ঘটনাবহুল দিনে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
Published : 06 Aug 2024, 02:06 AM
টানা সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তুমুল গণআন্দোলনের মধ্যে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন; ঢাকার রাজপথ ছাত্র-জনতার দখলের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা এসেছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৬০ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেওয়ার পর দেশজুড়ে সংঘাত আর তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যুর মধ্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হল।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনার কথা বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
সোমবার রাত সোয়া ১১টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচিত করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করা হবে।”
এর আগে বিকাল ৪টার দিকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই সংবাদমাধ্যমে খবর আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়েছেন। তার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও রয়েছেন। তারা গেছেন ভারতের আগরতলায়।
পরে সেখান থেকে সন্ধ্যায় দিল্লি লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্ডন এয়ারবেসে নেমেছে শেখ হাসিনাকে বহনকারী সামরিক বিমান।
এনডিটিভি লিখেছে, তিনি শিগগিরই লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বলেও খবর এসেছে ভারতের ইংরেজি দৈনিক হিন্দুর প্রতিবেদনে।
এদিকে সর্বাত্মক অসহযোগের মধ্যে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া জনতা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনও দখল করে নিয়েছেন। সেখানে তাদের উন্মত্ত উল্লাসের দৃশ্য মনে করিয়ে দিয়েছে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখল করে জনতার উল্লাসের স্মৃতি।
আর ঢাকার পথে পথে জনতার উচ্ছ্বাস আর সেনা সদস্যদের সঙ্গে তাদের হাত মেলানোর দৃশ্য ১৯৯৬ সালের মার্চে প্রবল আন্দোলনের মুখে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পদত্যাগের পরের পরিস্থিতিও স্মৃতিতে ফিরিয়ে এনেছে।
এমন ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান।
তিনি বলেছেন, প্রতিটি হত্যা, অবিচারের বিচার হবে। সবার চেষ্টায় দেশে শান্তি ফিরে আসবে।
যেভাবে পতন
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্রটি হাই কোর্ট বাতিল করার প্রতিক্রিয়ায়।
৫ জুন হাই কোর্টে প্রজ্ঞাপন বাতিলের পর প্রথমে ছোট পরিসরে ক্যাম্পাসে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। ১ জুলাই মাঠে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে তাদের টানা কর্মসূচির মধ্যে সরকারও হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে, ফলে সেই আদেশ স্থগিত হয়ে যায়।
পরিস্থিতি পাল্টে যায় ১৪ জুলাই। সেদিন চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নে বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কোটা পাবে না তো কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?”
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল বের হয় ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার’। কিছুক্ষণ পর সেই স্লোগান পাল্টে বলা হয়, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।
সেই রাতেই ছাত্রলীগ মিছিল বের করে, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি।’
পরদিন সকালে ওবায়দুল কাদের এক বক্তব্যে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঔদ্ধত্বের জবাব দেবে ছাত্রলীগ।”
পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন ১৬ জুলাই সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।
সেদিন সংঘর্ষে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে ছাত্রদল নেতাসহ তিনজন, ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ছাত্রলীগ কর্মী ও এক হকার এবং রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) গুলিতে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। খালি হাত প্রসারিত করে পুলিশের সামনে দাঁড়ানো রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের নিহত হওয়ার ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলন-সংঘাতের মধ্যে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় ১৬ জুলাই। পরদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার বিশ্বাস শিক্ষার্থীরা আদালতে ন্যায়বিচার পাবে।
তবে পরের দিন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ডাক আসে শিক্ষার্থীদের তরফে। সেদিন ঢাকার বাড্ডা ও উত্তরায় সংঘাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
দুপুরের পর রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হতে থাকে। পরের তিন দিন ধরে চলে সংঘর্ষ, প্রাণহানি ঘটে দুই শতাধিক মানুষের।
পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কখনো ৮ দফা, কখনো ৯ দফা দাবি জানানো হয়। ঘটনার পরম্পরায় ৩ অগাস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবি জানানো হয়।
পরদিন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে সারাদেশে পুলিশসহ শখানেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ওইদিন সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফে সোমবার ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সোমবার বেলা ১১টার পর থেকে লাখো জনতা ঢাকার শাহবাগসহ বিভিন্ন অংশে প্রবেশ করতে শুরু করে। এরইমধ্যে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।
ফের নির্বাসন
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়। তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার কর্মসূত্রে জার্মানিতে ছিলেন শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা গিয়েছিলেন বোনের কাছে বেড়াতে।
দেশে স্বজনদের হারিয়ে এরপর নির্বাসিত জীবন শুরু হয় শেখ হাসিনার, আশ্রয় পান ভারতে। ছন্নছাড়া আওয়ামী লীগকে এক করতে ১৯৮১ সালে দলের ত্রয়োদশ কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেন তিনি।
১৯৯৬ সালে ভোটে জিতে শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর আবারও বিরোধীদলে যান শেখ হাসিনা।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর টানা সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করেন।
এর পরের তিন নির্বাচনে নানা বিতর্কের মধ্যেও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন শেখ হাসিনা। এবার গণআন্দোলনের মধ্যে তাকে পদ ও দেশ ছাড়তে হল।
দেশ ছেড়ে যাওয়া শেখ হাসিনা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
“এত পরিশ্রমের পরও অল্প কিছু মানুষের এমন আন্দোলন দেখে তিনি যার পর নাই হতাশ,” বিবিসি নিউজআওয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের উদ্যোগ
পৌনে ৪টার দিকে সেনা সদরে জনগণের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কথা জানানোর সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনার ঘোষণা দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি। পরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা জানান।
রাতে বঙ্গভবনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধান, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন।
এরপর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।
“প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার সৃষ্ট প্রেক্ষিতে তিন বাহিনীর প্রধান, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা হয়।”
তিনি বলেন, “সভায় জরুরিভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সকল রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।”
তবে নানা পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকারের প্রস্তাবনা বা রূপরেখা ঘোষণা করা হবে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, “ছাত্র-নাগরিকের সমর্থিত কিংবা প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া আমরা কোনো ধরনের সরকারকে সমর্থন করব না। সেটা সেনা সমর্থিত সরকার হতে পারে কিংবা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার হতে পারে। এমন সরকারকে ছাত্র-জনতা গ্রহণ করবে না।”
ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আটকসহ সকল বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এছাড়া আহতদের সুচিকিৎসার জন্য সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সভায় বৈঠকে সর্বসম্মতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বক্তব্যে তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থানকে স্বাভাবিক করতে ও লুটপাট কিংবা ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডকে বন্ধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদকে রক্ষা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করছি। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”
দেশের অর্থনীতি, কলকারখানা ও প্রশাসন চালু রাখার লক্ষ্যে সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, “ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া হত্যা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকে দেশের সব অফিস আদালত স্বাভাবিক সময়ে চলবে। রাষ্ট্রপতি দেশকে বাঁচাতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
একদিকে উল্লাস, অন্যদিকে হত্যা-নৈরাজ্য
প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর উল্লাসে ফেটে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। এর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে হত্যা, বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং একের পর এক থানায় হামলায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংসদ ভবনে হাজারো জনতা ঢুকে লুটপাট চালিয়েছে।
ঢাকা ও দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও এমপিদের বাসায় হামলা হয়েছে। পুলিশ হত্যার ঘটনাও ঘটে। এদিন শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছে ৩৫ লাশ।
এমন হত্যা ও নৈরাজ্যে উদ্বিগ্ন শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, মানবাধিকারকর্মীসহ বিশিষ্টজনরা। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন তারা। তবে নতুন পরিবর্তনকে বিজয় হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।
সোমবারের দুপুরের পর থেকে গণভবন, সংসদ ভবনসহ বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় লুটপাট। এসময় বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়ি, আওয়ামী লীগের একাধিক কার্যালয়, দেশের বিভিন্ন থানাসহ একাধিক স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়।ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতাকর্মীর বাসাবাড়িতে হামলা, পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটে।
এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাব্বির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, বাংলাদেশের সামনে আইনগত জটিলতার একটি সংকটকাল চলছে।
তিনি বলছেন, যে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আলোচনা চলছে তা সংবিধানে নাই। ফলে এটি কিভাবে সামনে এগোবে, তা দেখতে হবে।
চলমান নৈরাজ্যে মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির 'অত্যন্ত ক্ষুব্দ, মর্মাহত ও ভীত'।তিনি বলেছেন, সেনাপ্রধান তার উপর আস্থা রাখতে বললেও চলমান পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
"শুধু ঢাকার কিছু জায়গায় তারা আছে। বাকিটা তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই বা নিয়ন্ত্রণ করছে না। তাহলে তাদের রাখার দরকার কি? দেশজুড়ে একটা ভয়াবহ অবস্থা চলছে।"