২০০৮ সালে প্রথম সংসদ সদস্য হওয়া আসাদুজ্জামান কামাল ঢাকা-১২ আসন থেকে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য।
Published : 06 Dec 2023, 10:56 PM
পাঁচ বছরের ব্যবধানে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ প্রায় দেড়গুণ বাড়লেও দুই কোটি টাকা ঋণ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল; আর তার কাছে নগদ টাকা রয়েছে ৮৪ লাখ টাকার বেশি।
৭ জানুয়ারির ভোটে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া তার হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে মন্ত্রীর স্ত্রী তাহমিনা খানের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় চারগুণ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা-১২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এজন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় তিনি যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তা বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
২০০৮ সালে প্রথম সংসদ সদস্য হওয়া আসাদুজ্জামান কামাল এ আসন থেকে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। পরের বার ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং পরে মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদে জয়ী হওয়ার পর থেকে বর্তমান সরকারের মেয়াদেও মন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
হলফনামা অনুযায়ী, আর্থিক দায় হিসেবে ঋণ বাবদ দুই কোটি টাকা রয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। অন্যদিকে ৮৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা নগদ টাকার বাইরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ রয়েছে তিন কোটি টাকার বেশি। অপরদিকে ১৭১ শতাংশ কৃষি জমি থাকলেও সেখান থেকে বাৎসরিক কোনো আয় নেই তার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ২০২৩ সালে হলফনামায় যে হিসাব দিয়েছেন তাতে দেখা গেছে, তার মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩৬ লাখ ৭১ হাজার ৫২ টাকা, যা ২০১৮ সালে জমা দেওয়া হলফনামায় ছিল ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭৪ হাজার ১৩৭ টাকা।
এর মধ্যে অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৫ কোট ৭৯ লাখ ১১ হাজার ৫০২ টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ৫৮৭ টাকা।
অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ টাকার পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক খাতে জমা করা অর্থ, শেয়ারবাজার, সঞ্চয়পত্র, যানবাহন, গহনা, ইলেকট্রনিক পণ্য এবং আসবাবপত্রের হিসাব ধরা হয়েছে।
কামালের নগদ অর্থ রয়েছে ৮৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৮২ লাখ টাকা, বন্ড, ঋণপত্রে ও শেয়ারে বিনিয়োগ ২৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং ২ কোটি ১ লাখ টাকা রয়েছে পোস্টাল সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানত বিনিয়োগ।
২০১৮ ও ২০২৩ সালের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জমির পরিমাণ কমে গেলেও মূল্যমানে টাকার অঙ্কে তা বেড়ে গেছে।
আসাদুজ্জামান কামালের স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৭ গুণ
২০১৮ সালের হলফনামায় তিনি দেখিয়েছিলেন তার কৃষি জমির পরিমাণ ৪৭১ দশমিক ৫ শতাংশ; অর্জনকালীন সময়ে তার আর্থিক মূল্য ছিল ৫৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫০ টাকা। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে তার কৃষি জমির পরিমাণ কমে ১৭১ শতাংশ হলেও অর্জনকালীন সময়ে এর আর্থিক মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ ১১ হাজার ৮৫০ টাকা।
২০১৮ সালের হলফনামায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রী তাহমিনা খানের নামে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মূল্য হিসাবে কোনো অর্থ না থাকলেও পাঁচ বছর পর এসে সেখানে ৪ কোটি ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা যুক্ত হয়েছে।
এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দুটি গাড়ি আছে। সংসদ সদস্য কোটায় কেনা এ দুটি গাড়ির দাম যথাক্রমে ৭৩ লাখ টাকা এবং ৮৮ লাখ ২২ হাজার টাকা। এক লাখ টাকার ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী এবং এক লাখ টাকার আসবাবপত্র আছে তার।
তার কাছে ১০ ভরি এবং স্ত্রীর কাছে ২০ ভরি স্বর্ণ থাকার তথ্য হলফনামায় দিয়েছেন তিনি।
আসাদুজ্জামান কামাল নিজের পেশা উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ী ও বর্তমানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। হলফনামা অনুযায়ী, তিনি বছরে আয় করেন ৮১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩০ টাকা। এর মধ্যে সাত লাখ ২০ হাজার টাকা বাড়ি, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে, ব্যবসা (অংশীদারী ফার্ম) থেকে ২৪ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে ১৩ লাখ টাকা, চাকুরি বা মন্ত্রী হিসেবে প্রাপ্ত বেতন ২৩ লাখ ২২ হাজার, মুক্তিযোদ্ধা ও ফরেন রেমিটেন্স হিসেবে পাওয়া ১৩ লাখ টাকা রয়েছে।
তার স্ত্রী ও সন্তানরা বার্ষিক ১ কোটি ২২ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৩ টাকা আয় করেন।
মন্ত্রীর উপর নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয়ের ১০ লাখ ৫০ টাকা এসেছে রেমিটেন্স থেকে; তবে কীভাবে রেমিটেন্স এসেছে তা উল্লেখ করা হয়নি হলফনামায়।
তার স্ত্রীর আয়ের বড় অংশ আসে অংশীদারী ফার্মের ব্যবসায় থেকে; যার পরিমাণ ১ কোটি টাকার কিছু বেশি। ব্যবসা থেকে মন্ত্রীর আয় হয় বছরে ২৪ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯৬ টাকা।