গত ৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন করে রওশন এরশাদকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছিল তার অনুসারীরা।
Published : 20 Apr 2024, 11:24 PM
রওশন এরশাদ নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণার ৮৩ দিন পর ৮৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ৯ মার্চ জাতীয় পার্টির এই অংশের জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রওশন শনিবার সন্ধ্যায় ১৭ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কমিটির ৮৩ সদস্যের এই আংশিক তালিকায় স্বাক্ষর করেন।
পরে রাতে মহাসচিব কাজী মো. মামুনূর রশিদ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, পর্যায়ক্রমে কমিটির বাকি সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে।
কমিটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
তারা হলেন- রফিকুল হক হাফিজ (সাবেক উপ- মন্ত্রী), অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন (সাবেক সংসদ সদস্য), ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী (সাবেক সংসদ সদস্য), কারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, কে আর ইসলাম, নিগার সুলতানা রাণী, আবুল কাশেম সরকার (সাবেক সংসদ সদস্য), ইয়াহিয়া চৌধুরী (সাবেক সংসদ সদস্য), শফিকুল ইসলাম শফিক (নরসিংদী), শংকর পাল (হবিগঞ্জ), আমানত হোসেন আমানত, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, হাজী মো. ফারুক (ঢাকা), আব্দুল গাফ্ফার বিশ্বাস (খুলনা), নুরুল ইসলাম নুরু (টাঙ্গাইল), তুহিনুর রহমান-নুরু হাজী (ঢাকা)।
উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন এমএ গোফরান (লক্ষীপুর) ও এম এ কুদ্দুস খাঁন (ঝালকাঠী)।
শেখ আলমগীর হোসেন (গোপালঞ্জ), মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক (ঢাকা), ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ (জামালপুর) সাবেক সংসদ সদস্য, মো. মোক্তার হোসেন (খুলনা), হাজী নাসির সরকার (ঢাকা), আব্দুল আজিজ খাঁন (গুলশান), মোল্যা শওকত হোসেন বাবুল (খুলনা), মো. শারফুদ্দিন আহমেদ শিপু (ঢাকা), মিজানুর রহমান দুলাল (পটুয়াখালী), শাহ আলম তালুকদার (বরিশাল), মো. আব্দুল কাইয়ুম (ময়মনসিংহ), শাহ জামাল রানা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ভাইস-চেয়ারম্যান পদ পেয়েছেন।
ফকরুল আহসান শাহজাদা (বরিশাল), পীরজাদা জুবায়ের আহমেদ (বাহ্মণবাড়িয়া), শেখ মাসুক রহমান (ঢাকা), সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম তরুণ (খুলনা), সুজন দে (চট্টগ্রাম) ও এসএম হাসেমকে (ঢাকা) যুগ্ম-মহাসচিব করা হয়েছে।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শাহানাজ পারভীন (ঢাকা), মোশাররফ হোসেন (ময়মনসিংহ), এস এম মাসুদুর রহমান (খুলনা), মো. আবু সালেহ চৌধুরী (সিলেট), বিলকিস সরকার পুতুল (নরসিংদী), ফজলে ইলাহী সোহাগ (নোয়াখালী), জাফর ইকবাল নীরব (পিরোজপুর) ও শামসুল আলমের (কক্সবাজার) নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
কাওসার আহমেদ (ঢাকা), মো. মোসলেম আলী (মেহেরপুর), আবুল বাশার (মানিকগঞ্জ), নাফিজ মাহবুব (ময়মনসিংহ), সিরাজুল আরেফিন মাসুম, এম এম আমিনুল হক সেলিম হয়েছেন যুগ্ম- সাংগঠনিক সম্পাদক।
সম্পাদকমণ্ডলীতে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর (রংপুর), প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে খোরশেদ আলম খুশু (চাঁদপুর), দপ্তর সম্পাদক পদে আবুল হাসান আহমেদ জুয়েল, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে এ্যাড. এমদাদ (নড়াইল) এর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পারভেজ আলম মীর (বরিশাল), সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নাজমুল খাঁন (লালমনিরহাট), তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদ হিসেবে সাহিন আরা সুলতানা রিমা (চাপাইনবাবগঞ্জ), আইন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে সাজ্জাদ হোসেন সেনা (কুষ্টিয়া), যুব বিষয়ক সম্পাদক পদে মো. জহির উদ্দিন (ঢাকা), শিল্প বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আবুল কালাম আজাদ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা পদে সুলতানা আহমেদ লিপি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে সায়িকা হক (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদেশরিয়ত আলী তালুকদার (সুনামগঞ্জ), প্রাদেশিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আব্দুস সাত্তারের নাম এসেছে তালিকায়।
যুগ্ম- সম্পাদকমণ্ডলীতে যুগ্ম- প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আসাদ খান, যুগ্ম- কৃষি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে মেহবুব হাসান, যুগ্ম- সমবায় বিষয়ক সম্পাদক পদে চিশ্তী খায়রুল আবরার শিশির, যুগ্ম- ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে নজরুল ইসলাম মুকুল, যুগ্ম- সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে মো. তৌহিদুর রহমান খাঁন, যুগ্ম- শ্রম বিষয়ক সম্পাদক পদে হাজী মাসুম পারভেজ, যুগ্ম- এনজিও বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে এম আবু জাফর কামাল, যুগ্ম- সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে শরীফুল ইসলাম শরীফ, যুগ্ম- সাহিত্য ও কৃষ্টি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আফতাব গনি, যুগ্ম- প্রাদেশিক সম্পাদক পদে মনিরুল ইসলাম রবিনের নাম এসেছে।
এছাড়া কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য পদে রিয়াজ খান, মকবুল হোসেন মুকুল, এসএম মুর্তজ আলম বুলবুল, নাসির নেওয়াজ, আবু নাসের সিদ্দিকী, কাদের মুন্সি, আব্দুল হালিম, আহমদ আলীর (সিলেট) নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
রওশনপন্থিদের কাউন্সিল
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে নতুন করে বিভক্তি দেখা দেয়। দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধে গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন নিজে এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। তার অনুসারীদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি।
নির্বাচনের পর পার্টি থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়, যারা রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত। এরপর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ এনে ৬৭১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
সেই প্রেক্ষাপটে গত ২৮ জানুয়ারি এক মতবিনিময় সভায় রওশন নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে ‘অব্যাহতি’ দেন। তবে রওশনের ওই দাবি ‘আমলে নেননি’ জিএম কাদের বা চুন্নু।
এরমধ্যে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে জিএম কাদেরকে এবং উপনেতা হিসেবে কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে স্বীকৃতি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে দলের জাতীয় কাউন্সিল করার ঘোষণা দেন রওশন।
গত ৯ মার্চ সেই সম্মেলনে রওশন এরশাদকে আনুষ্ঠানিকভাবে পার্টির চেয়ারম্যান এবং কাজী মামুনুর রশীদকে মহাসচিব ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া কাজী ফিরোজ রশিদকে নির্বাহী চেয়ারম্যান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আল মাহগির শাদ এরশাদ, গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায়কে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয় সেদিন।
জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি অবশ্য রওশনপন্থিদের কর্মকাণ্ডকে পাত্তা না দেওয়ার কথা বলছে।
রওশনপন্থিদের কাউন্সিলের দিন কাদেরের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘‘জাতীয় পার্টির নামে সম্মেলন যেটা হয়েছে এটা গঠনতন্ত্রবিরোধী। তারা ব্র্যাকেট বন্দি দল করতে পারে। তবে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে আমরাই মূল জাতীয় পার্টি।
‘‘ওরা কী করল আমরা একে গুরুত্ব দিচ্ছি না। এই বিষয় নিয়ে কোনো কথাই আমরা বলতে চাই না। এটা ওদের ব্যাপার।”
পুরনো খবর
কাউন্সিল করে রওশনকে চেয়ারম্যান বানাল অনুসারীরা, মহাসচিব কাজী মামুন