বাংলাদেশকে মাঝে রেখে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি চলছেই

টুইটারে পাল্টাপাল্টির পর এবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2022, 02:52 PM
Updated : 25 Dec 2022, 02:52 PM

বাংলাদেশে কূটনীতিকদের কার্যক্রম নিয়ে পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।

ঢাকায় রাশিয়া দূতাবাসের বিবৃতি, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের টুইট এবং রাশিয়া দূতাবাসের পাল্টা টুইটের পর এবার এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।

ঢাকার শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সায়েদুল ইসলাম সুমনের বাসায় গিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিক্ষোভের মুখে পড়ার কথা তুলে ধরে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “একজন মার্কিন কূটনীতিকের কার্যক্রমের প্রত্যাশিত ফলাফল এই ঘটনা।

“যিনি বাংলাদেশের জনগণের অধিকারের যত্ন নেওয়ার যুক্তি দেখিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।”

গত ১৪ ডিসেম্বর সুমনের বাড়িতে ওই ঘটনার পর ঢাকায় রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ‘নিরাপত্তা উদ্বেগ’ তৈরি হওয়ার বিষয়টি জানায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।

সেদিনই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ জানান হাস। পরে দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “১৪ ডিসেম্বর মায়ের ডাকের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে শেষ করতে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে।

“বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বৈঠকটি বাধাগ্রস্ত হয়; রাষ্ট্রদূত যে ভবনে ছিলেন সেখানে ঢুকে পড়তে চেয়েছিল তারা। বিক্ষোভকারীদের একদল রাষ্ট্রদূতের গাড়ি ঘিরে ফেলে।”

Also Read: নিখোঁজ বিএনপি নেতার বাসা থেকে তড়িঘড়ি ফিরলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

Also Read: রাষ্ট্রদূতের ‘নিরাপত্তা উদ্বেগ’ সরকারের ‘উচ্চ পর্যায়ে’ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

Also Read: কূটনীতিকদের নিরাপত্তাও ‘প্রশ্নবিদ্ধ’: খসরু

Also Read: মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে 'বিতর্কিত' করা সমীচীন হয়নি: তথ্যমন্ত্রী

এই ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পাল্টাপাল্টির মধ্যে ২০ ডিসেম্বর রুশ দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে সব সময় মেনে চলায় রাশিয়া ‘দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

“বাংলাদেশের মতো দেশগুলো, যারা বহিঃশক্তির নির্দেশনার পরিবর্তে জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনায় নিজেদের পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতি নির্ধারণ করে থাকে, তারাও একই রকমের দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে।”

রাশিয়া দূতাবাসের ওই বিবৃতির খবর শেয়ার করে পরদিন ২১ ডিসেম্বর মার্কিন দূতাবাসেএক টুইটে লেখে, “এটা কি ইউক্রেইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?”

রাশিয়ার আগ্রাসনের কবলে থাকা ইউক্রেইনের পতাকা যুক্ত করে সেই টুইটের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাস হ্যাশট্যাগ গিয়ে লেখে, স্ট্যান্ডউইথইউক্রেইন।

একই দিন বিকালে পাল্টা আরেকটি টুইটে একটি ছবি প্রকাশ করে রুশ দূতাবাস ক্যাপশন দেয়-বর্তমান পরিস্থিতি।

ওই ছবিতে যায়, চারটি ধাপে বসে থাকা পাখি একে অপরের উপর মলত্যাগ করছে। উপরে থাকা আমেরিকার একটি পাখির মল পড়ছে যুক্তরাজ্যের দুটি পাখির উপর, সেখান থেকে পড়ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয়টি পাখির উপর এবং সবশেষে সবার মলে ঢেকে গেছে ইউক্রেইনের চারটি পাখি।

ইউক্রেইন যুদ্ধের মধ্যে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া দূতাবাসের এই পাল্টাপাল্টির রেশ এবার গেল মস্কোতে; দৈনন্দিন ব্রিফিংয়ে ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টার’ প্রসঙ্গও তুলে ধরেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের পাশাপাশি ব্রিটিশ ও জার্মান কূটনীতিকরাও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ঘিরে ‘পরামর্শ’ দিয়ে যাচ্ছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তিনি।

মারিয়া জাখারোভা বলেন, “সম্প্রতি তার (পিটার হাস) ব্রিটিশ ও জার্মান মিশনের সহকর্মীরাও একই ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়েছেন এবং আগামী বছরের শেষে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভূক্তিমূলক করার বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে সুপারিশ করে যাচ্ছেন।

“আমরা বিশ্বাস করি, সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার মূলনীতিকে লঙ্ঘন করার এমন কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য।”