আগামী ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।
Published : 29 Jan 2024, 01:02 AM
স্বতন্ত্র কোটা থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য ঠিক করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।
এবার নির্বাচনে বিজয়ী ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আনুপাতিক হারে প্রাপ্যতা অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি নির্বাচন করে দিতে পারতেন।
এই কোটা পেতে স্বতন্ত্ররা জোট করছে কি না তা নিয়ে গত কয়েকদিন থেকে আলোচনার মধ্যে রোববার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তারা এ ভার সংসদ নেতার ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন।
এদিন সন্ধ্যায় গণভবনে এ বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে এ কে আজাদ, খসরু চৌধুরী, মহিউদ্দিন মহারাজসহ বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
আগামী মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে। এর আগে নৌকা প্রতীকের বাইরে জয়ী হয়ে সংসদে আওয়ামী লীগের পর বেশি আসন পাওয়া স্বতন্ত্রদের সঙ্গে বৈঠক করলেন নতুন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয়লাভ করেছে। এর বাইরে এবার ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জিতেছেন, যাদের মধ্যে ৫৯ জন আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
সংসদের বিধি-বিধান অনুযায়ী সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত নারী আসন আওয়ামী লীগ পাবে ৩৮টি, জাতীয় পার্টি পাবে দুইটি, আর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা পাবেন ১০টি আসন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এই ১০ জনকে মনোনয়ন দেওয়ার দায়িত্বই প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছেন।
সংরক্ষিত নারী আসনে স্বতন্ত্রদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ফরিদপুর থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, "আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলে এসেছি, যারা দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করেছেন। যারা সংসদে জনগণের জন্য ভূমিকা রাখতে পারবেন এমন কাউকেই আপনি মনোনয়ন দিবেন। এটা আমরা নিজে থেকেই বলে এসেছি। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজকে আওয়ামী লীগ এখানে এসেছে। সেইসব পরিবারকে স্বীকৃতিস্বরূপ সংরক্ষিত নারী আসন দিবেন।"
সংসদে তাদের ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা যেহেতু নৌকা পায়নি, আমরা দলের বিভিন্ন পদে আছি, দায়িত্বে আছি। আবার আমরা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। আমরা বলেছি, সেখানে এলাকাতে কাজ করতে নানা রকম অসুবিধা হচ্ছে। সুতরাং দলের মধ্যে আছি যেহেতু, সে তো আমাদের একত্রিত করা হোক।
সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের ‘বেশিরভাগই নতুন’
"মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আমাদেরকে বলেছেন, স্বতন্ত্র হিসেবেই তোমরা কাজ করো। এখানে কোন সমস্যা হবে না। কারণ এটা আমার ডান হাত, ওটা আমার বাম হাত। যারা দলীয় মনোনয়ন সে পায়নি, তারা সংসদে বেশি আলোচনা ও সমালোচনার সুযোগ পাবে।"
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা দলের সাংগঠনিক কাজে জড়িত থাকতে পারবে কি না? এমন প্রশ্নে এই সংসদ সদস্য বলেন, "অবশ্যই তারা জড়িত থাকতে পারবে। কারণ তারা সংগঠনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছে। সুতরাং এটাতে কোন বাধা নেই।"
ঢাকা-১৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরী সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের বিষয়ে বলেন, "এ ব্যাপারে আমরা নিজেরাই প্রধানমন্ত্রীর উপরে দায়িত্ব দিয়েছি। আমরা বলেছি, নেত্রী আপনি যেটা ভালো মনে করেন সেটাই করবেন।"
প্রধানমন্ত্রী আপনাদেরকে কি বার্তা দিয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন, "সবাইকে একই বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, দলীয় সংসদ সদস্যরা যতটুকু কথা বলতে পারবেন। তার থেকে আমরা বেশি কথা বলার সুযোগ পাব।"
আরেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, "আমরা হয়তো ১০টি বা ১১টির মতো সংরক্ষিত নারী আসন পাব। সবাই একমত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলে এসেছি, আমরা তাকে এটা দিয়ে এসেছি। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তার মতো করে সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন প্রদান করবেন।"
স্বতন্ত্ররা কোনো জোট করছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, "আমরা যারা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছি তারা আলাদা কোনো জোটে যাচ্ছি না।”
আওয়ামী লীগের সঙ্গেই রাজনীতি করবে স্বতন্ত্ররা
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা আওয়ামী লীগের সঙ্গেই রাজনীতি করবে বলে আশা করছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ (স্বপন)।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্বতন্ত্র এমপিদের বৈঠক শেষে তিনি বলেন, "স্বতন্ত্র এমপিরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন। তারা রাজনীতি আওয়ামী লীগের সাথেই করবেন। তবে সংসদে তারা স্বতন্ত্র হিসেবেই তাদের কার্যবিধি অনুযায়ী ভূমিকা পালন করবেন।"
স্বতন্ত্র ৬২ জনের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "পার্লামেন্টি পার্টি ও দল দুটি আসলে একই এবং অভিন্ন নয়।
তিনি বলেন, "প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন তারাও নেত্রীর, আবার যারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন তারাও নেত্রীর। সমগ্র বাংলাদেশের দায়িত্বই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার। তিনি সবাইকে ধারণ করেন সবাইকে নিয়েই তিনি কাজ করবেন। পার্লামেন্টে সংসদ সদস্যরা তাদের সংসদীয় কার্যবিধি অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন।"
জাতীয় সংসদের এই হুইপ বলেন, "সংসদ আসলে বিরোধী দল এবং স্বতন্ত্রদের জন্যই। কারণ সংসদের কার্যবিধি অনুযায়ী, সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের তেমন কিছু বলবার থাকে না। সংসদকে প্রাণবন্ত করতে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংসদের স্বতন্ত্র হিসেবেই ভূমিকা পালন করবেন। আর এর মধ্য দিয়ে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য তারা ভূমিকা পালন করতে পারবে।"
বৈঠকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সংসদে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি দলের বাইরে যারা থাকেন তাদের অনেক সুবিধা থাকে। যেকোন বিলের ওপরই কথা বলার সুযোগ থাকে। এখানে অনেক প্রবীণ সংসদ সদস্য আছেন তার ওপর সরকার প্রতিবারই সংসদ নির্বাচনের পর ওরিয়েন্টেশন কোর্সও করিয়ে থাকে।
“কাজেই এটাকে (সংসদ) অর্থবহ করা এবং গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে সবাই ভূমিকা রাখতে হবে।”