গত পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং তার স্ত্রীর।
Published : 03 Dec 2018, 06:40 PM
মন্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি প্রায় দ্বিগুণ বাড়লেও তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খানের সম্পদ বেড়েছে সাত গুণের বেশি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আসাদুজ্জামান কামাল যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তা বিশ্লেষণে এই তথ্য পাওয়া যায়।
২০০৮ সালে প্রথম সংসদ সদস্য হওয়া আসাদুজ্জামান কামাল দশম সংসদ নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং পরে মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
হলফনামায় তিনি নিজের সম্পদের মূল্যমান দেখিয়েছেন ৫ কোটি ৭২ লাখ ২৪ হাজার ১৩৭ টাকা। আর স্ত্রীর সম্পদ দেখানো হয়েছে ২ কোটি ২৪ লাখ ৯২ হাজার ৬৬৮ টাকার।
দশম সংসদ নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, তখন আসাদুজ্জামান কামালের সম্পদ ছিল তিন কোটি ১১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৬৩ টাকার। তার স্ত্রীর সম্পদ ছিল ২৮ লাখ ৮০ হাজার ১৫৬ টাকার।
দুই সময়ের তুলনা করলে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে কামালের সম্পদ বেড়েছে দুই কোটি ৬০ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৪ টাকা। কামালের স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে এক কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৫১২ টাকা। কামালের সম্পদ যেখানে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়েছে, সেখানে স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৬৮১ শতাংশ।
আসাদুজ্জামান কামাল নিজের পেশা উল্লেখ করেছেন রাজনীতি ও সমাজসেবা। তার স্ত্রী তাহমিনা খানের পেশা উল্লেখ করা হয়েছে ব্যবসা।
হলফনামা অনুযায়ী আসাদুজ্জামান কামালের কোনো দায়-দেনা নেই।
তার বার্ষিক আয় ৬৪ লাখ ৭৯ হাজার ১৪১ টাকা। স্ত্রীর আয় ৬০ লাখ ৮৫ হাজার ৪৯৬ টাকা। বাড়িভাড়া, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্রের আমানত, বেতনভাতা থেকে তাদের এ আয় হয়েছে।
আসাদুজ্জামান কামালের কোনো ব্যবসা নেই। তবে বাড়ি, দোকান, অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া হিসেবে তিনি বছরে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা পান। এছাড়া শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র থেকে সাত লাখ ৬১ হাজার ৫৬১ টাকা। মন্ত্রী হিসেবে তিনি ২৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৮০ টাকা পান। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও ফরেন রেমিটেন্স হিসেবে ৩০ লাখ ৩০ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন তিনি।
২০১৩ সালের স্ত্রী ছাড়াও নির্ভরশীলদের সম্পদের হিসাব দিয়েছিলেন আসাদুজ্জামান কামাল। তবে এবারের হলফনামায় স্ত্রী ছাড়া নির্ভরশীল অন্যদের সম্পদের হিসাব দেওয়া হয়নি।
আসাদুজ্জামান কামালের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ব্যাংকে দুই লাখ ৭০ হাজার ৬৮৫ টাকা নগদ, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১ কোটি ৪৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৬২ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার আছে ২৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭০০ টাকার। সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ আছে এক কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার ২৩৫ টাকার।
এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দুটি গাড়ি আছে। সংসদ সদস্য কোটায় কেনা দুটি গাড়ির দাম যথাক্রমে ৪১ লাখ ৭৮ হাজার ৮০৫ টাকা এবং ৭৩ লাখ টাকা। এক লাখ টাকার ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী এবং এক লাখ টাকার আসবাবপত্র আছে তার।
আসাদুজ্জামান কামালের নামে ৪৭১ দশমিক ৫ শতাংশ কৃষি জমি আছে, যার বাজারমূল্য ৫৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫০ টাকা। এছাড়া ১৮ দশমিক ৫ কাঠা অকৃষি জমির দাম দেখিয়েছেন ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিজের ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৭০০ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে হলফনামায় তথ্য দিয়েছেন তিনি।
২০১৩ সালে যে হলফনামা দিয়েছেন তাতেও জমি, ফ্ল্যাটের একই মূল্য দেখিয়েছেন আসাদুজ্জামান কামাল। সে হিসাবে তার জমি ও ফ্ল্যাটের দাম বাড়েনি।
তাহমিনা খানের স্ত্রী ব্যবসা থেকে ৪৯ লাখ ২২ হাজার ৪৮২, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্রের থেকে এক লাখ ৬৩ হাজার এবং বৈদেশিক রেমিটেন্স ও অন্যান্য খাত থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেন।
তাহমিনা খানের ব্যবসায়িক মূলধন ৮৭ লাখ ২৬ হাজার ১১৮ টাকা। বেতনভাতা পান তিনি এক লাখ ৮০ হাজার টাকা।
তার ব্যাংকে নগদ ৩৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৬ টাকা আছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১২ লাখ ৬৫ হাজার ১৭৮, বন্ড-ঋণপত্র ও শেয়ার ২৩ লাখ ১৯ হাজার ৭০০ এবং সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৩০ লাখ ৮২ হাজার ৮২৬ টাকা।
তার কোনো গাড়ি নেই; আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও জমিজমাও নেই।
২০১৩ সালের হলফনামায় আসাদুজ্জামান কামালের চার লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ ভরি এবং তার স্ত্রীর নয় লাখ টাকা মূল্যের ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল, এবারও তাই আছে।