এক মাস আগে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার শফিকুরের ছেলেকে এ মামলাতেই রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ।
Published : 13 Dec 2022, 04:16 PM
জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. মো. শফিকুর রহমানকে যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
শফিকুর রহমানের জামিন আবেদন নাকচ করে ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
এক মাস আগে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে এ মামলাতেই রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ।
সোমবার রাত ১টার দিকে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে জামায়াত আমিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-সিটিটিসি।
পরে তাকে যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অন্যদিকে শফিকুর রহমানের পক্ষে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন আাইনজীবী মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং এস এম কামাল উদ্দিন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু রিমান্ড শুনানিতে বলেন, “জঙ্গিবাদে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
এর বিরোধিতা করে জামায়াতের আমিরের পক্ষে জামিন চেয়ে আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “জামায়াত নিষিদ্ধ সংগঠন নয়, জঙ্গিবাদেও সম্পৃক্ত না। জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। জামায়াত সংসদেও ছিল। তিনি জামায়াতের প্রধান, এটাই তার অপরাধ।”
শুনানি শেষে বিচারক জামিন নাকচ করে শফিকুর রহমানকে সাত দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বলে প্রসিকিউশন পুলিশের উপ কমিশনার জসিমউদদীন জানান।
জামায়াত আমিরের শুনানি ঘিরে এদিন আদালতে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় ৫০ জন আইনজীবী শফিকুরের শুনানির সময় তার পক্ষে এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ৯ নভেম্বর শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান সে সময় বলেছিলেন,ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার আনসার আল ইসলামের তিন সদস্য আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে রাফাতের নাম আসে।
“তারা বলেছে, রাফাত তাদের এই সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত করতে দাওয়াত দিয়েছিল। এই তিনজনসহ প্রায় ১১জন এই রাফাতের দাওয়াতে হিজরতের উদ্দেশে ঘর ছেড়েছিল।”
রাফাত ওই জঙ্গি সংগঠনটির ‘সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের’ দায়িত্বে রয়েছেন জানিয়ে আসাদুজ্জামান সে সময় বলেছিলেন, “রাফাতের বিরুদ্ধে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।”
জামায়াত আমির শফিকুর রহমান একসময় তাদের দলের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সিলেট শাখার সভাপতি ছিলেন। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায়। ১৯৮৩ সালে তিনি সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়ার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এ দলের নেতৃত্বে আসেন শফিকুর। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এবং ২০১৭ সাল থেকে তিনি সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১২ সালের নভেম্বরে পান আমির পদ।
গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ঢাকা-১৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান শফিকুর।