সভাপতি কামালের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মিজানুর রহমান।
Published : 17 Sep 2022, 03:44 PM
ভাঙনের পর গণফোরামের যে অংশের নেতৃত্বে কামাল হোসেন রয়েছেন, সেই অংশের নতুন কমিটি ঘোষণা হয়েছে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ১০১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সভাপতি পদে কামালই রয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক পদে এসেছেন মো. মিজানুর রহমান।
কমিটিতে ১৭ সদস্যের সভাপতি পরিষদ, কোষাধ্যক্ষ, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৩ সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলী, ৮ সদস্যের স্থায়ী পরিষদ ও ৩৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদে যারা রয়েছেন, তাদের নাম প্রকাশ করেন সাধারণ সম্পাদক মিজান।
গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মফিজুল ইসলাম কামাল, এএসএম আলতাফ হোসেন, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, মোশতাক আহমেদ, সুরাইয়া বেগম, মোমেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিউর রহমান খান সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।
আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে কামাল হোসেন এবং সিপিবি থেকে বেরিয়ে আসা সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে ১৯৯৩ সালে ২৯ অগাস্ট গণফোরাম গঠিত হয়।
কামাল হোসেন তখন থেকেই এ দলের সভাপতি। মানিক মারা গেলে আওয়ামী যুবলীগ থেকে আসা মন্টুকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
২০২০ সালে দলের পঞ্চম কাউন্সিলের পর কামাল তার দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে বাদ দিয়ে রেজা কিবরিয়াকে ওই পদে আনলে ভাঙনের সূচনা হয়।
এরপর দুই অংশের মধ্যে বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের ঘোষণা আসে। জাতীয় প্রেসক্লাবে আলাদাভাবে বর্ধিত সভাও করে তারা। এরমধ্যে রেজা দল ছাড়লেও বিরোধ থামেনি।
এক বছর পর মন্টুরা কাউন্সিল ডেকে আলাদা কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটিতে সভাপতি মন্টুর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আছেন সুব্রত চৌধুরী।
মন্টুর গণফোরামের কাউন্সিলে ১৫৭ সদস্যের কমিটি
ইভিএম ‘অশনি সংকেত’
অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের আপত্তি সত্ত্বেও দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে দেশের জন্য ‘ভয়ঙ্কর অশনিসংকেত’ বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আজ ‘ধ্বংসপ্রাপ্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ’ করা হয়েছে।
“অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের আপত্তি সত্ত্বেও কমিশন ইভিএমে ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা দেশের জন্য এক ভয়ঙ্কর অশনি সংকেত। জাতি এই দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়।”
কামাল হোসেন বলেন, “অর্থ ও ক্ষমতার লোভ বর্তমান রাজনীতিকে ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত করেছে। এই রোগ থেকে মুক্ত করে সুস্থ রাজনীতিই পারে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে, যা গণফোরামের লক্ষ্য।
“আমরা বর্তমানে এরূপ অনিশ্চিয়তা অবস্থা চলতে দিতে পারি না। সকল সচেতন নাগরিক, সকল নাগরিক সংগঠন, ছাত্র, শ্রমিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও নারী সংগঠনসহ সকলের কাছে আমি আহ্বান জানাই- আসুন, আমরা জাতীয় সংকট নিরসনের জন্য একটা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কাঠামো তৈরির দাবি জানাই।”
‘সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ’ মন্তব্য করে গণফোরাম সভাপতি বলেন, “আপনারা দেশের অবস্থা সবাই নিজের চোখে দেখছেন, নিজে উপলব্ধি করছেন যে, রাষ্ট্রের যারা দায়িত্বে আছেন তারা কীভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
“এই রাষ্ট্র কোনো ব্যক্তির না, এই রাষ্ট্র আপনাদের সবার, জনগণের। আপনারা সবাই দেশের মালিক। এই দেশকে অবশ্যই রক্ষা করা যাবে, দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করা যাবে যদি সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হই।”
জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে মনে করেন প্রবীণ এই রাজনীতিক।
তার ভাষ্য, “এখন যারা ক্ষমতায় আছেন তারা টাকা বিদেশে পাচার করেন। যারা রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকেন তারা তাদের দায়িত্ব বুঝেন না, তাদের অবহেলা আজকে প্রকাশ পাচ্ছে পত্রিকায়।
“হাজার হাজার কোটি টাকার টেলিফোন ডিপার্টমেন্ট যেটা সরকারের একটা প্রতিষ্ঠান, তারা ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা তুলেছে, কিন্ত সেই টাকা সরকারের তহবিলে জমা দিচ্ছে না। পত্রিকায় এই খবর পড়ে মনে হলো এটা কীভাবে হতে পারে?”
কামাল বলেন, “আমার এখন বয়স হয়ে গেছে। আমার এখন রিটায়ার্ড করার, বসে যাওয়ার সময় এসে গেছে। তারপরও নেতৃবৃন্দ বলেছেন এখানে আসতে, এসেছি। সেই সুযোগটা আমি নিয়েছি যে, আপনাদেরকে বলতে এই রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হবে।”