“‘মায়ের কান্না’র স্মারকলিপি রাষ্ট্রদূত নিজে অথবা তার অধীন কর্মকর্তারা গ্রহণ করলে পিটার হাস’ বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতেন,” বলেন তিনি।
Published : 15 Dec 2022, 10:24 PM
বুদ্ধিজীবী দিবসে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের যারা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেছেন, তারা রাষ্ট্রদূতকে বিতর্কিত করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বাড়িতে ডেকে এভাবে বিতর্কিত করা তাদের (মায়ের ডাক) সমীচীন হয়নি। তিনি সেখানে গেছেন সেটি শুনে ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান বিনা বিচারে এবং ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে বিচার ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধাসহ যাদের ফাঁসি দিয়েছিল তাদের সন্তান-পরিজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’র জনা পঞ্চাশ মানুষ মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য সমবেত হয়েছিল।
"মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তারা স্মারকলিপি দেওয়ার সুযোগ করে দেননি (মায়ের কান্নাকে) এবং সমবেতরা কথাও বলতে পারেননি। আমি মনে করি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত যদি তাদের স্মারকলিপি নিতেন এবং তাদের দু’টি কথা শুনতেন তাহলে তার সেখানে যাওয়া নিয়ে আজকে যে প্রচণ্ড সমালোচনা হচ্ছে সেটি হত না।"
‘বিনাবিচারে’ নিহতদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’র স্মারকলিপি রাষ্ট্রদূত নিজে অথবা তার অধীন কর্মকর্তারা গ্রহণ করলে পিটার হাস’ বিতর্কের উর্ধ্বে থাকতেন’ বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কেবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি কথা বলছিলেন।
নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ও ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’র সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখির বাসায় বুধবার গিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। সেখানে আরেকটি সংগঠন ‘মায়ের কান্না’র নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি।
বুধবার সকালে তেজগাঁওয়ের শাহীনবাগের ওই বাড়িতে রাষ্ট্রদূত গেলে সেখানে তাকে ঘিরে ধরে স্মারকলিপি হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন ‘মায়ের কান্না’র সংগঠনের কর্মীরা। তখন তড়িঘড়ি করে পিটার হাস গাড়িতে করে ওই স্থান ত্যাগ করেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমলে হত্যাকাণ্ডের শিকার সামরিক বাহিনীর সদস্যদের স্বজনদের সংগঠন এই ‘মায়ের কান্না’।
বুধবারের ওই ঘটনার বিষয়ে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেন, নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ঠিক সময়ের আগেই বৈঠক শেষ করেন রাষ্ট্রদূত। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তারা তুলে ধরেছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, "প্রথমত সেদিন ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়েছিল। যে জাতি স্বাধীন হতে যাচ্ছে, সে জাতিকে পঙ্গু করার লক্ষ্যেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। বুদ্ধিজীবী দিবসগুলোতে নানা অনুষ্ঠান থাকে, দেশের সাধারণ মানুষ এবং বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে সবাই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
“অনেক সময় বিদেশি রাষ্ট্রদূতরাও সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। সেই দিনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গেলে অনেক ভালো হত এবং স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে বাঙালি জাতির যে কষ্ট, ত্যাগ, বুদ্ধিজীবীদের আত্মদান সেটির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হত।”
বুদ্ধিজীবী দিবসে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সমন্বয়কারীর বাসায় ডাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাছান মাহমুদ বলেন, “পরামর্শ কে দিয়েছে আমি জানি না, তবে যারাই পরামর্শ দিয়েছে তারা সঠিক পরামর্শ দেয়নি। তার নিজেরও দিবসটার দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার ছিল।
“তাছাড়া তিনি (রাষ্ট্রদূত) যে সেখানে যাবেন সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানে না, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেটিই বলেছেন। আর তিনি যাদের কাছে গেছেন তারা অর্থাৎ ‘মায়ের ডাক’ হচ্ছে সেই সংগঠন যারা ‘গুমের’ অভিযোগ করছে। কিন্তু যারা গুম হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে তাদের অনেককেই আবার খুঁজে পাওয়া গেছে, অনেকেই খুনের ও মাদক চোরাচালানের মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত-সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি যাদেরকে বিএনপি ‘গুম’ হয়েছে বলে বেড়াচ্ছে।”
বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরাট ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ এবং আমি মনে করি এই ঘটনা আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। তবে যারা এই কাজটি করেছেন এবং করার চেষ্টা করেন তাদের এ থেকে বিরত থাকা উচিত।
“মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও আমি বিনীতভাবে অনুরোধ জানাব, কেউ যদি এ ধরনের ভুল পরামর্শ দিয়ে তাকে একপেশে করার অপচেষ্টা চালায়, সেটির ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য।"
বিএনপির প্রসঙ্গে টেনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায় তারা কী করবেন সে নিয়ে তারা বলতেই পারেন, এটি বলা কোনো অপরাধ নয়। তবে বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে আর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেবে না।”
আরও খবর:
নিখোঁজ বিএনপি নেতার বাসা থেকে তড়িঘড়ি ফিরলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত