কাউন্সিল করে রওশনকে চেয়ারম্যান বানাল অনুসারীরা, মহাসচিব কাজী মামুন

রওশনপন্থিদের জাতীয় কাউন্সিলে চেয়ারম্যান, মহাসচিব ছাড়াও নির্বাহী চেয়ারম্যান, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং কো-চেয়ারম্যান পদ পাওয়া নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2024, 11:26 AM
Updated : 9 March 2024, 11:26 AM

জাতীয় কাউন্সিলে কমিটি গঠন করে নেতৃত্ব ঠিক করেছে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদপন্থিরা। দলের এক পক্ষের এই সম্মেলনে চেয়ারম্যান হয়েছেন রওশন এরশাদ, তার সঙ্গে মহাসচিব হিসেবে কাজী মামুনুর রশীদই থাকছেন।

শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে রওশনপন্থিদের জাতীয় কাউন্সিলে চেয়ারম্যান, মহাসচিব ছাড়াও নির্বাহী চেয়ারম্যান, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং কো-চেয়ারম্যান পদ পাওয়া নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়।

কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। সম্মেলনের শুরুতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান রওশন এরশাদ। পরে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে তার নামই প্রস্তাব করা হয় এবং উপস্থিত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা দুহাত উঠিয়ে সমর্থন জানান।

এরপর দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের নাম ঘোষণা করেন।

এরমধ্যে কাজী ফিরোজ রশিদকে নির্বাহী চেয়ারম্যান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আল মাহগির শাদ এরশাদ, গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায়কে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়।

মহাসচিব হিসেবে কাজী মামুনুর রশীদের নাম ঘোষণা করেন গোলাম সারোয়ার মিলন। তখন উপস্থিত সবাই তা সমর্থন করেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে নতুন করে বিভক্তি দেখা দেয়। দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধে গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন নিজে এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। তার অনুসারীদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি।   

নির্বাচনের পর পার্টি থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়, যারা রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত। এরপর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ এনে ৬৭১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

সেই প্রেক্ষাপটে গত ২৮ জানুয়ারি এক মতবিনিময় সভায় রওশন নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে ‘অব্যাহতি’ দেন। তবে রওশনের ওই দাবি ‘আমলে নেননি’ জিএম কাদের বা চুন্নু।

এরমধ্যে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে জিএম কাদেরকে এবং উপনেতা হিসেবে কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে স্বীকৃতি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে ৯ মার্চ দলের জাতীয় কাউন্সিল করার ঘোষণা দেন রওশন।

কাউন্সিলে দেওয়া ভাষণে রওশন এরশাদ বলেন, “যদি এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হত, তাহলে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেত। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে আমরা হারিয়ে ফেলতাম। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই তার প্রতিফলন ঘটেছে।”

১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির এগিয়ে চলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এখনো টিকে আছি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর যখন একটু ঘুরে দাঁড়ালাম- তখন আমাদের দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য আদালতে দাঁড়াতে হয়েছিল।

“মহামান্য আদালতের সুবিচারে পল্লীবন্ধু এরশাদ এবং আমি রওশন এরশাদ লাঙ্গল প্রতীক জাতীয় পার্টির জন্য বরাদ্দ পেয়েছিলাম। সেই লাঙ্গল প্রতীক এখনো আমাদের জাতীয় পার্টির অনুকূলে আছে এবং আগামীতেও থাকবে ইনশা আল্লাহ।”

পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে পার্টির ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করার প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানিয়ে রওশন বলেন, “জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র চর্চার একটা নিদর্শন আমরা সৃষ্টি করতে চাই। সেই লক্ষ্যে- আমাদের সম্মেলনের বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক গঠিত গঠনতন্ত্র সংশোধন উপ-কমিটি গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব আনবে। আপনারা পাস করে দিলে তা জাতীয় পার্টির আইনে পরিণত হবে।”

রওশনপন্থি  জাতীয় পার্টির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় পুরো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটসহ মৎস্যভবন এবং শাহবাগ এলাকা। রঙ-বেরঙের পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে যায় সম্মেলনস্থল।

সড়কদ্বীপগুলোতে লাগানো হয় এরশাদ শাসনামলের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন। নির্মাণ করা হয় দ্বিতল মঞ্চ। ১২ হাজার কাউন্সিলর এবং ডেলিগেটের জন্য করা হয় বসার আয়োজন।

জাতীয় সংগীত ও জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধা। আর কাজী মামুনুর রশীদ সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন।