“এই শিক্ষক আমাদের, এই ছাত্র আমাদের, এই শ্রমিক আমাদের, এই দেশের কৃষক আমাদের, এই দেশের জনগণ আমাদের… তাদের প্রতিটি আন্দোলনে আমরা আছি, থাকব,” বলেন জোনায়েদ সাকি।
Published : 05 Jul 2024, 04:47 PM
সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং কোটাবিরোধীদের চলমান দুই আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’।
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে মঞ্চের সমন্বয়কারী গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “সরকার এক মরণ খেলায় নেমেছে। মানুষকে বন্দি করবার জন্য হত্যা করছে, গুম করছে, দেশ ধবংস করছে… ক্ষমতা তারা ছাড়বে না। এই যে ছাত্র-ছাত্রীরা নেমেছে কোটা সংস্কারের জন্য, এই যে শিক্ষকরা আন্দোলন নেমেছেন। এসব আন্দোলন ফুঁসে উঠছে বলে এখন আবার ছাত্রলীগের গুণ্ডা বাহিনী, হেলমেট বাহিনী হলে হলে পাহারাদার বসিয়েছে এবং আন্দোলনটাকে দমনপীড়ন করে ধবংস করতে চাইছে।”
সাকি বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সমস্ত আন্দোলন আমাদের। এই ছাত্রদের আন্দোলনে বিরোধী দল কোনো ষড়যন্ত্র করছে না। আমরা স্পষ্টভাবে ছাত্রদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাই, শিক্ষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাই। এই শিক্ষক আমাদের, এই ছাত্র আমাদের, এই শ্রমিক আমাদের, এই দেশের কৃষক আমাদের, এই দেশের জনগণ আমাদের… তাদের প্রতিটি আন্দোলনে আমরা আছি, থাকব।”
সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য ‘প্রত্যয়’ নামে একটি স্কিম চালু করেছে সরকার। কিন্তু তাতে যুক্ত হলে অবসরপরবর্তী আর্থিক সুবিধা কমে যাওয়ার শঙ্কায় আন্দোলন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা।
অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
সাকি বলেন, “এই সব আন্দোলন একসূত্রে গ্রথিত হয় আপনার (শেখ হাসিনা) মসনদ, আপনার গদি, তখতে- তাউস থেকে গলায় গামছা বেঁধে আপনাদেরকে নামিয়ে দেব… সেই দিন আসছে। নতুন করে প্রস্তুতি নিন।
“সমস্ত বিরোধী দলকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করে গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই সরকারের পতন ঘটাব, তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। গণতন্ত্র মঞ্চ লড়বে, সেই লড়াইয়ে আপনারা যোগ দেবেন।”
গণতন্ত্র মঞ্চে যুক্ত সব দলের নেতারাই সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্পাদিত বিভিন্ন সমঝোতা স্মারকের বিরোধিতায় গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল পুরানা পল্টনে মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
‘এই সরকারের সাথে কোনো আপস নয়’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “সরকারের একটাই লক্ষ্য ক্ষমতায় থাকবে যে কোনো প্রকারে, যে কোনোভাবে। গুণ্ডবাহিনী লাগবে… আওয়ামী গুণ্ডা দিয়ে চলে না। অতএব পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী বানাচ্ছে। সেজন্যই বেনজীর (সাবেক পুলিশ প্রধান) একের পর এক সম্পত্তি দখল করেছে, হিন্দু-মুসলমান মানে নাই, দেখেনি কেউ এতোগুলো বছর ধরে, তখন চুপচাপ ছিলেন।
“এখন ভদ্রতা করেন, ফোরটোয়েন্টি করেন, সংসদের মধ্যে বক্তৃতা করে বলেন, আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ শুরু করতে চাই, কোনো দুর্নীতি আমি সহ্য করব না।”
মান্না বলেন, “এসব কিছুর প্রেক্ষিতে আমরা একটাই কথা বলতে চাই, আমরা অনেক দিন ধরে বলছি, এই সরকারের সাথে আমাদের কোনো আপস হবে না। এই সরকারকে আমরা কোনো পারমিশন দেওয়া, তাদেরকে কোনো অনুমোদন দেব না। এই সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।”
তিনি বলেন, “মাঝে-মধ্যে অনেকে বলেন, ‘অনেক দিন ধরে লড়াই করছেন পারলেন না তো’। আমি বলি, কাল পারিনি, আজ পারব, আজ পারিনি, কাল পারব… লড়াইটা চলবে যতদিন পর্যন্ত তাদের পরাস্ত করতে না পারি।”
‘ট্রানজিটে ইনকাম নাই’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “দুঃখের বিষয় হল, এখানে যা কিছু বলেন না কেন, সরকারের কানে তো বাতাস যাবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ট্রানজিট দিয়ে কী অন্যায় করলাম?’ আমি ওইরকম করে যদি পাল্টা প্রশ্ন করি, ট্রানজিট দিয়ে কী পেলেন?
“আগে বলা হয়েছিল, আমাদের, ট্রানজিট দিলে অনেক টাকা-পয়সা পাওয়া যাবে, ওরা (ভারত) মাশুল দেবে, ট্রানজিট ফি দেবে, আমাদের দেশ সেই টাকায় সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক অন্যান্য উন্নত দেশ হয়ে যাবে। বহুবার আমরা জানতে চেয়েছি, এই পর্যন্ত ট্রানজিট খাতে আমাদের ইনকাম কত? জবাব নাই। বাজেটটা পুরো পড়ে দেখেন, আমাদের সরকার কত ইনকাম করছে, তার মধ্যে ট্রানজিটের মাশুলের কথা নাই।”
তিনি বলেন, “এবার যেটা করল, সেটা আপনি আপনার নিজের দেশকে বিপদে ফেললেন। সরকার তো স্বীকার করে না, বলে না। সংসদের মধ্যে বিদেশের সাথে সম্পাদিত চুক্তি বা মেমোরেন্ডাম (সমঝোতা স্মারক) এটা উপস্থাপনের নিয়ম আছে। আপনারা সেটা উপস্থাপন কখনো করেননি। আমরা পরিপূর্ণভাবে জানিই না, কী কী চুক্তি, বিবরণগুলো কী?”
‘বাংলাদেশের লাভটা কী’
ভারতের সঙ্গে যেসব সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের কী লাভ, সেই প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকও।
সরকারপ্রধানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “এর আগে আপনি ট্রানজিট দিয়েছেন, করিডোর দিয়েছেন। সেখানে আমি প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট জিজ্ঞেস করতে চাই, আপনি যে ট্রানজিট-করিডোর দিয়েছেন সেখানে বাংলাদেশের লাভের জায়গাটা কী? আমাদের জাতীয় স্বার্থটা কী? কোন কিছু বলতে পারবেন?
“সরকারের কোনো মন্ত্রী, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি বলতে পারবেন এই পর্যন্ত ট্রানজিট বা করিডোর দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে কীভাবে লাভবান হয়েছে? বাণিজ্যিকভাবে কীভাবে লাভবান হয়েছে, নিরাপত্তার দিক থেকে কীভাবে লাভবান হয়েছে? কোনোভাবেই বাংলাদেশ লাভবান হয় নাই। রবং আপনার অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেছেন, ট্রানজিট বা করিডোরের জন্য যদি টাকা চাই, সেটা নাকি অসভ্যতা হবে। এই হচ্ছে সরকারের নমুনা। এসবের পরও এবার আপনি ভারতকে বিনা শুল্কে রেল সুবিধা দিয়েছেন। এর বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পাবে? এই সরকারকে কোনো স্বাধীন দেশের সরকার বলা যাবে না।”
গত ২২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। চুক্তিগুলো হল– ‘বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল পার্টনারশিপ’ এবং ‘বাংলাদেশ-ভারত গ্রিন পার্টানারশিপ’।
সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে- ‘মেরিটাইম কোঅপারেশন’, ‘মহাকাশ সহযোগিতা’, ‘রেলওয়ে কানেক্টিভিটি’, ‘ওশেনোগ্রাফি সহযোগিতা’ এবং ‘মিলিটারি শিক্ষা সহযোগিতা’।
এছাড়া তিনটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে। সেগুলো হল- ‘স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতে সহযোগিতা’, ‘দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা’ এবং ‘মৎস্য খাতে সহযোগিতা’।