এই ৩১ দফা চূড়ান্ত নয় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “ভবিষ্যতে পরিবর্তন আসতে পারে, সেটাও সময়ে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আসতে পারে।”
Published : 13 Jul 2023, 08:51 PM
সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পরদিন ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের’ ৩১ প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করল বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে একে ‘যৌথ রুপরেখা’ বলছে দলটি।
বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই রূপরেখা ঘোষণা করেন।
তার এই ঘোষণা গত ১৯ ডিসেম্বরের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। সেদিন বিএনপির পক্ষ থেকে ২৭ দফা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেটিকেও ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ হিসেবে তুলে ধরেছিল দলটি।
প্রায় সাত মাস পর নতুন এই ঘোষণায় চারটি প্রতিশ্রুতি বাড়ানো হয়েছে, বাদ পড়েছে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রসঙ্গ। এর আগে বিএনপি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলেছিল, এবার মন্ত্রিসভায় ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলেছে।
আগের ঘোষণার মতই সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার সীমা বেঁধে দেওয়া, বেকার ভাতা চালু, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে কমিশন গঠনের কথা বলা আছে এতে।
সরকার পরিচালনা ও নির্বাচন ছাড়াও বিচার ব্যবস্থা, রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে বিশেষ উদ্যোগ, প্রশাসনিক সংস্কার এবং কৃষক ও শ্রমজীবীদের নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও এখানে রয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, তারা যে ‘এক দফা’ দাবি ঘোষণা করেছেন, সেটি কেবল সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়, সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন ঘটাতে চান।
রাষ্ট্রকে সত্যিকার অর্থে ‘গণতান্ত্রিক’ হিসেবে গড়ে তুলতে যারা যুগপৎভাবে আন্দোলনে আছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রূপরেখাটি জাতির সামনে আবার তুলে ধরার কথা বলেন তিনি।
তবে এটিই চূড়ান্ত নয়, তাও জানিয়ে দেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে পরিবর্তন আসতে পারে, সেটাও সময়ের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আসতে পারে।”
৩১ দফার এই রূপরেখা ঘোষণার আগে মির্জা ফখরুল বলেন, “রাষ্ট্রের মালিকানা আজ জনগণের হাতে নাই। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনঃগঠন করতে হবে।”
নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসতে পারলে বর্তমান সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐক্যমতের সরকার’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণাও দেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, “উক্ত জাতীয় সরকার রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।”
মন্ত্রিসভায় ক্ষমতার ভারসাম্য, সংসদে উচ্চকক্ষ
বর্তমান সরকার সাংবিধানে যেসব সংস্কার করেছে, সেগুলো পর্যালোচনা করতে ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে চায় বিএনপি।
এর মাধ্যমে ‘বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক’ সংশোধনী বাতিল ও সংশোধন এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সাংবিধানিক সংস্কার করার কথা বলেছে তারা। সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থাও পুনঃপ্রবর্তনের কথা জানান ফখরুল।
পঞ্চম ধারায় বলা আছে, “পরপর দুই টার্মের (মেয়াদের) অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করিতে পারিবেন না।”
জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ তৈরি করতে চায় বিএনপি। সেখানে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসপন্ন ব্যক্তিদের নেওয়া হবে।
আস্থাভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী বিল এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত, এমন সব বিষয় ছাড়া সংসদে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে বিএনপি।
প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার প্রতিশ্রুতিও আছে এই রূপরেখায়। এ জন্য নির্বাহী, আইন ও বিচারবিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুসমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে।
‘রাজনৈতিক দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠে’ সব রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের কথা বলেছে বিএনপি। শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে এসব প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগের ‘কার্যকর স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করা, বিচারব্যবস্থার সংস্কারে ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন, অধঃস্থন আদালতগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানের কর্তৃত্ব সুপ্রিম কোর্টের নিকট ন্যাস্ত করা, বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসনে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ পুনঃপ্রবর্তন এবং ‘বিচারপতি নিয়োগ আইন’ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ফখরুল।
‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন” গঠন করে জনপ্রশাসন ও পুলিশে সংস্কারের কথাও উঠে এসেছে এতে। বলা হয়েছে, “মেধা, সততা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করা হইবে।”
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন পরিষেবা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে তদারকির কথাও বলেছেন বিএনপি নেতা।
‘ফিরবে’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার
রূপরেখার তৃতীয় ধারায় ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ফেরানোর প্রতিশ্রতি আছে।
“প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২” সংশোধন করার কথাও বলা হয় এতে। ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালটে ভোট নেওয়া, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংস্কার এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিলের কথাও আছে রূপরেখায়।
রিকনসিলেশন কমিশন
‘প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের’ রাজনীতির বিপরীতে সব মত ও পথের সমন্বয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারও করেন ফখরুল। এজন্য আলোচনা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছতে একটি ‘রিকনসিলেশন কমিশন’ গঠনের কথা বলেন তিনি।
গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধানে ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন, সৎ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ ‘পুনরুদ্ধার’ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, আইসিটি অ্যাক্ট ২০০৬, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর সংশোধন ও বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮সহ সব ‘কালাকানুন’ বাতিলের কথাও বলা হয়েছে রূপরেখায়।
ফখরুল বলেন, “চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাসহ সকল সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার বিচার নিশ্চিত করা হইবে।”
ফিরবে পাচার হওয়া অর্থ
এই অঙ্গীকার তুলে ধরে গত দেড় দশকের ‘অর্থ-পাচার ও দুর্নীতির’ অনুসন্ধান করে শ্বেতপত্র প্রকাশ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন ফখরুল। তিনি বলেন, পাচার করা অর্থ দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন সংস্কার এবং দুদকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগের কথাও বলা হয়েছে রূপরেখায়।
‘অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার’ নিশ্চিত করতে ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন, প্রবৃদ্ধির ‘সুষম বণ্টনের’ মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করার কথা বলা আছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইন বাতিল, কুইক রেন্টাল কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ‘দুর্নীতি’ বন্ধ, আমদানিনির্ভরতার বদলে নবায়নযোগ্য ও মিশ্র জ্বালানি-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং গ্যাস ও খনিজ সম্পদ আহরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন ফখরুল।
‘বন্ধ হবে’ বিচারবহির্ভুত হত্যা
সার্বজনীন মৌলিক মানবাধিকারের ঘোষণা অনুযায়ী দেশে মানবাধিকার বাস্তবায়ন, ‘গুম’, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ, অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানোর অঙ্গীকারও আছে এতে।
গত দেড় দশকে বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্রসফায়ারে হত্যা, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্মম শারীরিক নির্যাতনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের সুবিচার নিশ্চিত করার কথাও বলেন ফখরুল।
‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীর নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করার অঙ্গীকারও আছে এতে। পাহাড়ি ও সমতলের সব জাতি-গোষ্ঠীর অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানের কথাও বলেন ফখরুল।
বাংলাদেশের ভূখণ্ড সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার নয়
বৈদেশিক সম্পর্কের সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ার কথাও জানান ফখরুল। বলেন, সমতা, ন্যায্যতা, পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সমস্যার সমাধান হবে।
বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত করা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাইবে না।”
সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার না করার কথাও বলেন তিনি।
দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত, যুগোপযোগী করার অঙ্গীকার রয়েছে রূপরেখায়।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের তালিকা করা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কল্যাণে নীতি প্রণয়ন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘যার যার অবদানের’ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ব্যবস্থা করার কথাও বলেন ফখরুল।
মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী মজুরি, বেকার ভাতা
শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে প্রাইস ইনডেক্স বিবেচনায় নেওয়া, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা, পাট-বস্ত্র-চিনিসহ বন্ধ সব শিল্প আবার চালু, প্রবাসী কর্মীদের মর্যাদা ও কর্মের নিরাপত্তা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বৈষম্য দূর করে সুষম উন্নয়নে ‘বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণের কথা বলেছেন ফখরুল।
এক বছর অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান, বেকারত্ব দূর করতে বাস্তবসম্মত কর্মসূচি গ্রহণ, মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করার কথাও বলেন ফখরুল। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনায় নেওয়ার কথাও তিনি বলেন।
উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত, নারী ও শিশুদের জীবন মান বিকাশে যুপোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন, সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেওয়া এবং স্থানীয় সরকারে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলা আছে বিএনপির রূপরেখায়।
কৃষি জমি নষ্ট না করে শহর ও গ্রামে পরিকল্পিত আবাসন এবং পর্যায়ক্রমে দেশের সব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন নিশ্চিত করার অঙ্গীকারও আছে এতে।
শিক্ষা স্বাস্থ্যে জিডিপির ১০ শতাংশ
জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ, চাহিদাভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য, গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া, একই মানের শিক্ষা ও মাতৃভাষায় শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার কথাও বলা আছে রূপরেখায়।
‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ ও ‘বিনা চিকিৎসায় কোন মৃত্যু নয়, নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের আলোকে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করে সবার জন্য স্বাস্থ্য কার্ড চালুর অঙ্গীকারও করেন ফখরুল। জাতীয় বাজেটে জিডিপির ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতেও বরাদ্দ হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধা বঞ্চিত হত দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরো সম্প্রসারিত করা হবে।
কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সব ইউনিয়নে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন, ভর্তুকি দিয়ে হলেও শস্য বীমা, পশু বীমা, মৎস্য বীমা এবং পোল্ট্রি বীমা চালু, কৃষি জমির অকৃষি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা ইত্যাদি অঙ্গীকারও আছে বিএনপির।
সড়ক, রেল ও নৌপথের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সারা দেশে বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সমুদ্র বন্দর ও নৌবন্দর সমূহের আধুনিকায়নের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান ফখরুল।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট ও ক্ষতি মোকাবিলায় টেকসই ও কার্যকর কর্মকৌশল গ্রহণ, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বাধুনিক উপকরণ সংগ্রহ, দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা, খাল-নদী খনন ও পুনঃখনন এবং সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের ব্যবস্থা করার কথাও আছে বিএনপির রূপরেখায়।
তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতকে বৈশ্বিক মানে উন্নত করা, মহাকাশ গবেষণা এবং আণবিক শক্তি কমিশনের কার্যক্রম বাড়ানোর অঙ্গীকার আছে সেখানে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।