যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করার পরামর্শও দিয়েছেন মোমেন।
Published : 17 Nov 2023, 07:23 PM
কয়েকজন সাংবাদিক বাংলাদেশের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রকে ‘টেনে আনছেন’ বলে মন্তব্য করে একে দুঃখজনক বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
ফরেন সার্ভিস স্পাউজ অ্যাসোসিয়েশন (ফোসা) আয়োজিত 'ইন্টারন্যাশনাল চ্যারিটি বাজার' উদ্বোধন করতে অ্যাকাডেমিতে গিয়েছিলেন মন্ত্রী। তবে সাংবাদিকরা তার কাছে প্রশ্ন রাখেন সংলাপ, নির্বাচন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা প্রসঙ্গে।
এক প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ের কথা তুলে ধরে মোমেন বলেন, “বাঙালি সাংবাদিকরা তাদেরকে জোর করে টেনে আনে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের দেশের লোকেরাই আমাদের দেশের ধ্বংস করার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে।”
গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে কয়েকজন বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রশ্ন রাখছেন। বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপির কর্মসূচি, নির্বাচন, আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবস্থান নিয়ে জানতে চান তারা।
যুক্তরাষ্ট্রে সেই ব্রিফিংয়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা বাংলাদেশের মুক্তচিন্তায় বিশ্বাস করি; মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। পৃথিবীর খুব কম দেশেই এ ধরনের স্বাধীনতা আছে।”
নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশে প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে বিরোধ এবং সংলাপের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লুর চিঠির বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “বন্ধু দেশ উপদেশ ‘যাচাইবাছাইয়ের’ পর সরকার গ্রহণ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী এবং একক দেশ হিসাবে তৈরি পোশাকের শীর্ষ গন্তব্য। তারা সময়ে সময়ে উপদেশ দিয়ে থাকে। সেগুলো যাচাইবাছাই করে মানুষের মঙ্গলের জন্য, বাংলাদেশের মঙ্গলের জন্য সেটা গ্রহণ করি।“
সংলাপের ডাকে আওয়ামী লীগের ইতিবাচক সাড়া না দেওয়ার প্রসঙ্গে জবাব আসে বলেন, “আওয়ামী লীগ কখনো সংলাপে পিছপা হয় না।
“আমরা নির্বাচন চাই। নির্বাচন আমরা কাউকে বাধাগ্রস্ত করতে দেব না। আর এই নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর হওয়ার যদি কোনো বন্ধু রাষ্ট্র আমাদের সহায়কের ভূমিকা পালন করে, আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাব।”
সংঘাত বন্ধ করতে হলে সব দল ও মতের ইচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই যে আমাদের বিরোধী দল বিএনপি গত ২৮ অক্টোবর ‘শান্তিপূর্ণ’ শোভাযাত্রার ঘোষণা করে। কিন্তু সেখানে তাদের মূল লক্ষ্যই ছিল জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস।
“যারা কোনো দলের না, বিচারকদের বাসভবনে জ্বালাও-পোড়াও করল, হাসপাতালেও জ্বালাও পোড়াও করল, সাধারণ জনগণের প্রায় ১৫৪টি বাস পোড়াল। বাসের মালিক তো সরকার না।”
উপমহাদেশে নির্বাচনের সময় যথেষ্ট সংঘাত হওয়ার আশঙ্কা ‘সব সময় থাকে’ মন্তব্য করে মোমেন বলেন, “আমাদের দেশেও হয়, তবে দিনে দিনে কমছে। গত ৪-৫টা নির্বাচন যদি আপনি দেখেন, সেখানে কিন্তু সংঘাত ছিল না।”
আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ কখনো পেছনের দরজা দিয়ে সরকারে আসে নাই।”
গত ১৫ বছর দেশে হওয়া কয়েক হাজার নির্বাচন অধিকাংশ ‘মোটামুটিভাবে সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে’ দাবি করে মন্ত্রী বলেন, “একটা-দুটা হয়ত অনিয়ম হয়েছে, যেগুলোতে অনিয়ম হয়েছে, সেই নির্বাচনগুলো বানচালও হয়েছে।”