বিএনপির ৬ আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

আগামী মার্চের প্রথম ভাগের মধ্যে তাদের ছয়টি আসনে উপ-নির্বাচন হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2022, 03:48 PM
Updated : 11 Dec 2022, 03:48 PM

বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের মধ্যে পদত্যাগ করায় ছয়জনের আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে সংসদ সচিবালয়।

ফলে আগামী মার্চের প্রথম ভাগের মধ্যে এই ছয়টি আসনে উপ-নির্বাচন হবে।

রোববার সকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর রাতেই এ গেজেট হল।

ছয়জনের নাম (জাহিদুর রহমান, মো. মোশারফ হোসেন, জি এম সিরাজ, মো. আমিনুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার ভূঞা ও রুমিন ফারহানা) উল্লেখ করে আলাদা আলাদা গেজেটে বলা হয়েছে, ১১ ডিসেম্বর পূর্বাহ্নে পদত্যাগ করায় একাদশ সংসদের আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।

শূন্য ঘোষিত আসনগুলো হচ্ছে- ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও এবং সংরক্ষিত নারী আসনের (মহিলা আসন-৫০)।

মেয়াদপূর্তির এক বছর আগেই তারা সংসদ ছাড়লেন। ৯০ দিনের মধ্যে ওই আসনগুলোতে উপ-নির্বাচনের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদের স্ক্যান করা সই ও ইমেইলে পাঠানো পদত্যাগপত্র ‘স্বাক্ষরযুক্ত’ বিবেচিত না হওয়ায় তাকে আবার জমা দিতে হবে। তিনি এক সপ্তাহ পর অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে স্ব-স্বাক্ষরে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে বিএনপির পদত্যাগীরা জানিয়েছেন।

আসন শূন্য হওয়ার বিষয়ে সংবিধানের ৬৭(২) বলা হয়েছে, “কোনো সংসদ-সদস্য স্পিকারের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন, এবং স্পিকার কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকলে বা অন্য কোনো কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ডেপুটি স্পিকার- যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হইতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হবে।”

সংবিধানের ১২৩ (৪) এ বলা হয়েছে- (৪) সংসদের কোনো সদস্যপদ শূন্য হলে পদটি শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উক্ত শূন্যপদ পূর্ণ করবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর রোববার বিকালেই জানিয়েছিলেন, আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ হলেই তারা উপ-নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবেন।

“আসন শূন‌্য ঘোষণার গেজেট পেলে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। পদত্যাগের গেজেট নোটিফিকেশনের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ওইসব আসনে উপ-নির্বাচন হবে।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপির সংসদ সদস্যরা শনিবার ঢাকার গোলাপবাগের সমাবেশে জানিয়েছিলেন, দলের সিদ্ধান্তে তারা পদত্যাগ করেছেন।

তারা ইমেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

পরদিন তারা সংসদ ভবনে গিয়ে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসেন।

Also Read: সংসদ থেকে বিএনপির ৭ এমপির পদত্যাগ

Also Read: বিএনপির ৫ এমপির পদ শূন্য, দুজনের পদত্যাগপত্র ‘যাচাই-বাছাই’ হবে: স্পিকার

Also Read: বিএনপির এমপিদের শূন্য পদে ৯০ দিনের মধ্যে উপ নির্বাচন: ইসি

Also Read: এমপিদের পদত্যাগের অনুতাপ বিএনপিকে করতে হবে: ওবায়দুল কাদের

বিএনপির সেই সাতজন

একাদশ সংসদে সংরক্ষিত এক আসন মিলিয়ে বিএনপি সাতটি আসন পেয়েছিল।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বগুড়া-৪, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ আসন মিলিয়ে পাঁচ জন নির্বাচিত হন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের তিন কেন্দ্র ভোট স্থগিত থাকায় পুনভোটে ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি নির্বাচিত হন আরেকজন।

বগুড়া-৬ আসন থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল নির্বাচিত হয়ে এলেও শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দেন।

বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ভোটে জয়ী হলেও পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলে এমপি হিসেবে শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দেন। শপথ না নেওয়ায় ৯০ দিনের মধ্যে তার আসন শূন্য হয়।

তবে ৯০ দিন অতিক্রমের আগে ২৫ এপ্রিল জাহিদুর রহমান শপথ নেন। এরপর ২৯ এপ্রিল শপথ নেন মোশারফ হোসেন, আমিনুল ইসলাম, হারুনুর রশীদ ও উকিল আবদুস সাত্তার।

সংরক্ষিত আসনে বরাদ্দ পাওয়া একটিতে নির্বাচিত হয়ে রুমিন ফারহানা শপথ নেন ৯ জুন।

ফখরুলের শূন্য আসনের উপ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১১ জুলাই শপথ নেন জিএম সিরাজ।

যা আছে পদত্যাগপত্রে: “বর্তমানে বাংলাদেশে চরম স্বৈরশাসন চলছে। বর্তমান সরকারের গণতন্ত্র ও গণবিরোধী কার্যকলাপে গণতন্ত্রহীনতা, বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপর দমনপীড়ন, গণগ্রেপ্তার, গুম, হত্যা এবং মতপ্রকাশ, বাকস্বাধীনতা হরণ, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার হরণ সর্বোপরি মহান জাতীয় সংসদকে অকার্যকর করার প্রতিবাদে, জনস্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থানগ্রহণকারী এই সংসদের সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করে এই সংসদ বাতিলের গণদাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি এবং দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্বেচ্ছায়, সুস্থ শরীরে, স্থির মস্তিষ্কে অন্যের বিনাপ্ররোচণায় গভীরভাবে চিন্তা ও বিবেচনার পর অদ্য ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখে সংসদ থেকে যার যার আসন থেকে পদত্যাগ করলাম।”

সুলতান মনসুর এখন ভিন্ন পথে

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন গণফোরামের দুজন সুলতান মো. মনসুর আহমেদ ও মোকাব্বির খান।

বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি সুলতান মনসুর।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব নেই জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব নেই। আমি বিএনপিও করি না, গণফোরামও না। আমি আওয়ামী লীগে আছি, আওয়ামী লীগও আমাকে বহিষ্কার করেনি।

“ভোটের সময় ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গণফোরাম থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছিলাম। এখন সংসদ চলবে সংবিধান মতো; তাদের পদত্যাগ তাদের দলের বিষয়।”

মোকাব্বির খানের সঙ্গে মোবাইলে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।