অনেক চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে সম্মেলনে আওয়ামী লীগ

নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে বিরোধী দলে আন্দোলন মোকাবেলায় দল গোছাতে চাইছে আওয়ামী লীগ, তবে নেতৃত্বে পরিবর্তনের তেমন ইঙ্গিত নেই।

কাজী মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2022, 07:09 PM
Updated : 23 Dec 2022, 07:09 PM

সামনে নির্বাচন, বিরোধীরা একদিকে রাজপথ উত্তপ্ত করার পথে এগোচ্ছে, অন্যদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট সরকারকে ফেলেছে চাপে, এতসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে দলের সম্মেলন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। 

গত ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ দৃশ্যত এখনই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। জাতীয় সম্মেলনের ডাক দিয়ে দলটি এই আয়োজনের স্লোগানে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। 

৭৩ বছর পেরিয়ে আসা আওয়ামী লীগের ২২তম এই সম্মেলনে শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে বড় কোনো পরিবর্তনের আভাস নেই। 

তারপরও আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন নিয়ে সারাদেশের মানুষের কৌতূহল থাকবে। তার কারণ কী- তা আহমদ ছফার একটি কথাতেই স্পষ্ট। 

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এই দলটিকে নিয়ে তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ যখন জেতে, তখন কিছু মুষ্টিমেয় নেতা জিতলেও হারলে গোটা বাংলাদেশ পরাজিত হয়।

সেই রাজনৈতিক দলটির তৃণমূল নেতারা শনিবার সারাদেশ থেকে এসে জড়ো হবেন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, যোগ দেবেন সম্মেলনে, যেখানে দলের পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক হবে, নতুন কমিটিও গঠন হবে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় বসার পর আওয়ামী লীগের তিনটি সম্মেলন হয়; সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালে। তার আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে দলটি।

২০১৮ সালের সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও তার আগে ২০১৪ সালের চিত্র ছিল ভিন্ন। সেই নির্বাচনে বিএনপি ভোট বয়কট করে নির্বাচন আটকে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে নেমেছিল।

সেই আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি ও তার মিত্ররা আর বড় কোনো চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারেনি আওয়ামী লীগের দিকে। নির্বিঘ্নেই দিন পার করেছে আওয়ামী লীগ।

তবে আট বছর পর এখন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে জোর দিচ্ছে বিএনপি।

তাই দলকে শক্তিশালী করাও যে সম্মেলনের লক্ষ্য, তা বললেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের কথায়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “নির্বাচন এলেই দেশি ও আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র হয়। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করবে। তাই দল শক্তিশালী থাকলে যেকোনো ষড়যন্ত্র, আন্দোলন প্রতিহত করা সহজ হবে।”

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দল গোছানোয় জোর

৭০ বছরের পুরনো দল আওয়ামী লীগ এবার কোন লক্ষ্য নিয়ে সম্মেলনে মিলিত হচ্ছে? সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী নির্বাচন এবং বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা করার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলকে শক্তিশালী, সুসংগঠিত করতে হবে।

“মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই দেশকে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জাতির কাছে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাব এবং আমাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।”

আর এর অংশ হিসেবে সহযোগী সংগঠন মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। দলের তৃণমূলের সর্বস্তরে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়েছে। ৬৮ জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠন সাজিয়েছে। এমনকি গত ইউপি নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী হয়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাদেরকেও ‘ক্ষমা’ করেছে দলটি।

২২তম জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে সারা দেশে মহানগর, পৌরসভা ও উপজেলাসহ সকল পর্যায়ে প্রায় ৭৫ শতাংশ সম্মেলনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলে দলীয় নেতাদের ভাষ্য। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে এর অর্ধেক।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মোট ৭৮টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে প্রায়গুলোরই সম্মেলন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। এর বাইরে উপজেলা ও নগর মহানগর পর্যায়েও সম্মেলন প্রায় শেষ।”   

নেতৃত্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেই

তিন যুগের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার এখনও কোনো ‘বিকল্প নেই’ তার দলের নেতাদের কাছে।

ওবায়দুল কাদেরের ভাষায়, “সভাপতি আমাদের অপরিহার্য; যিনি সভাপতি আছেন, তিনি আমাদের ঐক্যের প্রতীক। কাউন্সিলরদের একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে তাকে (শেখ হাসিনা) সমর্থন করবে না। কাজেই এই নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।”

শনিবার সকাল ১০টায় শেখ হাসিনাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। এরপর বিকাল ৩টায় কাউন্সিলে গঠিত হবে আগামী নেতৃত্ব। তবে সেজন্য কাউন্সিলররা তাকিয়ে আছেন তাদের নেত্রীর দিকেই।

বরাবরের মতই এ সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের আলোচনায় ঘুরছে একই প্রশ্ন- সম্পাদক পদে কোনো পরিবর্তন আসছে কি?

সম্মেলনের দুদিন আগেও সাংবাদিকরা এই প্রশ্ন রেখেছিলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে, যিনি এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন গত ছয় বছর ধরে।

উত্তরে কাদের বলেন, “আমার জানা মতে ১০ জন অন্তত প্রার্থী আছে, যারা সাধারণ সম্পাদক হতে চায়। কাজেই কে হবেন, সেটা নেত্রীর ইচ্ছা এবং কাউন্সিল অধিবেশনে সেখানে কাউন্সিলরদের মতামতে এর প্রতিফলন ঘটবে। আমি এই মুহূর্তে কোন প্রেডিকশানে যেতে পারি না।”

তবে নেতৃত্বে খুব একটা পরিবর্তসন আসছে না বলে ইঙ্গিতও দেন ওবায়দুল কাদের, সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে যার ভূয়সী প্রশংসা করতে দেখা গেছে শেখ হাসিনাকে।

চাই মাঠের নেতা

২০১৯ সালের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের থেকে গেলেও কিছু নতুন মুখ এসেছিল কেন্দ্রীয় কমিটিতে।

তবে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এবার বিএনপির রাজপথ দখলের চেষ্টা এবং আন্দোলন মোকাবেলার মতো নেতৃত্ব চাইছেন তৃণমূলের নেতারা।

কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় সম্মেলনে যোগ দিতে আসা কুমারখালী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বিটু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামীতে আওয়ামী লীগকে কঠিন সময় পার করতে হবে। আমাদের রাজপথে লড়াই করতে হবে। যারা নেতৃত্বে আসবেন তারা অবশ্যই পরীক্ষিত থাকতে হবে।

“পরীক্ষিত সাবেক ছাত্রনেতা আওয়ামী লীগের দুর্দিনের নেতা-কর্মীরা এই সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্বে এলেই আগামী কঠিন সময় মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।”

ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বিপ্লব মনে করেন, এবারের কাউন্সিল আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের দুর্দিনে যারা দলের জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ করেছে, তাদেরকেই আনা উচিৎ বলে আমি মনে করি। জননেত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য নেতৃত্বই ঠিক করবেন বলে আমরা আশা করি।”

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একজন জানান, ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ থেকে ১০ থেকে ১২ নেতা বাদ পড়তে পারেন। সম্পাদকমণ্ডলী ও সদস্য থেকে কয়েকজন নেতার পদোন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “গত সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা নেতা হয়েছেন, তাদের সবাই ভালো কাজ করছেন। দুয়েকজনের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ এসেছে, সেটা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি।”

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর। সেই কমিটির মেয়াদপূর্তির ৩ দিনের মাথায় এবারের সম্মেলন হচ্ছে। তবে এবার একদিনেই সম্মেলন হচ্ছে।

২২তম সম্মেলন

  • স্লোগান: ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’

  • উদ্বোধন: সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

  • অংশ নেবেন যারা: সারা দেশ থেকে সাড়ে সাত হাজার কাউন্সিলর ও সাড়ে সাত হাজার প্রতিনিধিসহ প্রায়এক লাখ নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবেন দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবী। আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সবসময়ই বিদেশি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার খরচ কমাতে একদিনের সম্মেলনে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না।

  • উদ্বোধনী অধিবেশন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধনের পরপরই হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের পর হবে শোক প্রস্তাব পাঠ। এক মিনিট নীরবতা পালনের পর অভ্যর্থনা উপ-পরিষদের আহ্বায়ক বক্তব্য দেবেন। সাধারণ সম্পাদক পেশ করবেন দলের প্রতিবেদন। এরপর সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম অধিবেশনের কর্মসূচি।

  • কাউন্সিল অধিবেশন: বিকাল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। এরপর শুরু হবে রুদ্ধদ্বার কাউন্সিল। গঠনতন্ত্রের সংশোধনী পাস হবে সেখানে। রাতে ঘোষণা হবে নতুন কমিটি। 

  • নির্বাচন কমিশন: কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য দলের উপদেষ্টা পরিষদের তিন সদস্যের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সভাপতিত্বে কমিটির অন্য দুই সদস্য মশিউর রহমান ও সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

দিনব্যাপী আয়োজন

জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রস্তুত হয়েছে পদ্মা সেতুর উপরে নৌকার আদলে সম্মেলন মঞ্চ।

তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এবার আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের ব্যয় সংকোচন করা হয়েছে। ফলে অনেক আয়োজনেই কাটছাঁট হচ্ছে। বিগত দিনে দুই দিনব্যাপী সম্মেলন হলেও এবার তা কমিয়ে এক দিনে আনা হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। ঠিক করে দেওয়া হয়েছে গাড়ি রাখার জায়গা।

>> সম্মেলনস্থল সোওরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে যে মঞ্চ তৈরি হয়েছে, তা পদ্মা সেতুর উপরে নৌকার আদলে করা হয়েছে।

>> সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য পাশেই আলাদা মঞ্চ থাকবে। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ এলইডি মনিটর থাকবে, যেখানে সম্মেলনের কার্যক্রম দেখা যাবে।

>> মঞ্চের আয়তন হবে দৈর্ঘ্যে ৮০ ফুট ও প্রস্থে ৪৪ ফুট এবং উচ্চতা হবে সাত ফুট। মঞ্চে ১২০ জনের বসার চেয়ার রাখা হবে।

>> মঞ্চের পূর্ব পাশে আওয়ামী লীগের ৭৮টি স্ট্যান্ডে উড়বে সাংগঠনিক জেলা কমিটির নেতাদের দলীয় পতাকা।

>> দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা মঞ্চে বসবেন। পশ্চিম দিকে আরেকটি মঞ্চ করা হয়েছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য।

>> প্রবেশপথ রঙিন পতাকায় সাজানো হয়েছে। উদ্যানের প্রবেশের পথ থেকে মঞ্চ পর্যন্ত শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার ছবি।

>> মঞ্চের সামনে ও প্যান্ডেলের চারপাশে আওয়ামী লীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে চিত্রকর্ম প্রদর্শনের ব্যবস্থা হয়েছে।

>> সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ফেইসবুক ও ইউটিউবে লাইভ করবে সিআরআই।

>> এবার সম্মেলন ঘিরে সারা দেশ থেকে আসা ৪০ হাজার নেতা-কর্মীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আট বিভাগের জন্য মোট ১০টি বুথ থেকে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

>> সম্মেলনে আসা প্রতিনিধিদের উপহার হিসেবে দিতে আনা হয়েছে ১৫ হাজার পাটের ব্যাগ। প্রতিটি ব্যাগে আওয়ামী লীগের ইতিহাস সম্বলিত স্মরণিকা, শোকপ্রস্তাব, দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভাষণ এবং গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র থাকবে।

>> ২২তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১২টি উপ-কমিটি এক মাস ধরে এই প্রস্তুতি সেরেছে। এবারের সম্মেলনে প্রায় তিন কোটি ১৩ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে।

৭৩ বছরের ইতিহাস

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা। প্রতিষ্ঠাকালে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি এবং শামসুল হক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

 ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার 'মুকুল' প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। নতুন নাম হয়-‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নাম নেয় দলটি।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫০ এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। তবে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাজনৈতিক মতভিন্নতার জন্য ১৯৫৭ সালে দল ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন।

এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় এই দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থার স্থান তৈরি করে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়। ছয় দফার ভিত্তিতেই ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।

এরপর পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যূদয় ঘটে বাংলাদেশের।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর সামরিক শাসনের নির্যাতন আর নিপীড়নের মধ্যে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি। নেতাদের মধ্যেও দেখা দেয় বিভেদ।

১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসাবে দেশে ফিরে কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন, আন্দোলন শুরু করেন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে। তারপর থেকে এখনও সভাপতির পদেই রয়েছেন তিনি।

পঁচাত্তরের পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পাঁচ বছর শাসনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। কিন্তু, দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কারচুপির মাধ্যমে তাদের হারানো হয়েছে।

পরবর্তীতে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে পুনরায় সরকার গঠন করে। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়।

আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।