রাশিয়ার অভিযোগ, অক্টোবরের শেষে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সরকারবিরোধী বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিরোধীদলীয় এক সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
Published : 23 Nov 2023, 10:47 PM
বিদেশি কারো সহায়তা ছাড়াই বাংলাদেশের ‘বৈধ নির্বাচনের’ সক্ষমতা আছে বলে মনে করে রাশিয়া। তারা বলছে, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ভিয়েনা কনভেনশনের বিরোধী।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিরোধী দলের এক নেতার সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেছেন বলেও দাবি করেছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।
বুধবার নিজ দেশে এক ব্রিফিংয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি। পরে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স-এ তার বক্তব্যের কিছু অংশ তুলে ধরা হয়।
জাখারোভা বলেন, “দেশটির আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ‘স্বচ্ছ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক’ করার ছদ্মাবরণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রভাবিত করার ক্ষেত্র যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রচেষ্টার বিষয় আমরা অব্যাহতভাবে তুলে ধরে আসছি।
“আমাদের কোনো সন্দেহ নাই যে, বিদেশি ‘শুভাকাঙ্ক্ষীদের’ সহায়তা ছাড়াই জাতীয় শাসনতন্ত্রের বিধানমত ৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখের সংসদ নির্বাচন স্বাধীনভাবে আয়োজনের সক্ষমতা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের আছে।”
অক্টোবরের শেষে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সরকারবিরোধী বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিরোধীদলীয় এক সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলেও দাবি করা হয় এই ব্রিফিংয়ে।
হাসের এই কার্যক্রমকে ভিয়েনা কনভেনশন না মেনে সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘নির্জলা হস্তক্ষেপ’ হিসাবেও তুলে ধরেন রুশ কর্মকর্তা।
???? #Zakharova: At the end of October, US Ambassador to Bangladesh Peter Haas met with a member of the local opposition to discuss plans for organising anti-government rallies.
☝️ Such actions amount to nothing less than gross interference in internal affairs. pic.twitter.com/bJcQnJs47Y
— MFA Russia ???????? (@mfa_russia) November 22, 2023
বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরস্পরবিরোধী এই অবস্থান নতুন নয়। গত বছরের শেষ দিকে পিটার হাস ঢাকায় বিএনপির ‘নিখোঁজ’ নেতা সায়েদুল ইসলাম সুমনের বাসায় গিয়ে সরকারপন্থি অন্য একটি সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে পড়েন।
এরপর জাখারোভা ব্রিফিং করে বলেন, “একজন মার্কিন কূটনীতিকের কার্যক্রমের প্রত্যাশিত ফলাফল এই ঘটনা।… যিনি বাংলাদেশের জনগণের অধিকারের যত্ন নেওয়ার যুক্তি দেখিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।”
এরপর ঢাকায় রুশ দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলে, বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে সব সময় মেনে চলায় রাশিয়া ‘দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
এতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশের মতো দেশগুলো, যারা বহিঃশক্তির নির্দেশনার পরিবর্তে জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনায় নিজেদের পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতি নির্ধারণ করে থাকে, তারাও একই রকমের দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে।”
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক মাসে ক্রমাগত বক্তব্য দিয়ে আসছে। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা দিলে তার জন্য দায়ী ও তাদের স্বজনরা ভিসা পাবে না জানিয়ে আলাদা ভিসা নীতিও ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে রাশিয়া বারবার বলেছে, বাংলাদেশে নির্বাচন কীভাবে হবে, এটি এই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। গত ৯ জুলাই চট্টগ্রামে এক আয়োজনে রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দর মতিঁতস্কি বলেন, “বাংলাদেশই ঠিক করবে কোন প্রক্রিয়ায় এদেশে নির্বাচন হবে।”
র্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের জন্য ওয়াশিংটনের নতুন ভিসা নীতির প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের দূত মতিতঁস্কি বলেন, “কোনো দেশের এককভাবে দেওয়া স্যাংশনকে রাশিয়া স্বীকৃতি দেয় না। আমরা শুধু জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দেওয়া স্যাংশনকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকি। এককভাবে কোনো স্যাংশন দেওয়া ‘অবৈধ’।”
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে রাশিয়া, চীন ও ভারতের অবস্থান একই। তিনটি দেশই জানিয়েছে, বাংলাদেশে কীভাবে নির্বাচন হবে, সেটি দেশের জনগণের বিষয়। বাইরের কোনো দেশের হস্তক্ষেপের বিরোধী তারা।
ভোটের তফসিলের বিষয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আমাদের লক্ষ্য: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশকে মাঝে রেখে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি চলছেই
নির্বাচন কীভাবে হবে, বাংলাদেশই ঠিক করবে: রুশ রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশের নির্বাচন: যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘অবস্থান স্পষ্ট করেছে’ ভারত