বিএনপিকে ভোটে আসতে বিদেশিরা প্রভাবিত করবে বলে ধারণা আওয়ামী লীগের মধ্যে।
Published : 10 Aug 2023, 01:07 AM
নির্দলীয় সরকার না হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়- বিএনপি এমন অবস্থান নিলেও প্রতিপক্ষ দলটি ভোটে আসবে ধরে নিয়েই আগামী নির্বাচনের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেল। বিএনপিকে ভোটের মাঠে আনার চেষ্টাও থাকবে বলে জানালেন তাদের একজন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যে ২০১১ সালে সংবিধান থেকে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দুই প্রধান রাজনৈতিক শিবিরে আবারও বিভেদের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের পর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বয়কট করেছিল বিএনপি। ভোট ঠেকানোর ঘোষণাও দিয়েছিল দলটি। তবে সেই বাধা উৎরে যায় আওয়ামী লীগ।
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করেছিল। তার চার বছর পর সংসদ থেকে পদত্যাগ করে এখন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে এক দফার আন্দোলনে তারা।
দুই দলেরই ‘এক দফা’; দিচ্ছে কোন বার্তা?
মানুষ নেমেছে, এবার ক্ষমতা ছাড়তে হবে: ফখরুল
প্রমাণিত হল, সুষ্ঠু ভোটে বিএনপিই বাধা: কাদের
উন্নয়নশীল দেশ চাইলে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে: শেখ হাসিনা
বিএনপির এই আন্দোলনের মধ্যেই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সারা দেশের নেতাদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা করে নানা নির্দেশনাও দিয়েছেন।
বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা করেই নির্বাচনের দিকে আওয়ামী লীগ এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী দিনে আওয়ামী লীগের মূল টার্গেট হল সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। এই নির্বাচন করতে যারা বাধা দেবে, তাদের প্রতিহত করে সুন্দর নির্বাচন এই দেশের জনগণকে উপহার দিতে চাই আমরা।”
বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাতে তাদেরই ক্ষতি বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ এখন নির্বাচনমুখী, আর বিএনপি বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টায় আছে, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে বাংলাদেশের জনগণ চিরদিনের জন্য বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।”
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে নানক কঠোর বার্তা দিলেও সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কামরুল ইসলাম জানালেন, দলটিকে ভোটে আনতে সরকারি দল হিসেবে তাদের চেষ্টা থাকবে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কোনো সময়ই এককভাবে নির্বাচনে জয়লাভ করতে চাই না। ফাঁকা মাঠে আমরা খেলতে চাই না। আমরা চাই, তারা নির্বাচনে আসুক, তাহলে নির্বাচনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।
“সব দলের অংশগ্রহণ আগামী নির্বাচনে থাকুক, এটা আমরা চাই। সেই কারণে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা আমরা করব।”
তবে বিএনপি ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বর্জনের করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে মোকাবেলা কা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি বলে বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও ভোটের ফল নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন উঠেছিল।
বরাবরের মতো আগামী নির্বাচন ঘিরে পশ্চিমা কূটনীতিকদের তৎপরতা বেড়েছে; অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাওয়ার কথা তুলে ধরে তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের সঙ্গেই বৈঠক করছে। বিএনপি এসব বৈঠকে জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে তারা বিশ্বাস করে না।
অন্যদিকে নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ। এখন বিএনপিও যদি অনড় থাকে, তাহলে কি ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন?
এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না, এটা রাজনীতির শেষ কথা নয়।”
বিদেশিদের উপর ‘ভর করে’ বিএনপি চলছে দাবি করে তিনি বলেন, ওই বিদেশিরাই বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে ভূমিকা রাখবে বলে তারা মনে করেন।
“যাদের উপর ভর করে বিএনপি এগোচ্ছে, তারা সম্প্রতি বাংলাদেশের সংবিধান, সকল নির্বাচনী আইন, বিধি পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে নির্বাচন পরিচালনার মুখ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনকালীন সরকার নয়।
“তারা এখন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেন-দরবার করছেন। দেন-দরবার শেষ হলেই বিএনপির মুরব্বীরা তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের আদেশ দেবেন। সুতরাং নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার, তিনি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।”
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার কোনো সুযোগ হবে না।”
ভোটে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ বিএনপিকে মোকাবেলায় গত এক যুগে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া উন্নয়নকাজগুলো জনগণের সামনে এখন থেকে তুলে ধরা পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
রোববারের বর্ধিত সভায় তিনি বলেন, “প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য আওয়ামী লীগই কাজ করেছে। আগে অন্য কেউ কোনোদিন মানুষের কথা ভাবেওনি, কিছু করেওনি। আমরা যে উন্নয়ন করেছি, পরিবর্তন এনেছি, সেই তথ্যগুলো আপনারা মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন।”
ভোটে মানুষের মন জয়ে সেটাই এখন আওয়ামী লীগের কৌশল বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগের আগামী দিনের পরিকল্পনা পরিষ্কার, একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবারও জয় পেয়ে এই দেশের জনগণের জন্য দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
“আমরা উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিতে জনগণের ভোটের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় আসব এবং দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব।”
একই কথা বলেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াও। তার ভাষ্যে, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারলে ভোটারদের সাড়াও পাওয়া যাবে।
“আমাদের টার্গেট হল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রূপরেখা অনুযায়ী বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করা, একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করা। আর এটা বাস্তবায়ন করতে সংবিধানসম্মতভাবে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাই আমাদের টার্গেট।”