“ভারতের সঙ্গে রামপালসহ বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর যেসব চুক্তি রয়েছে, সেগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো,” বলেন তিনি।
Published : 04 Dec 2024, 11:09 PM
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সংলাপে দেশের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা আসার কথা বলেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
বুধবার সন্ধ্যায় সংলাপ শেষে আলোচনার বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা বলেন, “এই সভার মূল সুর ছিল, আমাদের মধ্যে মত-পথ-আদর্শের ভিন্নতা থাকবে, আমাদের রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকবে, অবস্থার ভিন্নতা থাকবে; কিন্তু দেশ, সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্বের প্রশ্নে আমরা সবাই এক।”
এর আগে বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা ‘নতুন বাংলাদেশকে’ মুছে ফেলতে দেশে-বিদেশে ‘কল্পকাহিনির’ প্রচার ঠেকাতে সবগুলো দলকে এক হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমরা এখনও সেই জাতি, যে জাতি ৫ আগস্ট থেকে যাত্রা করেছিলাম, ‘স্বৈরাচারী’ সরকারকে বিদায় দিয়ে। সেই জাতি এখনও সজাগ আছে মজবুত আছে।”
এই ‘ঐক্যের’ বিষয়টি পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করা হয়েছিল বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।
“অগাস্টের ৫ তারিখে যে উত্তেজনা এবং শক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আমার শত্রুর মোকাবিলা করেছি; আমাদের ছাত্র-জনতা বুক পেতে দিয়েছিল, জীবন দিয়েছিল; সে লক্ষ্যে কোথাও কোনো চিড় ধরে নাই, ফাটল ধরে নাই “
পরে সংলাপ শেষে আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয় তুলে ধরেন। অংশ নেওয়া দলগুলোর নেতারাও সাংবাদিকদের কাছে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠায় একমত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
আসিফ নজরুল বলেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার এবং তাদের দোসররা বাদে যত রাজনৈতিক দল আছে তাদের সবাই উপস্থিত ছিল।
“নানা মত পথ আদর্শের ভিন্নতা ছিল। কিন্তু সবাই একত্রে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন এবং ঐকমত্য জানিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “সবার উপরে দেশ—এটা থেকে আমরা কখনো বিচ্যুত হব না। বাংলাদেশকে দুর্বল, নতজানু ও শক্তিহীন ভাবার কোনো অবকাশ নেই।''
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, “ভারতে বাংলাদেশ বিরোধী বিভিন্ন তৎপরতা, বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা, বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ-এসবের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।”
ভারতে এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের যে আত্মমর্যাদাশীল ও সাহসী ভূমিকা সেটির প্রশংসা করা হয়েছে এবং সরকারের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে বলে তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “একইসঙ্গে ভারতের এইসব প্রচারণার বিরুদ্ধে সরকারকে আরও শক্তিশালীভাবে এবং আরও বেগবানভাবে এটাকে ‘অ্যাড্রেস’ করার কথা বলা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনে আমাদের প্রবাসী ও বন্ধু রাষ্ট্রের সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংস্থার সাংবাদিকদের দেশে ডেকে নিয়ে আসা-এ ধরনের নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
“আমাদের যোগাযোগ দক্ষতা এবং আন্তর্জাতিকভাবে আইনি দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
আসিফ নজরুল বলেন, “বাংলাদেশের প্রতি ভারতের যে অর্থনৈতিক নিপীড়ন, সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানোর চেষ্টা, সেটার নিন্দা জানানো হয়েছে। ভারতকে বাংলাদেশের প্রতি মর্যাদাশীল ও সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।”
সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আসা মতামত তুলে ধরে তিনি বলেন, “ভারত বাংলাদেশবিরোধী যে বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব সম্প্রদায়ের ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যে কোনো উস্কানির মুখে অটুট রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “সবাই একটা কথা বলেছেন, আমাদের আর শক্তিহীন, দুর্বল, নতজানু ভাবার কোনোরকম কোনো অবকাশ নেই। যেকোনো ধরনের অপপ্রচারণা ও উসকানির বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং আমাদের ঐক্য অটুট রাখব।
“আমরা সাহসী থাকব এবং ভবিষ্যতে যেকোনো প্রচারণা এলে, উসকানি এলে আমরা আমাদের ঐক্যকে আরও বেগবান দেখানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।”
সংলাপে গত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনামলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যত চুক্তি হয়েছে তা প্রকাশে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আসা দাবির বিষয়টি তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা বলেন, “একই সঙ্গে রামপালসহ বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর যেসব চুক্তি রয়েছে, সেগুলো বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।”
এছাড়া গোটা জাতি যে ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে সেই বার্তা দিতে দলগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব আসার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সবাই মিলে একটা সমাবেশ করতে পারে কি না, সবাই মিলে পলিটিক্যাল একটা কাউন্সিল করতে পারে কি না, নিরাপত্তা কাউন্সিল করতে পারে কি না, এ ধরনের প্রস্তাব হয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টার ডাকা সংলাপে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) নেতারা যোগ দেন।
আরও পড়ুন