ভিড় দেখে ওবায়দুল কাদের বিরক্ত, মঞ্চ ছাড়তে উদ্যত

“এত নেতা! নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা মুশকিল। নেতার ভিড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চ পর্যন্ত ভাঙল।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2023, 06:23 PM
Updated : 17 Jan 2023, 06:23 PM

ক’দিন আগেই ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে মঞ্চ ভেঙে পড়েছিল ভিড়ে, পড়ে গিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদেরও। এবার আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে মঞ্চে ভিড় দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি। বক্তৃতা শুরু করেও থামিয়ে দেন, মঞ্চ ছেড়ে যেতেও উদ্যত হন তিনি। পরে নেতা-কর্মীরা সরে গেলে তিনি বক্তৃতা শেষ করেন।

মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসেরর আলোচনা সভায় এ ঘটনা ঘটে। সভার আয়োজক ছিল ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের ছিলেন সভার প্রধান অতিথি।

তিনি বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলেন, “এত লোক কেন? এইভাবে লোক কেন?”

তারপর মিনিট দেড়েক বক্তব্য দেন তিনি। পরে বক্তৃতায় থামিয়ে বলেন, “তারপরও সবাই দাঁড়িয়ে আছেন? এত কথা বলার পরও! আমি কোনো বক্তৃতা করব না। সরেন, সরেন।”

এসময় তিনি মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হন। সঙ্গে সঙ্গে তার আশপাশ থেকে নেতা-কর্মীরা মঞ্চ ছেড়ে চলে যান। তারপর তিনি আবার বক্তব্য শুরু করেন।

গত ৬ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের যখন বক্তৃতা করছিলেন, তখন মঞ্চ ভেঙে পড়েছিল নেতা-কর্মীদের ভারে। সেদিনও তিনি ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। তার আগে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এক সমাবেশেও তিনি বিরক্ত হয়ে মঞ্চ ছাড়তে চেয়েছিলেন, তখন উপস্থিত অন্য নেতারা তাকে থামিয়েছিলেন।

মঙ্গলবারের সমাবেশে বক্তৃতায় কাদের বলেন, “আজকের এই সভায় এসে কিছু বলতে দাঁড়িয়ে আমি বিব্রতবোধ করছি। কারণ, তিন তিন বারের সাধারণ সম্পাদক যখন আমাকে বলে, তখন আমি লজ্জা পাই শৃঙ্খলার অভাব দেখে।

“মুখে বলি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, বলি শেখ হাসিনার কর্মী, কিন্তু আমরা যখন সবাই নেতা হই মঞ্চে উঠি, তখন আমাদের আদর্শের কথা মনে থাকে না। এত নেতা! নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা মুশকিল। নেতার ভিড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চ পর্যন্ত ভাঙল। এত নেতার তো আমাদের দরকার নেই।”

‘স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট কর্মীবাহিনী দরকার’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কোথায় আজ শৃঙ্খলা? এখন আমাদের নেতারা মঞ্চে বসেন, বক্তৃতা করতে না পারলে মুখের উপর শ্রাবণ-বর্ষার আকাশের মেঘ এসে পড়ে। সবাইকে বক্তৃতা করতে হবে কেন? ভাগ ভাগ করে, ওমুক দিন ওমুক বলবে।

“মঞ্চে বসে আছেন ধরেন ৫০ জন, সবাইকে বিশেষণ দিয়ে দিয়ে নাম বলতে হবে কেন? সময় কমান, বক্তৃতার সময় বাড়ান। আর কিছু আছে জামা-পাঞ্জাবি টানলেও বসতে চায় না, ভাষণ দিয়েই যাচ্ছে। সেই ভাষণের মধ্যে কোনো সার কথা নেই। বলছে তো বলছে, গাড়ি চলছেই। ভাই, ম্যারাথন ভাষণগুলো বন্ধ করুন। সার কথা বলুন।”

“যারা ভালো বলেন, তাদের বলতে দিন। কিছু আছে যারা কাজ ভালো পারেন তাদেরকে কাজ করান, কেউ বক্তৃতা ভালো পারে, তাকে দিয়ে বক্তৃতা করান। আমার দরকার মানুষের সাথে সেতু তৈরী করা। সেই সেতু তৈরি করতে হলে আপনাকে সেই ভাবে কথা বলতে হবে,” বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

দলের শৃঙ্খলা আনার উপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে তিনি বলেন, “তৃতীয় বার জেনারেল সেক্রেটারি হয়ে আমার অঙ্গীকার, আওয়ামী লীগকে সুশৃঙ্খল করে গড়ে তুলব। আওয়ামী লীগকে কলহমুক্ত করতে হবে।

“আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে যারা চাঁদাবাজি করবে, মাস্তানি করবে, মাদকব্যবসা করবে, জমি দখল করবে, তাদের সঙ্গে কোনো আপস হবে না। তাদের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই চলবে।”