জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ”নির্বাচন নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত হবে না, প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হবে। গণমাধ্যমের সামনে ঘোষণা দেওয়া হবে, এই কারণে আমরা নির্বাচন করছি বা করছি না।”
Published : 04 Nov 2023, 04:44 PM
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ প্রশ্নে দলের অবস্থান এবার স্পষ্ট করলেন সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের। জানিয়েছেন, তারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আছেন। যদি ভিন্ন চিন্তা করেন, তাহলে তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
নির্বাচন ‘সঠিকভাবে’ হতে হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
শনিবার দুপুরে দলের চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে নিজের লেখা ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র সোনার পাথরবাটি দ্বিতীয় খণ্ড’ ও ‘মিসেরিজ অব মিসকনসিভড ডেমোক্রেসি ভলিউম-টু’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
গত কদিন ধরেই নির্বাচনে নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান প্রশ্নে নানা আলোচনা চলছে। গত ২ নভেম্বর ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় যে জাতীয় পার্টি ভোটে আসছে।
সেই বৈঠকে আলোচনায় জি এম কাদেরই এমন কথা বলেছেন বলে দলীয় চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত মাসরুর মওলার বরাত দিয়ে এই খবর প্রকাশ হয়।
তবে দুদিন পর দলের চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সংবাদটিকে ‘অসত্য’ দাবি করে তা সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
আরও পড়ুন:
ভোটে যাওয়ার ‘অসত্য’ সংবাদ সরাতে জাতীয় পার্টির অনুরোধ
এর পরদিন দেলোয়ার জালালী বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানান, তার নেতা বলেছেন, “আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গেই আছি। কী হবে তা এখনো কেউ জানে না, যদি নির্বাচন হয় তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঘোষণা না দিয়ে চলে যাব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আছি, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
তিনি এও বলেন, “নির্বাচন যদি সঠিকভাবে হয় তবেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। যদি আমরা মনে করি, সঠিকভাবে নির্বাচন হচ্ছে না তখন আমরা ঘোষণা দিয়েই নির্বাচন বর্জন করব।”
যদি বর্জন হয়, তাহলে সেই ঘোষণা দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গেই আলোচনা করেই নেবেন বলেও জানিয়ে দেন জি এম কাদের। বলেন, “নির্বাচন নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত হবে না, প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হবে। গণমাধ্যমের সামনে ঘোষণা দেওয়া হবে, এই কারণে আমরা নির্বাচন করছি বা করছি না।”
সরকারকে ‘তত্ত্বাবধায়কের’ মতো হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন বিরোধী দলটির নেতা। তিনি বলেন, “কাজ ভালো না করলে ‘কেয়ারটেকারকে’ পরিবর্তন করতে পারবে দেশের জনগণ। মানুষের ভোটাধিকার থাকবে এবং শাসকের সমালোচনা করার অধিকার থাকবে।”
সরকার ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সাংবিধানিকভাবেই এখন সরকারপ্রধান যা বলবেন তাই সংসদে পাস হবে। এতে জবাবদিহিতা থাকে না।
“এখনো সংবিধানে আছে দেশের জনগণ ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি পরিবর্তন করতে পারবে, যদিও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে ভূলুণ্ঠিত করেছে বর্তমান সরকার।”
বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্র নেই’ এমন অভিযোগ তুলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের উদাহরণ দেন জি এম কাদের।
তিনি বলেন, “বিবিসির দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, চার হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বছরে আয় করছে একশ কোটি টাকা। ১৫ বছর হচ্ছে এটার লাইফ। এটা কি বাস্তবসম্মত হলো? তাহলে আবার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্পের জন্য চুক্তি কেন?”
প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নামে ‘দুর্নীতির সম্ভাব্যতা’ যাচাই করা হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যেখানে বেশি দুর্নীতি করা যায়, সেই প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন হয়।”
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়েও ‘কথা আছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভারতে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলারে। অথচ একই কোম্পানির ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপনে ইতোমধ্যেই খরচ হয়েছে নাকি ১৬ বিলিয়ন ডলার।
“আমাদের দেশে ভারতের চেয়ে তিনগুণ বেশি খরচে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আবার বরিশালেও নাকি আরো একটি প্রকল্প তৈরি করা হবে। এমন দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করার অধিকার অবশ্যই আমাদের আছে।”
‘স্থিতিশীল সরকার থাকলে অনেক উন্নয়ন হয়’ সরকারের পক্ষ থেকে আসা এমন বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন জি এম কাদের। বলেন, “যেসব দেশে একনায়কতন্ত্র থাকে, সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার এমন কথা বলা হচ্ছে। …এক সরকার বেশি দিন থাকলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ঢেকে রাখতে পারে না।
“সরকার বা সরকার প্রধান পরিবর্তন হলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যদি অস্থিরতা সৃষ্টি না হয় তাকেই স্থিতিশীলতা বলা যায়। স্বৈরশাসনে কখনোই স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। একটি সরকার বেশি দিন থাকাও অস্বাভাবিক ব্যাপার।”
তিনি বলেন, “মানুষ সুশাসন আশা করে। আইনে শাসন, আইন সবার জন্য সমান হবে, ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা…সবাই যেন মনে করে, আমরা ন্যায়বিচার পাচ্ছি। কেউ যেন বঞ্চনা বা অত্যাচারের শিকার না হয়।”
জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরীফা কাদেরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাও বক্তব্য রাখেন।