পরিবর্তনে গেলেন না শেখ হাসিনা, কমিটি অপরিবর্তিতই

আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বাদ পড়েছে গুটিকয়েক, হাতেগোনা অদল-বদল হয়েছে। আসেনি নতুন কোনো মুখ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2022, 07:15 PM
Updated : 24 Dec 2022, 07:15 PM

বড় চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে দলের সম্মেলন করলেও কমিটি অপরিবর্তিতই রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে গত দুই বারের সঙ্গী ওবায়দুল কাদেরকেই রেখে দিয়েছেন তিনি; কমিটির অন্য পদেও আনেননি তেমন কোনো পরিবর্তন। দুই-একটি বাদ এবং অদল-বদল হলেও কোনো নতুন মুখ আসেনি কমিটিতে।

নির্বাচনের আগের বছর যখন বিএনপির আন্দোলনের হাঁক আসছে, ইউক্রেইন যুদ্ধের মধ্যে যখন অর্থনীতি চেপে ধরেছে সরকারের অগ্রযাত্রা, তখন শনিবার দিনব্যাপী এই সম্মেলন করল টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ।

এই সম্মেলনের স্লোগান ঠিক করা হয়- ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’

সম্মেলনে এবার তেমন পরিবর্তন আসবে না, তেমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে তৃণমূল নেতাদের মনে কিছু পরিবর্তনের আশা ছিল।

সম্মেলনে আসা নবীন কর্মী শফিকুল আলম বাবুল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, তিনি চান আগামী কমিটি গড়ে উঠুক নতুন-পুরাতনের মেলবন্ধনে।

“১৯৮০ ও ৯০ এর দশকে ছাত্র রাজনীতি ও যুব রাজনীতির মাধ্যমে যারা বেরিয়ে এসেছেন, তাদেরকে এখন আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃত্বে সম্পৃক্ত করে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে যাতে কমিটি হয়, সেই প্রত্যাশা আমি করি।”

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থেকে সম্মেলনে আসা ৭২ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক ভূইয়াও একই মত প্রকাশ করে এর পেছনে যুক্তিও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “নবীন-প্রবীণের মিলন মেলাই রাজনীতির সৌন্দর্য। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দীর চেয়ে বঙ্গবন্ধুর বয়স কম ছিল। তাদের শিষ্য ছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তাদের সমন্বয়ে রাজনীতি হয়েছে।”

Also Read: ‘পদ-পদবি কিছু না, ভালোবাসি আওয়ামী লীগকে’

Also Read: অনেক চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে সম্মেলনে আওয়ামী লীগ

Also Read: নির্বাচন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আওয়ামী লীগই এনেছে: শেখ হাসিনা

Also Read: আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী থেকে নাহিদ-রমেশ-মান্নান বাদ

জরুরি অবস্থার সময় দলীয় সংস্কারের দাবি তুলে ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মতো ‘হেভিওয়েট’ নেতাদের পরের সম্মেলনে দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফোরাম থেকে বাদ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

এরপর আনকোরা সব নেতাদের নিয়ে সরকার ও দল দুটোই চালিয়ে নেন শেখ হাসিনা। তখন সাধারণ সম্পাদকের পদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে আনলেও দুই মেয়াদের পর তাতে পরিবর্তন করে ওবায়দুল কাদেরকে সেই পদে আনা হয়।

২০০৯ সালে চমক দেখানোর সরকারের অনেক নতুন মুখ থাকলেও ২০১৪ সালের সরকার গঠনের সময় কিছুটা বদলান শেখ হাসিনা। তবে ২০১৯ সালে সরকার গঠনের সময় খুব একটা পরিবর্তনের দিতে হাঁটেননি শেখ হাসিনা। এবার দলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও তেমনটাই দেখা গেল।

আর এক বছর পরই পরবর্তী নির্বাচন হবে বলে দল গোছানোর প্রয়াস ছিল এবারের সম্মেলনে, সেই সঙ্গে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলার মতো শক্ত নেতৃত্বই চাইছিলেন তৃণমূল নেতারা।

সম্মেলনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “নির্বাচন এলেই দেশি ও আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র হয়। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করবে। তাই দল শক্তিশালী থাকলে যে কোনো ষড়যন্ত্র, আন্দোলন প্রতিহত করা সহজ হবে।”

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী হিসেবে দেশময় ছুটোছুটি করে আলোচনায় আসার পর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন কাদের। তবে মাঝে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেও তার আগের মতো সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছিল না। সম্মেলন ঘিরে অবশ্য তার ছোটাছুটি চোখে পড়েছে।

ওবায়দুল কাদের দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। পঁচাত্তর পরবর্তী দুঃসময়ে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি। শিক্ষা সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পেরিয়ে তিনি এসেছেন সাধারণ সম্পাদক পদে।

জরুরি অবস্থার সময় বন্দি অবস্থায় তার বক্তব্য সম্বলিত একটি অডিও টেপ ছড়িয়ে পড়ার পর নেতৃত্বের প্রতি তার আনুগত্য নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা তার প্রতি আস্থা রেখেছেন বলে সাধারণ সম্পাদক পদে তার হ্যাটট্রিক হল।

কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর কাউন্সিলররা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয় সভাপতিকে। এরপর শেখ হাসিনা কমিটির বাকি সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন।

দলের গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলী থেকে শেখ হাসিনা বাদ দিয়েছেন সাবেক তিন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, রমেশ চন্দ্র সেন ও আব্দুল মান্নান খানকে। সিপিবি থেকে আসা নাহিদ ও মান্নানের পাশাপাশি রমেশকেও রাখা হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদে।

সভাপতিমণ্ডলীতে নতুন এসেছেন মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। শীর্ষ স্তরে পরিবর্তন বলতে এটুকুই। বাকিরা সবাই যার জায়গায় আগের মতোই রয়েছেন।

সম্পাদকমণ্ডলী থেকে পুরোপুরি বাদ পড়েছেন কেবল সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক। সম্পাদকমণ্ডলীর পদ হারানো হারুনুর রশীদ ও হাবিবুর রহমান সিরাজকে নতুন কমিটিতে উপদেষ্টা পরিষদে রাখা হয়েছে।

সম্পাদকমণ্ডলীর আগের পদগুলো প্রায় একই রয়েছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে আগের চারজনই রয়েছেন, শুধু ক্রম পরিবর্তন হয়ে এখন হয়েছে- হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও দীপু মনি।

সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা যাদের গড়ে তুলতে চেয়েছেন, দৃশ্যত তাদের নিয়েই সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পথ ধরলেন।