“অপরাধের বিচার হলে জনগণ যদি তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয় সেখানে তো আমাদের কিছু বলার নেই,” বলেন তিনি।
Published : 21 Mar 2025, 06:22 PM
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে কিনা, সেটি চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে চালানো হত্যাযজ্ঞের বিচারের পরে নির্ধারণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, “অনেক কথা উঠছে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না। যারা গণহত্যা চালালো তাদের বিচার হবে কিনা? কারা চালিয়েছে এটা কি মানুষ দেখেনি? কোন পুলিশ, কোন ওসি, কোন এসপি, কোন ডিসি এখানে ভূমিকা রেখেছে। কার নির্দেশে কার বলায় এই গণআন্দোলনে রক্ত ঘটানোর জন্য, এই গণআন্দোলন ধ্বংস করার জন্য, দমন করার জন্য কার নির্দেশ, আওয়ামী লীগের কোন নেতাদের নির্দেশ রয়েছে।
“আপনারা (সরকার) এদের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে পারলে…আওয়ামী লীগ পুরনো দল, এখন সেই দলের যারা অপরাধী, অপরাধের বিচার হলে তারপরে তারা জনগণের কাছে গিয়ে, জনগণ যদি তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয় সেখানে তো আমাদের কিছু বলার নেই।”
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখানে ফায়দাবাদ মধ্যপাড়ায় দুস্থদের ঈদসামগ্রী বিতরণের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তুমুল গণআন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দলটির শীর্ষ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেছেন। তবে বেশিরভাগেরই কোনো হদিস নেই।
শেখ হাসিনাসহ এসব নেতাকর্মীদের নামে গুম, হত্যাসহ সারা দেশে একাধিক মামলা হয়েছে। সেইসঙ্গে আন্দোলনে গণহত্যার চালানোর অভিযোগে আওয়ামী লীগকে শুরু থেকেই নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
তবে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই।
দলটির যেসব নেতার বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বাংলাদেশের আদালতে বিচারের আওতায় আনার কথা বলেন তিনি।
এর কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেইসবুকে এক পোস্টে দাবি করেন, ক্যান্টনমেন্টে সাম্প্রতিক এক বৈঠকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন হাসনাত নিজেও। তবে আওয়ামী লীগকে ফেরানোর কথায় সায় দেননি হাসনাত আব্দুল্লাহরা। ওই ফেইসবুক পোস্টের পর রাতেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়।
রিজভী বলছেন, “আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে আসবেন সে যদি অপরাধ না করে, সে যদি ছাত্র হত্যা না করে, সে যদি অর্থ লোপাট না করে, সে যদি টাকা পাচার না করে…এরকম লোক যদি নেতৃত্বে আসে, তাহলে সেই আওয়ামী লীগ কেন রাজনীতি করতে পারবে না…আমার বক্তব্য হচ্ছে এটা।”
তিনি বলেন, “কিন্তু যারা টাকা পাচার করেছে, যারা এই শিশু-কিশোর হত্যা করেছে, যারা আবু সাঈদ-মুগ্ধদের হত্যা করেছে এদের সবাইকে আমরা চিনি…তাদের বিচার হতে হবে। ২ হাজারের মত শিশু-কিশোর-তরুণ, ছাত্র-ছাত্রী, শ্রমিক-রিকশাওয়ালাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচারটা আমরা করি না কেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিই।”
শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “তিনি আল্লাহকে বিশ্বাস করতেন কিনা সন্দেহ আছে। উনার ঈশ্বর ছিল টাকা, উনার সৃষ্টিকর্তা ছিল টাকা, আজকে আমরা দেখতে পারছি। যার ঈশ্বর টাকা হয়, যার সৃষ্টিকর্তা টাকা হয়, সে কোনোদিনই ভালো কাজ করতে পারবে না।
“তাদের প্রত্যেকের বাড়িঘর ঢাকায় আছে, বিভিন্ন জায়গায় আছে তারপরেও সরকারি সম্পদ লোপাট করেছে, তারা ব্যাংক খালি করে দিয়েছে। এই যে ব্যাংক খালি করে দেওয়া, লক্ষ-কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করা, এই পাচারের মধ্যে অধিকাংশই শেখ হাসিনার আত্বীয় স্বজনরা জড়িত। তাদের পছন্দনীয় ব্যবসায়ীরা জড়িত, তাদের লোকজন জড়িত। তাদের বিচার তো নিশ্চিত করতে হবে।”
জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আসুন সবাই মিলে এসব হত্যাকারী, যারা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, যারা দেশের স্বাধীনতাকে বিক্রি করেছে, এই স্বাধীনতাকে বিক্রি করে গদি আঁকড়ে রাখার জন্য যারা শিশু বাচ্চা থেকে শুরু করে তরুণ-কিশোর ও রিকশাওয়ালা-শ্রমিকদের হত্যা করেছে, সেই বিচার নিশ্চিত করি। এসব হত্যার বিচার নিশ্চিত হলে আর কখনেও দেশে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে না।”
ঈদসামগ্রী বিতরণের অনুষ্ঠানে মোতালেব হোসেন রতনের সভাপতিত্বে মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, মহানগর উত্তর বিএনপির কফিল উদ্দিন আহমেদ, এসএম জাহাঙ্গীর, এবিএম আবদুর রাজ্জাক, রেজাউনুল হক রিয়াজ, আলী আকবর আলী বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন-