আওয়ামী লীগ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না: শেখ হাসিনা

তার দল মানবাধিকার সুরক্ষা করে, মানুষের অধিকারও নিশ্চিত করে, বলেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2022, 03:06 PM
Updated : 14 Dec 2022, 03:06 PM

আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন না করে ‘সুরক্ষিত’ করে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দলের আলোচনাসভায় তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ এদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না, সুরক্ষা দেয়। আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে।”

বিএনপি কত খাদ্য উৎপাদন করেছে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুধু জানে বেঁচে থাকাটাই তো মানবাধিকার না। আজকে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছি, খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছি।

“এক কোটি ৬৯ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য ছিল। আমরা আজকে চার কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করেছি। আমরা চালই উৎপাদন করছি চার কোটি চার লাখ মেট্রিক টন। গম, ভুট্টা সব আমরা উৎপাদন করছি।”

মানুষকে স্বল্প মূল্যে খাবার দেওয়ার কথা তুলে ধরে মহামারীতে বিনা পয়সায় টিকা দেওয়াও বিষয়টি আবারও মনে করিয়ে দেন সরকারপ্রধান।

বাংলাদেশে একটাও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমরা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। একটা মাত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমরা এরপরে আরও পাঁচটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি।”

‘সর্বনাশটা কী করলাম?’

শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৭৬ সালের পর থেকে সংঘাত লাগিয়ে রেখেছিল এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চুক্তি করে সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনে। যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাধা দিয়েছিল।

ভারত থেকে ৬৪ হাজার শরনার্থীকে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সমস্যা সমাধান করে, মানুষের জন্য কাজ করে।

জাতির পিতা যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর সেই দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাহলে আমরা দেশের সর্বনাশটা কী করলাম? খাদ্য উৎপাদন বাড়ায় দেশের সর্বনাশ হয়ে গেল?

“ওইদিনই পার্লামেন্টে আমার বক্তব্যের সাথে সাথে বিরোধীদল থেকে খালেদা জিয়া, সাইফুর রহমান বলে উঠল, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। বিদেশ থেকে খাদ্য সাহায্য পাওয়া যাবে না।

“অর্থাৎ তাদের নীতি হলো সারা জীবন বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি থাকবে, বিদেশ থেকে ভিক্ষা চেয়ে আনবে আর ভিক্ষার খাবার খাবে। আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াবে না। কাজেই দুঃখ তো তাদের। ওর জন্য তাদের চোখে দেশের কোনো উন্নতিই হয়নি।”

‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এটাই তাদের কষ্ট’

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিলে বিএনপি-জামাত অনেক ব্যঙ্গ করলেও তা সবাই ব্যবহার করছে বলেও অনুষ্ঠানে জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আজকে সারা বাংলাদেশে এই ডিজিটাল পদ্ধতি ছিল বলেই তো আমাদের মিটিংসহ সবই আমরা চালাতে পেরেছি। দেশটাকে চালাতে পেরেছি।

“এটাও তাদের দুঃখ যে… বাংলাদেশ এত আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে কেন- সেটাই তাদের কষ্ট।”

তিনি বলেন, “তাদের দৃষ্টিতে বাংলাদেশটার নাকি কিছুই হয়নি। এটাই তারা বলে বেড়াচ্ছে ওই কারণে। কারণ তারা লুটে খেতে পারছে না।”

বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময় দুর্নীতিতে বাংলাদেশ পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উল্লেখ করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এবং তার দুই ছেলে তারেক জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকোর দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

‘গুমের কালচার শুরু করে জিয়া’

গুম-খুন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করা বিএনপি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “এদেশে গুমের কালচার তো শুরু করেছে জিয়াউর রহমান এবং তখন যারা কারাগারে ছিল তাদের কাছে আপনারা অনেকবারই শুনেছেন একেক রাতে জিয়াউর রহমান শত শত সেনাবাহিনীর অফিসার, সৈনিক, বিমানবাহিনীর অফিসার, সৈনিকদের হত্যা করেছে। সেই সাথে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, গুম করেছে।

“শুধু তাই না… এই ফাঁসি দেওয়া, একই দিনে একই সাথে দশজন করে ফাঁসি। সেই ফাঁসি দেওয়ার পর সেই লাশ… কই, তাদের আত্মীয়-স্বজন তো পায়নি। তাদের কাছে তো পাঠানো হয়নি। সেই লাশ নিয়ে মাটি চাপা দিয়ে কোথায় লুকিয়েছে কেউ আজ পর্যন্ত বলতে পারে না। এখনও আত্নীয়-স্বজন খুঁজে বেড়ায়। কোথায় তাদের লাশ।”

দেশের এমন কোনো কারাগার নেই যেখানে ফাঁসি দেওয়া হয়নি ও ক্যান্টনমেন্টে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে তাদেরকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে; পরিবার কোনোদিন লাশ দেখতে পারেনি এবং জানেও না বলে জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “এমনও শোনা যায় সে (জিয়াউর রহমান) সবসময় কাঁটা চামচ দিয়ে খেত। খেতে খেতেই ফাইল আসে, সই করে। রাষ্ট্রপতির সই ছাড়া ফাঁসি হবে না। ফাইলে সই করে আর মানুষ খুন করে।”

জিয়া বহু মানুষকে ‘হত্যা করেছে’ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড এদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। বারবারই প্রতিবাদ করেছে। আর যারাই প্রতিবাদের সুর তুলেছে তাদেরকেই সে (জিয়াউর রহমান) খতম করে দিয়েছে। তাদেরকেই সে হত্যা করেছে।”

বিমানবাহিনীর ৫৬২ জন কর্মকর্তা ও সৈনিক, সেনাবাহিনীর দুই হাজারের বেশি মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা, সাধারণ কর্মকর্তা ও সৈনিককে জিয়াউর রহমান হত্যা করেছে বলে আলোচনাসভায় তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

‘আমার মানবাধিকার কোথায় ছিল?’

জাতির পিতাকে হত্যার পর তার পরিবারের সদস্যদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকারই ছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা খুনিদেরকে এইভাবে বিচারের হাত থেকে রেহাই দেয়, আইন করে, তাদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরষ্কৃত করে তখন মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না?

“আমি নিজে তো বলতে পারি আমার মানবাধিকার কোথায় ছিল? কেন আমি আমার বাবা-মায়ের লাশ দেখতে পারিনি? কেন আমি বাবা মায়ের খবর পাইনি? কেন আমাকে ছয় বছর দেশে আসতে দেয়নি? কেন রেহানার পাসপোর্ট জিয়াউর রহমান রিনিউ করতে দিল না?”

সেই জবাব তারা দেবে কি না প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, “জবাব তারা কার কাছে দেবে? তাদের কোন সন্ত্রাসী, কোন জঙ্গি, কোন ড্রাগ-ডিলার কারা মারা গিয়েছে তাদের মানবাধিকার নিয়ে ব্যস্ত। আর এরা যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, এরা যে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী তার কোনো ঠিকানা নেই। তার কোনো কথা নেই।”

বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএনপির কী কর্মসূচি রয়েছে জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তার মানেটা কী দাঁড়ায়? যারা সেইদিন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে ডাক্তার, সাংবাদিক- এদেরকে হত্যা করেছিল সেই নিজামী থেকে শুরু করে যাদেরকে আমরা বিচার করেছি, বিচারের রায়ও আমরা কার্যকর করেছি এদেরকেই তো খালেদা জিয়া ক্ষমতায় বসিয়েছিল।

“এদেরকেই তো জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসিয়েছিল। এদেরকেই তো মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়েছিল জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতা বিরোধীদের উপদেষ্টা…।”

তিনি বলেন, পরে এইচ এম এরশাদ এসে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিলো ও জাতির পিতার ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত খুনি ফারুককে প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যান্ডিডেটও বানাল।

‘খুনিদের মানবাধিকার রক্ষায় তারা ব্যস্ত’

শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়া এসে খুনি রশীদ, হুদা- হুদার তো ফাঁসি হয়েছে, রশীদ পাকিস্তানে পলাতক। ডালিম আর রশীদ এখনও পাকিস্তানে পলাতক।

“রাশেদ যে আমার সেজো ফুফুর বাড়িতে গিয়ে ওই চার বছরের সুকান্ত থেকে শুরু করে আমার ফুফুকে গুলি করেছে, ফুফাকে হত্যা করেছে, আমার তিন তিনজন ফুফাতো বোনকে হত্যা করেছে, ভাইকে হত্যা করেছে।

“সে এখন আমেরিকায়। বারবার তাদের কাছে আমরা অনুরোধ করছি যে ওই আসামিকে আপনারা ফেরত দেন। সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে দেয় না। কারণ খুনির মানবাধিকার রক্ষা করছে তারা। অর্থাৎ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীকে রক্ষা করছে। আর মেজর নূর যে সরাসরি ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়েছিল। সেই নূর এখন কানাডায়। কানাডা সরকারকে বারবার অনুরোধ করি। তাদের আর ফেরত দেয় না।”

বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর খুনিদের ফেরত না দেওয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “খুনিদের মানবাধিকার রক্ষা করতে তারা ব্যস্ত। তাহলে আমাদের অপরাধটা কী, যারা স্বজন হারিয়েছি, আপনজন হারিয়েছি।

“সেটা আমি জাতির কাছে জিজ্ঞাসা করি। যে বিএনপি বা এই যে জামাত এদের জন্য যারা হাপিত্তেশ করে, কান্নাকাটি করে তারা জবাব দিক।”

আলোচনাসভায় অন্যান্যর মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বক্তব্য দেন।