নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে এবং কোনো দাবির মুখে ভোট স্থগিত করা হবে না, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলকে বলেন তিনি।
Published : 21 Mar 2025, 12:03 AM
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পরিকল্পনা না থাকার কথা তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তবে দলটির যেসব নেতার বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বাংলাদেশের আদালতে বিচারের আওতায় আনার কথা বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) প্রেসিডেন্ট ও সিইও কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বে আসা একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
এ সাক্ষাতের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে ২০২৪ সালের গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার তিন দিন পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস প্রতিনিধি দলকে বলেন, নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং কোনো দাবির মুখে ভোট স্থগিত করা হবে না।
তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন আয়োজনের জন্য দুটি সম্ভাব্য সময়সূচি নির্ধারণ করেছে, যা পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
প্রধান উপদেষ্টা এর ব্যাখ্যায় বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো সীমিত সংস্কারের দাবি জানায় তবে নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হবে। যদি বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন হয়, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
"আমাদের নির্বাচনের সময়সূচি পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই।"
মুহাম্মদ ইউনূস আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেছেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
এক মাসের বেশি সময় ধরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।
ওই আন্দোলনের মধ্যে কয়েকশ মানুষের প্রাণ যায়, সেসব ঘটনায় হামলার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করে তার সরকারের মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হচ্ছে। জুলাইয়ের সেসব নিহতের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করারও উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
অপরদিকে আন্দোলন দমনে ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগকে অনেকে এখন ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন। সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির নেতারাও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন।
এরইমধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে গত ১৯ অগাস্ট হাই কোর্টে রিট আবেদনও হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো পরিকল্পনা না থাকার কথা তুলে ধরলেন।
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের শেষ দিকে মুহাম্মদ ইউনূস ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদারের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন।
তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রচারের বেশিরভাগই ভারতীয় সংবাধমাধ্যম থেকে ছড়ানো হচ্ছে।
আইসিজির প্রতিনিধি দলকে তিনি বলেন, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকলে, আওয়ামী লীগের নেতাদের হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে।
তিনি বলেন, "এটি এখনো আলোচনার টেবিলে রয়েছে।"
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঐকমত্য গঠন কমিশন বৃহস্পতিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। পাশাপাশি, সরকারের ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণের জন্য জুলাই সনদ চূড়ান্ত ও স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা চলছে।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা চলতি সপ্তাহে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির গ্রেপ্তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা এটিকে শরণার্থী শিবিরে স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন।
তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণকারী আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের আরও সক্রিয় যোগাযোগের ওপর জোর দেন।
এসময় ইউনূস বলেন, ঢাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং আসন্ন জাতিসংঘের বিশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়।
আলোচনাকালে আইসিজি প্রেসিডেন্ট কমফোর্ট ইরো বাংলাদেশ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার সংগঠনের সমর্থনের কথা তুলে ধরেন।