সাজা দিয়ে বিএনপি নেতাদের নির্বাচনে ‘অযোগ্য করার মহাপরিকল্পনা’: ফখরুল

“আমাদের কানে এসেছে, প্রায় সাড়ে ১৩ শ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যে মামলাগুলো নির্বাচনের পূর্বেই তারা শুনানি করে সাজা দিয়ে দেবে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2023, 11:29 AM
Updated : 31 May 2023, 11:29 AM

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোতে সাজা ঘোষণা হবে বলে আশঙ্কা করছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তার অভিযোগ, ‘সরকার এভাবে’ তাদের নেতাদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য করতে চায়।

বুধবার দুপুরে নয়া পল্টনে সংবাদ সম্মেলন করে এই আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

সরকার ‘ভয়াবহ পরিকল্পনা’ নিয়ে নেমেছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, “আমাদের কানে এসেছে যে, প্রায় সাড়ে ১৩ শ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যে মামলাগুলো নির্বাচনের পূর্বেই তারা শুনানি করে সাজা দিয়ে দেবে।”

সংবিধান অনুযায়ী ফৌজদারী মামলায় কমপক্ষে দুই বছরের সাজা হলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এ কারণেই অংশ নিতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

ভোটের বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তার ৫ বছরের সাজা ঘোষণা হয়। একই বছরের ৩০ অক্টোবর হাই কোর্ট সাজা বাড়িয়ে করে ১০ বছর। পরদিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা হয় ৭ বছর।

ওই বছরের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ফেনী-১ এবং বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে খালেদা জিয়ার নামে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা তা বাতিল ঘোষণা করেন। এরপর উচ্চ আদালতে গিয়েও প্রার্থিতা ফিরে পাননি বিএনপি নেত্রী।

মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা তাদের (সরকার) অত্যন্ত চমৎকার উদ্দেশ্যে। এদেরকে (বিরোধী দলের নেতাদের) যদি আটক করে ফেলা যায়, সাজা দিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তাদের কথা মত এরা তো নির্বাচন করতে পারবে না।”

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা দুর্নীতির দুই মামলায় আগের দিন হাই কোর্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছরের, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের ১৩ বছর ও তার স্ত্রী সাবেরা আমানের ৩ বছরের সাজা বহাল রেখে রায় দেয় হাই কোর্ট।

জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদের মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা দুটি করা হয় ওই বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। ২০০৭ সালে সাজার রায়ের পর হাই কোর্ট তাদের খালাস দেয়। রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে সর্বোচ্চ আদালত দুই মামলাতেই পুনঃশুনানির নির্দেশ দেয় হাই কোর্টকে। পুনঃশুনানি শেষে তাদের সাজা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দিল হাই কোর্ট।

ফখরুল বলেন, “এই রায় হচ্ছে তাদের সেই পরিকল্পনা, যে পরিকল্পনায় বাংলাদেশের রাজনীতিকে একেবারে তিরোহিত করা, বিরাজনীতিকরণ করা, রাজনীতিবিদদের রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া, সরিয়ে আবার যদি এককভাবে পার হওয়া।

“তারা একদম একা খেলার মাঠে খেলবেন আর গোল দিয়ে যাবেন। যেটাকে আমরা বলি যে, প্রতিপক্ষ কেউ থাকবে না। ওই লক্ষ্যে তারা যাচ্ছে, এগোচ্ছে।”

একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমকে আদালত খালাস দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “এভাবে তারা (সরকার) গোটা দেশে ভয়-ত্রাস এবং একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। এই নৈরাজ্য সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে তারা একই কায়দায় এককভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় যেটা এদেশের মানুষ এটা হতে দেবে না। এ দেশের মানুষ তাদের বিতারণ করেই নির্বাচন করবে।”

এসব ‘খেলাধুলা’ বাদ দিয়ে ‘সোজা পথ’ ধরার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, “একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এবং দেশে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।”

‘তারেক-জোবায়দার মামলার শুনানি কেন?’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে করা মামলার শুনানি শুরু হওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “এত বছর ধরে এই মামলা চলে নাই। হঠাৎ দেখা গেল যে, দ্রুত শুনানি শুরু হয়েছে… তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। এখন অতি দ্রুত প্রতিদিন একজন-দুইজন-তিনজন সাক্ষী হাজির করা হচ্ছে এবং তাদের রাত পর্যন্ত সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে।

“এ বিষয়গুলো নিয়ে যখন আমাদের আইনজীবীরা কথা বলতে চেয়েছিলেন, বিশেষ আদালতে তাদেরকে কথা শুধু বলতেই দেয়া হয়নি তা নয়, তাদেরকে সরকারি দলের আইনজীবীরা আক্রমণ করেছে, তাদেরকে আহত করেছে, এমনকি পুলিশ সেখানে বেআইনিভাবে প্রবেশ তাদেরকে নির্যাতন করেছে।

“এরপরে আমরা কীভাবে বলব, এই দেশে একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচন হওয়ার সুযোগ আছে? এ দেশে কীভাবে বলব যে, বিরোধী দলের এখানে রাজনীতি করার, মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার, সাংবাদিকদের লেখার অধিকার আছে?”

‘রাতেও চলছে সাক্ষ্য’

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামালের অভিযোগ, সরকার তারেক রহমান ও তার স্ত্রীকে সাজা দিতে ‘উঠেপড়ে লেগেছে’।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “রাজনীতির কারণে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে সংশ্লিষ্ট আদালত এই মামলা (তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান) তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করার জন্য দিনে তিন-চার জনের সাক্ষ্য নিচ্ছে। আপনারা শুনে অবাক হবেন যে, সন্ধ্যার পরে রাতেও এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।”

এই বিচারে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করতে প্রধান বিচারপতির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বিদেশে অর্থপাচার মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ২ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা, ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির মামলায় দুই বছরের সাজা আছে তারেক রহমানের মাথার ওপর। বিদেশে থাকায় এসব রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি তিনি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আসাদুল করিম শাহিন, জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, এম এ খালেক আমিনুল হক, সুলতান সালাউদ্দিন টুকুও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।