গত ২ নভেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনারকে জি এম কাদের বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাচ্ছেন তারা।
Published : 03 Nov 2023, 06:08 PM
জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাবে বলে যে প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, সেই তথ্য ‘অসত্য’ জানিয়ে সংবাদটি তুলে নেওয়ার অনুরোধ এসেছে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে।
শুক্রবার দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী এক বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ করেছেন।
জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদটিকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ দাবি করে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না স্পর্শকাতর, ভুয়া ও মনগড়া সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ল কীভাবে?
“আমরা এমন সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে অনলাইন ভার্সন থেকে ‘মিথ্যা’ সংবাদটি অপসারণ করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
দেলোয়ার জালালী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফেয়ার ডটকমকে বলেন, “এমন কোনো কথা আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়নি। সংবাদটি কীভাবে প্রকাশ হল, সেটি আমরা বুঝতে পারছি না।”
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় পার্টির দাবি না হলেও একাধিকবার তারা অন্যান্য বিরোধী দলের মতই বলেছে, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
দলের পক্ষ থেকে একাধিকবার এও বলা হয়েছে, তারা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে এবং জনগণ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বদলে তাদেরকে ভোট দেবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলো ঢাকা অবরোধের মত কর্মসূচিতে ফিরে যাওয়ার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে জাতীয় পার্টির নির্বাচন ভাবনার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়।
সেদিন জাপা চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত মাসরুর মওলার গুলশানের বাসভবনে ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে জি এম কাদেরের বৈঠক হয়।
এরপর মশরুর মওলার বরাত দিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে ছাপা হয়, বৈঠকে সারাহ কুক জানতে চান জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর জবাবে জিএম কাদের বলেন, নির্বাচন বর্জন করলে দল ভেঙে যেতে পারে। তাই সংবিধান মেনে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে।
তবে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কয়েকটি গণমাধ্যমের এমন সংবাদ দেখে তারা ‘বিস্মিত’ হয়েছে। সারাহ কুককে জি এম কাদের ‘এমন কোনো কথা বলেননি।”
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা ও বিশেষ দূত মাসরুর মওলার উদ্ধৃতি দেওয়া হলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “মাসরুর মওলা গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গেও এমন কথা বলেননি। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এমন কোনো বিবৃতি বা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।
মাসরুর মওলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওরা (যুক্তরাজ্য দূতাবাস) বলেছিল তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরাও সেটা চাই।”
আপনি গণমাধ্যমকে কী বলেছিলেন?- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি বলেছি আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু প্রস্তুতি নেওয়া এক জিনিস আর নির্বাচনে অংশ নেওয়া এক জিনিস। এখন তো বিএনপি আন্দোলনে আছে। তাই বলে তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেই? অবশ্যই আছে।”
২০১৩ সালে যখন তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ভোট বর্জন করে বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলনে ছিল, সে সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে জাতীয় পার্টির অবস্থান পেন্ডুলামের মত দুলছিল।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ সময়ে চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সেগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলের একাংশ ভোটে থাকার ঘোষণা দেয়।
এরশাদের ঘোষণা মেনে জিএম কাদেরসহ অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারও করে নেন। এরশাদের মনোনয়নপত্র ঢাকা-১৭ আসনে প্রত্যাহার হলেও ‘প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার’ কারণ দেখিয়ে লালমনিরহাট-১ ও রংপুর-৩ আসনে তার নাম রয়ে যায়। পরে রংপুর থেকে তিনি জয় পান, লালমনিরহাটে হেরে যান।
ভোটের আগে আগে এরশাদকে ‘অসুস্থ’ জানিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যায় র্যাব। ভোট শেষে এরশাদ শপথ নেবেন না বলে জানিয়েও শেষ পর্যন্ত শেষ হওয়ার আগে আগে শপথ নেন। এরপর এরশাদকে মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করা হয়। বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন রওশন এরশাদ।
২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রসঙ্গে আন্দোলনে, সে সময় জাতীয় পার্টি তাদের সঙ্গে জোটে যায়। মোর্চার নাম হয় মহাজোট। জরুরি অবস্থা জারি হলে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল হয়।
এর দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাজোট পায় ভূমিধস জয়। ২০১৮ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে আসার পর জাতীয় পার্টি আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে। তবে ‘মহাজোট’ আর হয়নি।