“বর্তমান সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে তারা সব কিছু করছে,” বলেন এই বাম নেতা।
Published : 14 Jun 2023, 10:52 PM
যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশে সরকারের পরিবর্তন ঘটাতে চাইছে বলে দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
এই বাম নেতা র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার প্রেক্ষাপটে বুধবার সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনার সময় এই দাবি করেন।
তিনি বলেন, “বেশ কিছু সময় আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বাগে রাখতে স্যাংশন দিয়েছে। এখন নির্বাচনকে উপলক্ষ করে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এটা কেবল দুরভিসন্ধিমূলকই নয়, তাদের রেজিম চেঞ্জের কৌশলের অংশ।”
তার দৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই তৎপরতার নেপথ্য কারণ তুলে ধরে চীনপন্থি বলে পরিচিত এই বাম নেতা বলেন, “তারা সেন্ট মার্টিন চায়, কোয়াডে বাংলাদেশকে চায়।”
চার জাতির জোট কোয়াডকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা হিসেবে দেখে চীন। এই জোটে না যেতে বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়ে আসছে বেইজিং।
মেনন মুক্তিযুদ্ধকালে এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ছিনিয়ে নিতে তারা বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছিল। তীব্র খাদ্য সংকটের সময় বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বিব্রত করতে মধ্যসমুদ্র থেকে গমের জাহাজ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে তাদের কালো হাত ছিল। এখন আবার বর্তমান সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে তারা সব কিছু করছে।”
“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যারা বন্ধু, তাদের শত্রুর প্রয়োজন নাই,” এই সতর্কবার্তাও দেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের এই নেতা।
সরকারের অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে মেনন বলেন, “আমাদের ঘর আমরা সামলাব। নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে রেখেই হবে। বিএনপির উচিৎ হবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া।”
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, “তারেক রহমান নির্বাচন না করে ২০২৯ এর জন্য অপেক্ষা করতে পারে। কিন্তু বিএনপি এর মধ্যে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। তার সেই স্বপ্নও পূরণ হবে না।”
জামায়াত প্রশ্নে আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ার করে মেনন বলেন, “হঠাৎ করেই আমরা দেখলাম যে জামায়াতকে পুলিশ বেশ সমাদর করে অন্যের সভা সরিয়ে নিতে বাধ্য করে ১০ বছর পর প্রকাশ্য সভা করার অনুমতি দিয়েছে। এটা কীসের আলামত, জানি না।
“জামায়াত কিন্তু তার অবস্থান থেকে এক চুলও সরে নাই। ওই সমাবেশ করে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবিরই পুনরাবৃত্তি করেছে। বিএনপি-জামায়াত একই বৃন্তের দুটি ফুল। সাপের মুখে চুমু খেলে সাপ ছোবলই মারে। আদর করে না। জামাত-হেফাজতের সাথে তোষামোদ-সমঝোতা সেই ফলই দেবে।”
‘যেন বিএনপির ইউরোপিয়ান শাখার বিবৃতি’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশ নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের বিবৃতির সমালোচনা করেছেন।
সংসদে বাজেটের উপর আলোচনায় তিনি বলেন, “দেখে মনে হচ্ছে- এটি বিএনপির ইইউ শাখার বিবৃতি।
“এর ভাষা, বিষয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত; দুঃখজনক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের কাছে এই ধরনের বিবৃতি আশা করি না।”
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই ছয় সদস্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে চিঠি দেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিএনপিসহ অন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনার কথাও বলা হয় সেখানে।
বিবৃতিটি চ্যালেঞ্জ করে রাজ্জাক বলেন, তারা বলেছে- এখানে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তারা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবকে তা খতিয়ে দেখতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, “তারা যদি প্রমাণ করতে পারে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করেছি, নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছি, আমরা তার জবাব দেব। যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব।
“কিন্তু এই ধরনের মিথ্যাচারকে কখনও গ্রহণ করবো না। এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে চলার উপর জোর দিয়ে রাজ্জাক বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাক বা না থাক, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ গুরুত্বপূর্ণ দল এবং রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
“সাময়িক কোনো বিপর্যয় হতে পারে। যত রকম আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হোক, স্বাধীনতার সময় আমরা পরাভূত করেছি। যত ষড়যন্ত্রই হোক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা মোকাবেলা করে উন্নয়নের শিখরে যাচ্ছি, এটা অব্যাহত থাকবে।”