সাংবাদিকদের মারধরের অভিযোগ নিয়ে তিনি: “একটা ভুয়া অভিযোগ। মুক্তিযুদ্ধ করে ৫০ বছর পর সাংবাদিককে ‘ধর ধর’ বলতে হবে-এত নিচে নেমে আমি রাজনীতি করি না।”
Published : 27 Dec 2023, 06:16 PM
নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে এসে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় আনা অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়ে কুমিল্লা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেছেন, তার প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ নেই।
বুধবার নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে হাজির হয়ে বক্তব্য তুলে ধরার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি, যিনি ২০০৮ সাল থেকে তিনটি নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
এবারও তাকে প্রার্থী করেছে ক্ষমতাসীন দল। বিএনপির বর্জনের এই ভোটে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা, যিনি দলের ভেতর বাহারের এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী আফজল খানের মেয়ে।
ভোটের প্রচার শুরুর পর থেকে বাহারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে। এর মধ্যে সোমবার তার পাশাপাশি বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে কমিশনে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
নোটিশে দুই জনের কাছেই জানতে চাওয়া হয়, কেন তাদের প্রার্থিতা বাতিল হবে না।
তারও দুইদিন আগে শনিবার নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছিলেন, “প্রার্থিতা বাতিল হবে, কোনো না কোনো জায়গায় কারো না কারো, এইটুকু আভাস আমি দিয়ে রাখলাম।"
এই বক্তব্যের পর বাহার ও শম্ভুকে তলব করার পর এই শুনানি নিয়ে বাড়তি আলোচনা তৈরি হয়। পরে শুনানি শেষে কমিশন প্রার্থিতা বাতিল করার মতো কোনো সিদ্ধান্তে না গিয়ে বাহারকে এক লাখ ও শম্ভুকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
আরো পড়ুন:
প্রার্থিতা বাতিল প্রশ্নে শুনানি নিয়ে বাহার ও শম্ভুকে ইসির জরিমানা
‘সাংবাদিকদের মারধর ভুয়া অভিযোগ’
শুনানিতে কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা তুলে ধরার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বাহার। তিনি বলেন, “আমার বক্তব্যে আমি ইসিকে কনভিন্সড করতে পেরেছি। প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার সুযোগ নেই।”
বাহারের আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, “ইসিতে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- প্রার্থিতা বাতিলের মতো বিধান লঙ্ঘন এখন পর্যন্ত উনার দ্বারা হয়নি। নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার মতো কোনো কিছু তিনি করেননি।
“তিনি কোনো অপরাধ করেননি। সেজন্য প্রার্থিতা বাতিলের ধারাটি উনার জন্য প্রযোজ্য হবে না।”
বাহারকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছিল, গত ২০ ডিসেম্বর নির্বাচনি প্রচারণার সময় তিনি সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। তার উসকানিমূলক নির্দেশনায় ব্যক্তিগত সহকারীসহ নেতাকর্মীরা দুই সাংবাদিককে মারধর করেন।
ওই সংবাদকর্মীদের অফিসিয়াল মোবাইল ফোন এবং লাইভ কাভারেজের ডিভাইসও ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ইসির নির্দেশে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপার আলাদা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, যাতে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এরপর বাহার নির্বাচনি অপরাধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সুপারিশসহ ইসিতে প্রতিবেদন পাঠায় সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।
সাংবাদিক মারধরের অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে বাহার বলেন, “একটা ভুয়া অভিযোগ। মুক্তিযুদ্ধ করে ৫০ বছর পর সাংবাদিককে ‘ধর ধর’ বলতে হবে-এত নিচে নেমে আমি রাজনীতি করি না।”
হাত পা ভাঙার কথা ‘আবেগপ্রবণ হয়ে’
বাহারের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ ছিল, তিনি বিএনপি-জামায়াতের কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া গেলে তাদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবেগপ্রবণ হয়ে মানসিক জোর বাড়াতে এ কথা বলেছেন।’
বাহার বলেন, “যেদিন আমি বক্তৃতা দিই, তার ঠিক আগের দিন একজন রিকশাওয়ালা মারা যান। পত্রিকায় আমি এভাবে পেয়েছিলাম, একজন রিকশাওয়ালা তার সন্তানদের লেখাপড়া করান। তিনি সেদিন একটি গ্যারেজে ঘুমিয়েছিলেন। সেখানে আগুন দেওয়া হয়। কারণ তারা (বিএনপি) নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর দুদিন হাসপাতালে কষ্ট পেয়ে তিনি মারা যান।
“ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। একজন নারী ও একটি শিশু মারা গেছে। এগুলো আমাকে মানসিকভাবে যন্ত্রণা দিয়েছে। যারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, তাদের বিষয়ে বলেছিলাম। তারা তো প্রতিহতের নামে মানুষ হত্যায় লিপ্ত। ২০১৪ সালে তারা চার থেকে পাঁচশ ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল। যাতে ওই কাজগুলো তারা না করতে পারে, সে জন্য মানসিক জোর বাড়াতে এমন কথা বলেছিলাম।”
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি এত বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছে কীসের রাজনীতি আমরা করি, মানুষ হত্যার রাজনীতি করি? আমরা তো প্রোগ্রাম করি, আমরা তো মানুষ হত্যার রাজনীতি করি না।”
“এমন রাজনৈতিক বক্তব্য দেব না বলেছি” নির্বাচন কমিশনের কাছে এই অভিযোগ স্বীকার করার কথাও জানান তিনি।
বারবার নোটিশ কেন, এই প্রশ্নে বাহার বলেন, “আমাকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেই চিঠি আচরণবিধিতে চলে না। আমাকে কী সাজা দেওয়া হবে, তা জানতে এসেছিলাম। সেই ব্যাখ্যা জানতে এসেছিলাম। কারণ, আমি তো আইনজীবী নই।”
আমি না, সমর্থকরা করতে পারে: শম্ভু
কমিশন শুনানিতে অংশ নেওয়া শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে দায় দিয়েছেন সমর্থকদের।
তিনি বলেন, “আমাকে তলবের কারণ আচরণবিধি। সুতরাং আচরণবিধি লঙ্ঘন হতে পারে। কিন্তু আমি কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ করিনি, আমাদের সমর্থকরা কিছু করতে পারে।”
শম্ভু ১৯৯১ সাল থেকে পাঁচবার জিতেছেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যান।
আরও পড়ুন
প্রার্থিতা বাতিল কেন নয়, বাহার-শম্ভুর ব্যাখ্যা তলব
সাংবাদিকদের মারধর: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন চায় ইসি
নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচার, জরিমানা গুনলেন আওয়ামী লীগ নেতা