কোনো দেশের এককভাবে দেওয়া স্যাংশনকে রাশিয়া স্বীকৃতি দেয় না, বলেছেন তিনি।
Published : 09 Jun 2023, 12:15 AM
রাশিয়া অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ করে না’ দাবি করে বাংলাদেশে রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দর মতিঁতস্কি বলেছেন, বাংলাদেশই ঠিক করবে কোন প্রক্রিয়ায় এদেশে নির্বাচন হবে।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে একথা বলেন তিনি; সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন, বিদেশি নিষেধাজ্ঞা এবং রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে কথা হয়।
বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের নানা তৎপরতা যখন দৃশ্যমান, তখন মস্কোর অবস্থান জানতে চান সাংবাদিকরা।
জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, “সবার আগে বলতে চাই, রাশিয়া কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করে না। আমরা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করি না। আপনারাই ঠিক করবেন, কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে।”
বাংলাদেশের নির্বাচন ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ হওয়ার প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, “সম্প্রতি গাজীপুরের সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আমরা আশা করি, আপনাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচনও অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।”
র্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের জন্য ওয়াশিংটনের নতুন ভিসা নীতির প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের দূত মতিতঁস্কি বলেন, “কোনো দেশের এককভাবে দেওয়া স্যাংশনকে রাশিয়া স্বীকৃতি দেয় না। আমরা শুধু জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দেওয়া স্যাংশনকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকি। এককভাবে কোনো স্যাংশন দেওয়া ‘অবৈধ’।”
বাংলাদেশ ও রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “১৯৭১ সাল থেকে রাশিয়া ও বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা বজায় রেখেছে। পশ্চিমা দেশসমূহ রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার কারণে বাংলাদেশসহ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন নানা দেশ বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাকে বাধাগ্রস্ত করছে।”
ইউক্রেইনে চলমান যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে রাশিয়ার সহায়তায় চলমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে কিংবা বাধাগ্রস্ত হতে পারে কি না, জানতে চান সাংবাদিকরা।
জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চলতি বছরের অক্টোবরেই পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ শুরু করবে রাশিয়া। রাশিয়ার বৃহত্তম গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্রে সফলভাবে কূপ খনন করছে। সম্প্রতি ভোলা দ্বীপে ২০তম কূপ খননের কাজ শেষ হয়েছে। গ্যাজপ্রম বাংলাদেশে তার কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়াতে ইচ্ছুক।
বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাশিয়া ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ জানিয়ে তিনি বলেন, “২০২২ সালে আমাদের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো প্রায় ৯ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম সরবরাহ করেছে, যা বাংলাদেশের আমদানির ৪২ শতাংশ। এছাড়া ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়াই বাংলাদেশে পটাশ সারের অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারী দেশে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে রাশিয়ায় বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।”
রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে বড় কোনো ‘অমীমাংসিত রাজনৈতিক ইস্যু নেই’ জানিয়ে মতিঁতস্কি বলেন, “মূল বৈশ্বিক সমস্যাগুলোতে আমরা মতামত শেয়ার করি। ইউক্রেইন সংকটে ঢাকার সুষম, নিরপেক্ষ অবস্থান এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতি অনুসরণ করার দৃঢ় অভিপ্রায়ের প্রশংসা করে মস্কো।
“বর্তমানে বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক যোগাযোগ নিয়মিতভাবে হয়। রাশিয়া ও বাংলাদেশ উভয়ই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিকতা এবং জোট নিরপেক্ষতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।”
মতবিনিয়ম সভায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহ্উদ্দিন মো. রেজা, সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক ও সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।