“আমরা জলচৌকিকে পানিচৌকি করতে চাই না, আমরা পাণিগ্রহণকে (বিবাহ) জলগ্রহণ করতে চাই না,” বলেন তিনি।
Published : 14 Apr 2024, 06:46 PM
সরকার দেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতি বদলে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, “আমরা কঠিন যুগসন্ধিক্ষণে এসে উপস্থিত হয়েছি। আমরা আজকে শুধু রাজনৈতিক আধিপত্য নয়, আমরা সাংস্কৃতিক আধিপত্য… সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মধ্যে পড়েছি।
“আমাদের দীর্ঘদিনের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, দীর্ঘদিনের আমাদের ভাষা, আমাদের শব্দ…. এসবকে বদলে দেওয়ার অনেক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।”
রোববার বিকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাংলা বর্ষবরণের এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘‘আমাদের বাবা-মা, আমাদের পূর্ব পুরুষ দাদা-দাদি, নানা-নানি এবং তাদের আরো আগে থেকে তাদের অভ্যাস, তাদের খাওয়া-দাওয়া, তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ সমস্ত কিছু মিলে এবং এই বাংলার প্রাণের যে শাখাগুলো, সেই আসল…স্বাধীন ভুখণ্ডের মধ্যে এখানকার ধলেশ্বরী-শীতালক্ষ্যা-পদ্মা-যমুনা-যুমনা, ইছামতি…এখান থেকে উচ্চারিত আমাদের যে সংগীত, আমাদের যে গান, আমাদের যে সংস্কৃতি- এটা আমাদের নিজস্ব।
“এই নিজস্বতার মধ্য দিয়ে আমাদের সংস্কৃতির যে মোজাইকটি তৈরি হয়েছে, সেই মোজাইকটি ওবায়দুল কাদেররা বিভ্রান্ত ছড়িয়ে এটা ভাঙতে পারবে না। এই মোজাইকের উপরেই আমাদের সার্বভৌমত্ব, আমাদের স্বাধীনতা দাঁড়িয়ে থাকবে। আর এর প্রতীক হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।”
নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের বাংলাদেশের সংস্কৃতির এই ভূখণ্ডের মধ্যে আমাদের যা সম্পদ- সেটা গানে হোক, সেটা কথায় হোক, সেটা নাটকে হোক, সেটা যাত্রা-জারি-সারি গান হোক- সেটা আমাদের নিজস্ব।
“এটাকে রক্ষার প্রতীক হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। এটা তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কী করে নিজের সত্তাকে রক্ষা করতে হয়।”
‘ওবায়দুল কাদের কোন বাঙালির কথা বলছেন?’
বাংলা নববর্ষের এক অনুষ্ঠানে রোববার সকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আজকে প্রতিষ্ঠিত সত্য- কারা বৈশাখের চেতনাবিরোধী। যারা ১৪০০ বঙ্গাব্দে আওয়ামী লীগের মঙ্গলশোভাযাত্রা পণ্ড করে দিয়েছিল, সেই অপশক্তি আজও বাংলার মাটিতে। এদেশে এরা সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা। এই বিএনপি এদেশে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক। এরা বাঙালি সংস্কৃতিকে সহ্য করতে পারে না। এদের হৃদয়ে পাকিস্তান।”
এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেছেন, ‘‘ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, বিএনপি নাকি বাঙালি সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না। আমি বলতে চাই, আপনি কিসে বিশ্বাস করেন? এই বাঙালি সংস্কৃতি... এটার তাৎপর্য কী, এটার সংজ্ঞা কী? আপনি যদি একটু ব্যাখ্যা করে বলতেন।”
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘‘এখন ইংল্যান্ডের ভাষাও ইংরেজি, আমেরিকার ভাষাও ইংরেজি, নিউ জিল্যান্ডের ভাষাও ইংরেজি, অস্ট্রেলিয়ার ভাষাও ইংরেজি… আরো ছোট-খাটো দেশের ইংরেজি রাষ্ট্র ভাষা। তাহলে সবাই কি ইংরেজ? তাহলে কেউ অস্ট্রেলিয়ান, কেউ আমেরিকান, কেউ কানাডিয়ান কেনে?
‘‘বাঙালি তো অনেক দেশে আছে… ভারতের ত্রিপুরায় আছে, পশ্চিম বাংলায় আছে… বাংলাদেশে সেটা থাকবে কিন্তু ওবায়দুল কাদের সাহেব যে কথা বলেছেন, সেটা কোনো উদ্দেশ্যে ছাড়া যে বলেননি-এটা আমি মনে করি।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে বিএনপি জড়িত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান- তার ঘোষণাই তো মানুষ উদ্ধুদ্ধ হয়েছে। আমার বাংলাদেশের যে ভাষা- সেটা তো প্রোটেকশন দেবে বাংলাদেশের মানুষ। ওবায়দুল কদের সাহেব আপনি কোন বাঙালির কথা বলছেন?”
রিজভী বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ পানিকে পানি বলে…আপনি (ওবায়দুল কাদের) পানি শব্দ বদলে দিতে চাচ্ছেন… জল বলে কিছু মানুষ। জলেরও অস্তিত্ব আছে, পানিরও অস্তিত্ব আছে…পশ্চিম বাংলার বেশির ভাগ মানুষ পানিকে জল বলে…. আমাদের দেশের পানিকে পানিই বলে।
“…আমরা পরস্পরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের করি সালাম দিয়ে-আসসালামু আলাইকুম, উত্তর দেয় ওয়ালাইকুম আসসালাম- এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। আপনি কি এটার বিরুদ্ধাচারণ করছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব?”
বিএনপির এই নেতা বলতে থাকেন, “আমরা কারো সাফল্য কামনা করলে ইনশাল্লাহ বলি…এটা আমাদের পার্ট অব কালচার। এগুলো যে ধর্মীয় অনুভূতি থেকে বলছি তা না…এটা আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কথা-অভ্যাসে থাকার কারণে এটা সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। আপনি কি এসব বদলিয়ে দিতে চান ওবায়দুল কাদের সাহেব?
‘‘আমরা কিন্তু এসব বদলানোর বিপক্ষে। যা প্রচলিত, যা দীর্ঘদিন ধরে মানুষ বলে যেটা অভ্যস্ত ওইটাই হচ্ছে সাংস্কৃতিক সবচাইতে বড় উপাদান। আমরা জলচৌকিকে পানিচৌকি করতে চাই না, আমরা পাণিগ্রহণকে (বিবাহ) জলগ্রহণ করতে চাই না।”
বিএনপি বাঙালি সংস্কৃতিকে সহ্য করতে পারে না-ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের বিষয়ে রিজভী বলেন, “ওবায়দুল কাদের সাহেব একটা উদ্দেশ্যে এই কথা বলেছেন। উনার একটা বক্তব্য উদ্ধৃতি দিয়ে আমি বলি, উনি বলেছিলেন, তলে তলে অনেকের সাথে সম্পর্ক আছে...প্রভুদের সাথে সম্পর্ক রয়েছে।
“তলে তলে কাউকে খুশি করার জন্য, প্রভুদের খুশি করার জন্য উনি এই কথা বলেছেন।”
জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের উদ্যোগে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে জাসাস শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠান হয়।
জাসাসের সহসভাপতি লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে সেখানে বক্তব্য রাখেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, জাসাসের আহমেদ কিসলু।