“কে চোখ রাঙালো, আর কে ব্যাকালো, আমরা ওটার পরোয়া করি না,” বলেন সরকারপ্রধান।
Published : 31 Oct 2023, 03:31 PM
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সব সংশয় আর অনিশ্চয়তার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “একটা কথাই বলব, নির্বাচন হবে এবং সময়মতই হবে।”
ব্রাসেলসে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে এক প্রশ্নের উত্তরে তার এ বক্তব্য আসে।
গত কিছুদিনে প্রধানমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে তার কাছে একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল- কোন বিদেশি শক্তি চোখ রাঙাচ্ছে? নির্বাচন আদৌ হবে কি না, সময়মত হবে কি না, আবার জরুরি অবস্থা আসবে কি না, এসব প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।
নির্বাচন সময়মতই হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তা উত্তরে বলেন, “কে চোখ রাঙালো, আর কে ব্যাকালো, ওটা নিয়ে আমরা পরোয়া করি না। কারণ, অনেক সংগ্রাম করেই, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করেই কিন্তু আজকে আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি।”
গণতন্ত্র থাকলে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ থাকলে দেশের উন্নতি হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “উন্নয়ন তো শুধু মোট্রো রেল আর টানেল দিয়ে না, যান না গ্রামে ঘুরে আসুন না। উন্নয়নটা আমি তৃণমূল থেকে করে দিয়েছি।”
কোন বিদেশি শক্তি চোখ রাঙাচ্ছে– এই প্রশ্ন যিনি রেখেছিলেন, তাকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কেন, আপনাকে আমার বলতে হবে কেন? আপনারা কেউ বোঝেন না?
“যারা খুন করার পরেও বলে ডায়ালগ করতে হবে! কার সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে? ট্রাম্প সাহেবের সাথে কি বাইডেন ডায়ালগ করতেছে? যেদিন ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন ডায়লগ করবে, সেদিন আমি করব।”
এরপর সাংবাদিকদের মধ্যে কিছু সময় হাসি বিনিময়ের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, “না, কার সাথে ডায়ালগ? এই খুনিদের সাথে কিসের আর? এ ধরনের কথা বলে কীভাবে?
“আমাদেরতো মারছেই, এই নিরীহ পুলিশকে যেভাবে পিটিয়ে মারল, ওইগুলি কি মানুষের জাত নাকি? ওইগুলি মানুষের জাত নাকি? আর সব ভিডিও আছে, রেডি করা আছে, আপনারা যদি চান আমি দেখাতে পারি।”
সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজনৈতিক দলগুলোর শর্তহীন সংলাপের বিষয়ে মঙ্গলবার ঢাকা যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে এক প্রশ্নে এই অবস্থান জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “যেভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে পুলিশটা হত্যা করেছে, তো ওই খুনিদের সাথে আবার কিসের বৈঠক? খুনীদের সাথে আবার কিসের আলোচনা? যারা এভাবে মানুষকে হত্যা করতে পারে, যারা আমাদের সমস্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ধ্বংস করতে পারে, তাদের সঙ্গে ডায়ালগ!
“সে বসে ডিনার খাক, সে বসে ডায়ালগ করুক। এটা আমাদের দেশ, আমরা স্বাধীনতা এনেছি রক্ত দিয়ে, কাজে আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এ কথা মনে রাখা উচিত।ওই খুনীদের সাথে ডায়ালগ, এটা আমাদের বাংলাদেশের মানুষও চাইবে না। বরং বাংলাদেশে মানুষ এখন বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে, তাদের ওই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে।”
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পর হরতাল-অবরোধের মত সহিংস কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে বিএনপি।
সংসদের বাইরে থাকা দলটির টানা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন নির্বাচন কমিশনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাষ্ট্রদূত হাস।
বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বা ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা দেওয়া, সহিংসতার মত বিষয়গুলো এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে খর্ব করে– এরকম সবকিছুই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
“গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কোনো পক্ষের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমি আশা করি, সব পক্ষ শর্তহীনভাবে সংলাপে বসে সামনে দিকে এগোবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজে নেবে।”
তার এই বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করিয়ে দেন, সংসদীয় গণতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপি এখন সংসদের বিরোধী দল নয়।
তিনি বলেন, “কার সঙ্গে সংলাপ? বিরোধী দলটা কে? সংসদীয় পদ্ধতিতে বিরোধী দল হচ্ছে, যাদের সংসদে আসন আছে। এর বাইরেরগুলো আমেরিকায়ও বিরোধী দল হিসেবে দেখে না। ট্রাম্পকে তারা কী বলবে? তারা তো তাদের বিরোধী দল। যদিও আমরা তাদের পদ্ধতিতে না।
তিনি বলেন, “এই যে মানুষগুলো হত্যা করা হল, তখন তাকে (পিটার হাস) একটি প্রশ্ন করা হল না কেন, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে? যখন ওই একটা উপনির্বাচনে একটা ঘটেছিল, সেই হিরো আলমকে কেউ মেরেছে, তখন তারা বিচার দাবি করেছিল। এখন যখন পুলিশ হত্যা করল, এতগুলি সাংবাদিককে মারল, তখন তার বিচারটা দাবি করেনি কেন, এই পর্যন্ত?”
সভা-সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি যেটা অর্জন করেছে, সেটার সুযোগ আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যেটুকু অর্জন করেছে তারা, আমরাই সুযোগ দিয়েছিলাম, সেটা তারা হারিয়েছে। এখন মানুষের কাছে তারা ঘৃণার পাত্র, দুর্নীতির পাত্র।”
২৮ অক্টোবর সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে কোনো বিবৃতি না আসার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন আপনারা, এখন তারা চুপ কেন? অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো, তারা চুপ কেন? তাদের মানবিক বোধগুলো গেল কোথায়?”
পুলিশ হত্যা ও সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় দেশের ‘বুদ্ধিজীবীরা চুপ কেন’, এমন প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সেই জীবীরা কোথায় গেল? কি, বুদ্ধিহীন হয়ে গেছে? সব বুদ্ধি সব চলে গেছে, নাকি?”