২ অগাস্ট থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১৬৯টি মামলার তালিকা দিয়েছে বিএনপির প্রতিনিধিদল। এসব মামলায় ৬ হাজার ৭২৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৫ হাজার ৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৫৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে বিএনপি নেতাদের ভাষ্য।

বিএনপির প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন  দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। ডিএমপি কমিশনার ফারুক আহমেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

‘সমাবেশ নয়া পল্টনেই’

বৈঠকে সমাবেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বুলু বলেন, “সমাবেশ নিয়ে উনারা (আইজিপি) কথা বলেছেন। আমরা বলিনি।

“আমরা বলেছি এটা (সমাবেশ) পল্টনে করতে চাই। সমাবেশের স্থলের বিষয়ে আমরা দুইটা চিঠি উনাদেরকে দিয়েছি। একটা ১৩ নভেম্বর ও আরেকটা ২০ নভেম্বর। দুইটা চিঠিতে আমরা নয়া পল্টনে চেয়েছি। আমরা কোনো দ্বিতীয় স্থান চাইনি।

“উনারা বলেছেন যে, ‘আপনারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করেন, আমরা সব সহযোগিতা করব’। আমরা বলেছি এটা আমাদের আজকের বিষয় না। আমরা যে বিষয়টি নিয়ে এসেছি তার সাথে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ সংশ্লিষ্ট না। এটা আমাদের স্থায়ী কমিটি, মহাসচিব আছেন- তারা সিদ্ধান্ত দেবেন। এটা আমাদের এখতিয়ারে নেই।”

গত মঙ্গলবার ২৬ শর্তে বিএনপিকে ১০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয় ডিএমপি। পরে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, নয়া পল্টনে বিভাগীয় সমাবেশ করার জন্য তারা অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে আবেদন করেছিলো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তারা চায়নি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তখন বলেছিলেন, “আজকে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যে জায়গায় আপনারা (সরকার) দিতে চান সেই জায়গায় আমরা কমফোর্টেবল নই- খুব স্পষ্ট কথা। চারিদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা, চতুর্দিকে যাওয়ার রাস্তা নাই। একটা মাত্র গেইট। যে গেইট দিয়ে এক-দুইজন মানুষ ঢুকতে পারে, বের হতে পারে না।

“আমরা স্পষ্ট করে আবার বলছি, আপনাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন। জনগণের ভাষা বুঝতে পেরে এই নয়া পল্টনে আমাদেরকে ১০ তারিখ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সমস্ত ব্যবস্থা আপনারা গ্রহণ করুন।”

আরও পড়ুন

Also Read: ঢাকায় সমাবেশের আগে আইজিপির সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক