“আওয়ামী লীগ ২৯ তারিখের গুগলিতে পুরো বোল্ড আউট .... বুঝতেই পারেনি কোন দিক দিয়ে বল কোথায় যায়?”
Published : 31 Jul 2023, 09:25 PM
বিএনপির কর্মসূচিতে জনসমর্থন ক্রমেই বাড়ছে দাবি করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ আর কোনোভাবেই ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
সোমবার বিকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশে একথা বলেন তিনি। অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা-মামলা-গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি ডেকেছিল দলটি।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে নামা বিএনপির মহাসচিব সমাবেশে বলেছেন, অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অচিরেই নতুন কর্মসূচি দেবেন তারা।
গত শুক্রবার নয়া পল্টনে সমাবেশের পর শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। সেই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ১৩টি মামলা হয়, গ্রেপ্তার করা হয় কয়েকশ’ জনকে।
সমাবেশে ফখরুল বলেন, “এই সরকারের পায়ের তলায় মাটি নাই, এই সরকার এখন এত ভীত, এত সন্ত্রস্ত যে তারা একটা প্রোগ্রাম থেকে ১২শ/১৩শ লোককে গ্রেপ্তার করেছে, মামলা করেছে, আহত করেছে।
“এইভাবে ১৪/১৫ বছর করে কি আটকানো গেছে? ২৮ তারিখে, ২৯ তারিখে দেখেছেন, মানুষ কীভাবে নেমে এসেছে। এই মানুষের ঢল থামান যাবে না, যত চেষ্টা করুন থামান যাবে না। আপনাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে।”
ফখরুল সমাবেশে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “গুগলি বোঝেন? গুগলি বলে বোল্ড আউট হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ২৯ তারিখের গুগলিতে পুরো বোল্ড আউট।
“আওয়ামী লীগ বুঝতেই পারেনি কোন দিক দিয়ে বল কোথায় যায়? যে লক্ষ লক্ষ মানুষ ২৮ তারিখে সমাবেশে আসল, এই অবৈধ সরকারের পুলিশ ২৭ তারিখে করতে দেবে না। ঠিক আছে ২৮ তারিখে করব। ২৮ তারিখ দেখলো লক্ষ লক্ষ মানুষ। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, সবাই দেখেছে, সকলের একটাই কথা ‘গদি ছাড়ো’।”
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আজকে সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ভয় পাবেন না’। তাহলে ভয় পাচ্ছেন। যে অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন ১৪/১৫ ধরে করেছেন, ৬‘শ মানুষকে গুম করেছেন, বিনা বিচারে হত্যা করেছেন, লক্ষ লক্ষ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন, অবশ্যই ভয় পেতে হবে।
“তারপরও বলি, এখনও সময় আছে, জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে বাধা দেবেন না। এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করছি। এভাবে আমরা এগিয়ে যাব। এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অবশ্যই আমরা বিজয় অর্জন করব।”
কারা কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “পরিষ্কার করে বলতে চাই কারা কর্তৃপক্ষকে, কোনো আসামিকে অন্যায়ভাবে যদি ব্যবহার করা হয়, সমস্ত হিসাব-নিকাশ জনগণ করবে।”
কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা অতি শিগগিরই সমস্ত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একদফা আন্দোলনের কর্মসূচি দেব।
“তার আগে সরকারকে বলতে চাই, যাদেরকে গ্রেপ্তার করেছেন, তাদেরকে মুক্তি দিন এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।”
‘বিদেশ থেকে ভাড়া করে লোক আনছে’
নির্বাচন পর্যবক্ষেক হিসেবে একদিন আগে যারা ইসিতে গিয়েছিলেন, তাদের সরকারের ‘ভাড়া করা লোক’ বলে আখ্যায়িত করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “কয়েকটা লোককে বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছে। তার মধ্যে একেবারে আমেরিকার লোক! উনি না কি কোন ফোরামের! সে আবার ইলেকশন কমিশনে গিয়ে বক্তৃতা করে, প্রেসকে বলে যে, এখানে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট সিস্টেম চলবে না। বাহ রে বাহ! তুমি কে ভাই?
“ওকে এরা নিয়ে এসেছে, টাকা দিয়ে ভাড়া করে নিয়ে এসেছে। এটা গতবারও নিয়ে এসেছিল। কত দূর্বল হয়ে গেছে এই ধরনের নামহীন লোক নিয়ে এসে বলতে হচ্ছে কেয়ারটেকার নয়, তাদের সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি দেশে আজ ডান-বাম নির্বিশেষ সব দলের বলে দাবি করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “বারবার একই কায়দা করবে, এদেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে তুমি নিয়ে যাবে… এটা আর হবে না। পরিষ্কার কথা, বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এবার আর ধান খাওয়া হবে না।মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সারা বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।”
‘নাটক করে লাভ নেই’
গত ২৯ জুলাই জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের ঘটনা তুলে ধরে সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, “ঔষধ খাইয়ে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। হঠাৎ করে দেখি এই পরিস্থিতি। আমার সাথে কারও কোনো কথা হয় নাই। ঘুমিয়েছিলাম।
“গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে খাওয়ানোর নামে নাটক দেখিয়েছে, আমার নামে নাটক দেখিয়েছে। আমি বলতে চাই, নাটক করে লাভ নাই। শেখ হাসিনা তোমাকে যেতেই হবে, পদত্যাগ করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতেই হবে। ”
সেই প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “কত বড় ব্ল্যাকমেইলার! জনগণের সাথে যাদের সম্পর্ক থাকে না, তারাই এই ধরনের ব্ল্যাকমেইল করে, তারাই এই ধরনের গল্প তৈরি করে।
“এদেশের মানুষ কি এই গল্প খেয়েছে? তাতে কি গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ছোট হয়ে গেছে? আমানউল্লাহ আমান ছোট হয়ে গেছে? ছোট হয়েছ তোমরা, যারা এই ধরনের নিকৃষ্টতম নাটক তৈরি করেছ।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “গয়েশ্বচর চন্দ্র রায়কে সাপের মতো মারা হয়েছে, নারকীয় কায়দায় মারা হয়েছে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান সিনিয়র সিটিজেন। তাদেরকে নিয়ে যে নাটক করা হল!”
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “২৯ তারিখে যারা বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করেছে, এই আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশের যৌথ হামলা, আমি স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, সেটা আর চলতে দেওয়া হবে না।”
সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যাদের এখনও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে, তাদের প্রতি বার্তা দিচ্ছি, বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও ভোটাধিকার আদায়ের জন্য যারা রাস্তায় নেমেছে, তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। দেশের ভেতরেও বিপদে পড়বেন, দেশের বাইরেও বিপদে পড়বেন।”
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এই সমাবেশে চারটি খোলা ট্রাককে একত্রিত করে তৈরি করা হয় মঞ্চ। তাতে বসে বক্তব্য দেন নেতারা।
ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরেও এই কর্মসূচি একযোগ পালিত হয়।
ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে এই সমাবেশে যোগ দেন।
সমাবেশ ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুই ফটক ও রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, মৎস্য ভবন, শাহবাগ মোড়ে পুলিশ মোতায়েন ছিল। রাখা ছিল সাজোঁয়া যান, জলকামানের গাড়ি, প্রিজন ভ্যান।
মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রফিকুল ইসলাম, কামরুজ্জামান রতন, নাসির উদ্দিন অসীম, রকিবুল ইসলাম বকুল, মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা বক্তব্য রাখেন।
যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, ড্যাবের অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণও বক্তব্য দেন।
সমাবেশে আফরোজা আব্বাস, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।