কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলটি।
Published : 21 Jul 2023, 06:48 PM
বাড়ি ভাড়ার চুক্তির কথা বলে পল্টনে তালা দেওয়া গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয় আরও ছয় মাস ব্যবহার করতে চান নুরুল হক নুররা।
এরপর তারা ওই ভবন ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র নিজেদের কার্যালয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের এক পক্ষের সভাপতি নুরুল হক নুর।
শুক্রবার বিকালে পল্টনে যে ভবনে নুরদের কার্যালয়ে সেই জামান টাওয়ারের সামনের সড়কে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওই ভবনের ছয় তলায় গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয় এখন বন্ধ। গত বৃহস্পতিবার বাড়ির মালিক সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পর থেকে সেখানে পুলিশও মোতায়েন রয়েছে।
এমন অবস্থায় সংবাদ সম্মেলনে নুর বলেন, কার্যালয় ছেড়ে দিব, তবে ছয় মাস পর। কারণ চুক্তি অনুযায়ী সেটাই আছে।
“ঢাকা শহরের যে কোনো বাসা-বাড়ির ছয় মাস চুক্তি থাকে। আমাদের সঙ্গেও ছয় মাসের চুক্তি হয়েছে। সুতরাং পুলিশ বাহিনী দিয়ে কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দিলেও আমরা ছয় মাসের আগে কার্যালয় ছাড়ব না।“
এ সময়ের পর গণঅধিকার পরিষদ নিজস্ব কার্যালয়ে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সারা দেশ থেকে অনুদান হিসেবে কয়েক লাখ টাকা গণপরিষদের নিজস্ব কার্যালয়ের জন্য জমা হয়েছে। আরও দেওয়ার জন্য অনেকে কথা দিয়েছেন।
গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ে তালা, পাহারায় পুলিশ
পুলিশকে ‘পেটুয়া বাহিনী’ আখ্যা দিয়ে তিনি অতিদ্রুত কার্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলন শেষে কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন নুররা।
তালা ঝুলিয়ে কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে কোনো মামলা করবেন কি না জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নুর বলেন, এটাতো মামলা করে সমাধান করার বিষয় না।
দল নিয়ে কোন্দলের মধ্যে বৃহস্পতিবার ঢাকার পুরানা পল্টনে প্রীতম-জামান টাওয়ারের ছয়তলায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। সেদিন নুররা তালা ভেঙে সেখানে ঢুকতে চাইলে বাধার মুখেও পড়েন। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে যায় পুলিশ।
দু্ই পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে এখন সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পল্টন মডেল থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন। শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ভবনে থাকা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে যেতে চাইলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে।
গণঅধিকার পরিষদে আমিই আহ্বায়ক, নিবন্ধন আমার নামেই হবে: রেজা কিবরিয়া
শুক্রবার বিকাল পৌনে চারটার দিকে সিদ্দিকুর রহমান নামে ওই ভবনের ১৬ তলায় থাকায় গাজী ইন্টারন্যাশনালের অফিসের এক কর্মী রুটি ও কলা নিয়ে ভবনে ঢুকতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। সিদ্দিকুর বলেন, সকাল থেকে ওই অফিসে ৫৫ জন সভা করছেন। এটি তাদের বিকালের নাস্তা। পরে ওই অফিস থেকে একজন কর্মকর্তা এসে কলা রুটিসহ সিদ্দিকুরকে নিয়ে যান।
সেখানে থাকা পুলিশের এসআই সাইদুল ইসলাম বলেন, ৪টায় নুরুল হক নুর এখানে ব্রিফিং করবেন। তাই এখন অন্য অফিসের লোকজনকে যেতে দিচ্ছি না।
এত পুলিশ মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, কার্যালয় নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় পুলিশ রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ছয় মাসের আগে কার্যালয় ছাড়ছি না। প্রয়োজনে আদালতে যাব।
চাকরিতে কোটা বাদ দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনকারীদের উদ্যোগে দুই বছর আগে গঠিত গণঅধিকার পরিষদ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া; আরেক অংশের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
কোন্দল চলার মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয় নুরদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। সেখানে গত ১০ জুলাই সম্মেলন করে নুর দলের সভাপতি হন, সাধারণ সম্পাদক হন রাশেদ।
এরপর থেকে দলের কার্যালয়ে নুরের অনুসারীরাই ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সেখানে ঢুকতে গিয়ে তারা দেখেন মালিক পক্ষ তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে বিতণ্ডার মধ্যে নুররা কার্যালয়ে ঢুকেও পড়েছিলেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তাদের বের করে দেয়। এরপর থেকে কার্যালয়টি বন্ধ রয়েছে। বাইরে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এর আগে ভাড়া বকেয়া থাকা, নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা কারণ দেখিয়ে গত ৭ জুলাই দুই দিনের মধ্যে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়তে নোটিস দিয়েছিলেন ভবনের মালিক মিয়া মশিউজ্জামান।
অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মশিউজ্জামান নিজেও গণঅধিকার পরিষদে যুক্ত ছিলেন। তখনই তিনি এই ভবন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দেন বলে নুর জানান।
তিনি বলেন, “তিনি (মসিউজ্জামান) আমাদের দলে থাকার সময়ে এই কার্যালয়টি অনুদান হিসেবে দিয়েছিলেন। এখন তিনি দল করবেন না। চুক্তি অনুযায়ী মাসিক ভাড়া নেবেন।