‘মনু’ খবর আছে: কাদের

বিএনপি পথ হারিয়ে পদযাত্রা শুরু করেছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2023, 03:10 PM
Updated : 30 Jan 2023, 03:10 PM

সমাবেশে অতিরিক্ত ব্যানার থাকায় বিরক্ত হয়ে ঢাকা ৫ আসনের সাংসদ কাজী মনিরুল ইসলাম মনুসহ যারা ব্যানার উঁচিয়ে রেখেছিলেন তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সোমবার বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে ব্যানার নামাতেও নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি। যারা ব্যানার নামাবে না তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।

গত কয়েকটি সমাবেশে মঞ্চ থেকে বারবার নির্দেশ দেওয়ার পরও বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্থানীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার নামাননি। বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা ব্যানারসহ সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হন। যতক্ষণ সমাবেশ চলে, তারা নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্যানার উঁচিয়ে রাখেন।

সোমবারও এমন ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের কথায়ও কেউ ব্যানার নামাচ্ছেন না, এখানে শৃঙ্খলার অভাব। এসব করে কেউ মনোনয়ন পাবেন না। নামান, ব্যানার নামান।

“সাবের হোসেন চৌধুরীর ব্যানার নিয়ে তাকে পঁচাচ্ছেন? পঁচাচ্ছেন তাকে? এই যে জনসভা বড় হয়েছে এই ছবিটাও সাংবাদিক ভাইয়েরা নিতে পারে না।

“ব্যানার থাকলে কি করে নেবে, কি করে দেখাবে? এই মনু (ঢাকা-৫ আসনের সাংসদ কাজী মনিরুল ইসলাম মনু) তোমার ব্যানার নামাও, না হলে তোমার খবর আছে বলে দিচ্ছি। ব্যানার নামাও।”

সমাবেশে যারা ব্যানার নামাচ্ছেন না তাদের শৃঙ্খলাভঙ্গের শাস্তি দেওয়া হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “যারা এরপরও ব্যানার রাখছে, তাদের কিন্তু এর জন্য জবাব দিতে হবে। কারা কারা ব্যানার এখনও উঁচিয়ে আছে, তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের শাস্তি হবে। আমি আবারও বলছি। এখনও নামাচ্ছ না।

“মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহেব, সাধারণ সম্পাদক সাহেব আপনারা বারবার অনুরোধ করার পরও যারা এখনও ব্যানার নামায়নি, এই হুমায়ুন (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) তোমার ব্যানারও তো, নিজের ব্যানারই তো নামায়নি। এই ওয়ার্ডগুলো সব লিখে রাখুন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, এই ওয়ার্ডগুলো লিখে রাখুন। এখন স্লোগান বন্ধ রাখতে হবে।”

এরপর ব্ক্তব্যে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “উত্তর-দক্ষিণ অমুক-তমুকের আওয়ামী লীগের না, এক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।”

এসময় মহানগরের দায়িত্বশীল নেতাদের প্রতি এলাকাভিত্তিক কর্মসূচি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে স্থানীয় কমিটিগুলো দ্রুত পুর্ণাঙ্গ কমিটি করতে নগরের শীর্ষ দুই নেতাকে নির্দেশ দেন।

সভাপতির বক্তব্যে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফিও নেতাকর্মীদের ব্যানার নামানোর আহ্বান জানান।

‘বিএনপি পথ হারিয়ে পদযাত্রা শুরু করেছে’

ব্যানার নামানো এবং দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখা নিয়ে নেতাকর্মীদের বকাবকির পর বক্তব্য রাখা শুরু করেন কাদের।

তিনি বলেন, “বিএনপির রাজনীতি ‘ভুলের চোরাবালিতে’ আটকে গেছে। বিএনপি পথ হারিয়ে আজকে পদযাত্রা শুরু করেছে। তলে তলে তো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার নাটক করলেন কেন।

“ওই হারুন (পদত্যাগ করা বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ) আর রুমিন ফারহানা (সংরক্ষিত আসন থেকে পদত্যাগ করা বিএনপির সংসদ সদস্য) তো সংসদে কিছু কথা বলতে পারতো। সেটাও তো বন্ধ হয়ে গেল। ফখরুল সাহেব আপনাদের রাজনীতি ভুলের চোরাবালিতে আটকে গেছে। পদযাত্রা করে সেই পথ উদ্ধার করা যাবে না।”

তিনি বলেন, “মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পায়ের তলায় নাকি আমাদের মাটি নাই’। পায়ের তলায় মাটি কার আছে, কার নাই; প্রমাণ করতে দরকার নির্বাচন। আসুন নির্বাচনে। ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাই না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই, খালি মাঠে খেলবো না। খেলা হবে। নির্বাচনে খেলা হবে।”

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে বৈঠক না হওয়ায় বা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকারকে চাপ না দেওয়ায় বিএনপি হতাশ হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

আওয়ামী লীগ কখনও পালায় না এবং মুচলেকা দিয়ে পালানোর গল্পটা বিএনপি নেতাদের মন্তব্য করে কাদের বলেন, “শেখ হাসিনা পালাননি, আমরা পালিয়ে যাইনি।”

এক-এগারোর সরকারের সময়ে মির্জা ফখরুলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কাদের বলেন, “ওই কয়েক মাস জরুরি সরকারের ক্ষমতার সময়ে আপনি কোথায় ছিলেন? জেলে গেছেন, নাকি বাইরে দালালি করেছেন? তখন আপনার পর্যায়ের নেতা বাইরে থাকতে পারে একমাত্র দালালি করলে।”

এক-এগারোর সরকারের সময়ে সব বাধা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা পালিয়ে যাননি। এই অ্যাভিনিউতে হাওয়া ভবনের ইঙ্গিতে গ্রেনেড হামলায় তার একটি কানের শ্রবণশক্তি কমে গিয়েছিল।

“কানের চিকিৎসা করতে সাময়িক সময়ের জন্য ডাক্তার দেখাতে দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। চিকিৎসা শেষে তিনি লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে আসেন। এই পল্টন থানায় মামলা দেওয়া হয়েছিলো, তিনি যাতে আসতে না পারেন।

“ফখরুল সাহেব কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন। মিথ্যাচার করবেন না। জরুরি সরকারের পক্ষ থেকে সব এয়ারলাইন্সকে নিষেধ করা হয়েছিল শেখ হাসিনা যেন না আসতে পারেন। তাকে টিকিট দেওয়া হবে না। তার টিকিট রিফিউজ করা হয়েছে।

“এয়ারপোর্ট থেকে বারবার বলা হচ্ছে। আপনি ফিরে যান। তিনি বললেন, ‘আমি বসে পরলাম। আমি আমার দেশে ফিরে যাব। কত মামলা হবে। জেলে নেবে? ওই জেলকে আমি ভয় পাই না। বঙ্গবন্ধু ভয় পাননি। আমিও পাই না’।”

ওয়ান-ইলেভেনে ‘কাপুরুষের মতো’ পালানোর ইতিহাস শুধু বিএনপির দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “মুচলেকা দিয়ে আর রাজনীতি করব না বলে পালিয়ে গেলেন টেমস নদীর পাড়ে লন্ডনে। সেই যে গেল ‘যুবরাজ’ (তারেক রহমান) আর তো এল না ফিরে।”

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়য়া, কেন্দ্রীয় সদস্য সানজিদা খানম।

Also Read: নেতাদের ভিড়ে ভেঙে পড়ল ছাত্রলীগের মঞ্চ

Also Read: ভিড় দেখে ওবায়দুল কাদের বিরক্ত, মঞ্চ ছাড়তে উদ্যত