চব্বিশ ঘণ্টা প্রায় হয়ে যাচ্ছে, দয়া করে অবিলম্বে এই সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তবর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করুন। অন্যথায় দেশে আবার রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিতে পারে।”
Published : 06 Aug 2024, 03:52 PM
কালক্ষেপণ না করে মঙ্গলবারের মধ্যেই সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বতীকালীন সরকারের গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই যে,চব্বিশ ঘণ্টান মধ্যে নির্দলীয় সরকার গঠনের কাজ সমাধান করতে হবে। আমি রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, কাল বিলম্ব না করে আপনি আজকের মধ্যেই করুন। চব্বিশ ঘণ্টা প্রায় হয়ে যাচ্ছে, দয়া করে অবিলম্বে এই সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তবর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করুন। অন্যথায় দেশে আবার রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিতে পারে।”
মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান। ওই বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা এবং এর প্রধান নিয়ে ফখরুল দলের অবস্থান তুলে ধরেন।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে রূপরেখা আন্দোলনকারীরা দিয়েছে তাতে বিএনপির সমর্থন আছে কী না জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “এখানে আমাদের সমর্থন করার ব্যাপার না। এটা হচ্ছে যে, যখনই প্রেসিডেন্ট আমাদের কাছে প্রস্তাব দেবেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের নামের জন্য আমরা সেই সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম দেব।
“এখানে এখন কনস্টিটিউশনাল হেড অব স্টেট প্রেসিডেন্ট। উনি হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রধান তারই একমাত্র এখতিয়ার আছে এই ধরনের ব্যবস্থাগুলো নেয়ার জন্য। সুতরাং যখন রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে ডাকবেন তখনই আমাদের যেটা নামের প্রস্তাব আমরা দেব। তবে একটা কথা বলে দেই, ছাত্রদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছ, তাদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মবোধ করেছি, তাদের সাথে একাত্মবোধ করছি। এখানে বলব, সর্বদলীয় ব্যাপারটা গুরুত্ব দেয়া উচিত যে জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিন সপ্তাহ পর খুলল বিএনপির অফিস, গুলশানে বৈঠকে স্থায়ী কমিটি
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বতীকালীন সরকার প্রধানের কোনো নাম স্থির হয়েছে কী না প্রশ্নে মিজা ফখরুল বলেন, “ না হয়নি।”
সোমবার টানা ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা পর রাতে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে বঙ্গভবনে যান ফখরুল ও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতারা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ সংসদ ভেঙে দিয়ে ‘অতি দ্রুত’ একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। সেই সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবে।”সেখানে তিনি বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘কোনো কালক্ষেপণ না করেই’ মুক্ত করা হবে।
‘শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা নাই’
ফখরুল বলেন, “রাষ্ট্রপতি অঙ্গীকার করেছেন যে, যেহেতু শেখ হাসিনার পদত্য্যাগ করে পালিয়ে গেছে সেহেতু শেখ হাসিনার কেবিনেট পুরোপুরিভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই সংসদ বিনাভোটের সংসদ এর কোনো কার্যকারিতা নেই। সেজন্য এটাকে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ভেঙে দিতে হবে।”
“এরপর অন্তর্বতীকালীন বলেন,নিরপেক্ষ সরকার বলেন তা গঠন করা হবে তারা তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে।”
‘গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমি আজকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে। শুভেচ্ছা জানাচ্ছি একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রত্যশায় এবং একই সঙ্গে আপানাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, শত প্রতিকুলতা সত্ত্বেও আপনারা এই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতার জন্যে আপনারা কাজ করেছেন।”
‘‘ দুঃখপ্রকাশ করছি এই বিজয়ের পরে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতীকারী তারা কয়েকটি টেলিভিশন স্টেশনে অগ্নি সংযোগ করেছে, ভাংচুর করেছে। আমরা সবসময় ফ্রিডম অব প্রেসে বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তি, মানুষ, সংগঠন বিশেষ করে সাংবাদিকরা তারা তাদের মত একদম স্বাধীনভাবে প্রকাশ করবেন। সেই বিশ্বাসে আমরা মনে করি যে, যারা এই সমস্ত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকেছেন তারা এসব থেকে বিরত থাকবেন এবং সংবাদপত্রের যে মুক্ত ধারা তা অব্যাহত রাখবেন।”
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে তৈরি হওয়া সরকার পতনের এই আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছন ফখরুল।
“ ছাত্র ও জনতা যারা দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর যে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম সেই সংগ্রামে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমরা অভিবাদ জানাতে চাই, স্যালুট জানাতে চাই, আমাদের ছাত্রদের আমাদের সন্তানদের যারা তাদের মেধা বৃদ্ধিমত্তা সাহস নিয়ে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বুকে রক্ত দিয়ে ছাত্র-জনতা বিজয় অর্জন করেছেন আমরা তাদের স্যুালেট জানাই।”
‘‘ আমরা সকল রাজনৈতিক দল, সকল ব্যক্তি, পেশাজীবী যারা এই সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আছেন তাদের সকলকে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এই বিজয় অর্জন করার জন্য।”
বিজয় ‘অর্জন’ হয়েছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, “ কিন্তু আরও বড় দায়িত্ব রয়েছে, প্রতিটি স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি নাগরিকের এ স্বাধীনতাকে সুসংহত করা। ”
হামলা-লুটপাট বন্ধের আহ্বান
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনাদের কাছে অনুরোধ করব আপনাদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছিয়ে দিতে চাই, যে এখন এরোগেন্টস, রেজিয়েন্স এটা কোনো স্থান নেই। স্থান নেই কোনো প্রতিহিংসা, কোনো প্রতিশোধ গ্রহনের।এখন যেটা প্রয়োজন ধরযের সঙ্গে জনগনকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এই অর্জিত স্বাধীনতাকে সুসংহত করা।
“এখনো যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিশোধমূলকভাবে অগ্নিসংযোগ করছেন, লুটপাট করছেন, বাড়ি-ঘরে হামলা করছেন দয়া করে এটা এই মুহুর্ত থেকে বন্ধ করুন। যারা এটা করছেন তারা কেউ আন্দোলনের লোক নয়, তারা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে তাদের লোকেরা এসব করছে। ”
‘বেগম জিয়ার বার্তা’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ম্যাডাম (বিএনপি চেয়ারপারন খালেদা জিয়া) সবাইকে প্রথম যে বলেছেন, সবাই শান্ত হতে বল। এখানে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি যেন না হয় যাতে অর্জিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে যায় কেউ। তিনি জনগণকে সর্তক থাকতে বলেছেন, এই বিজয় যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে।”
খালেদা জিয়া কবে নাগাদ জনসমক্ষে আসবেন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আপনারা জানেন, ম্য্যাডাম খুব অসুস্থ। আমি গতকাল রাতে দেখা করেছি, সুতরাং যখনই তিনি ফিট মনে করবেন, সুস্থ বোধ করবেন তখন তিনি জনগনের সামনে উপস্থিত হবেন।”
‘তারেক রহমান কবে ফিরবেন’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ উনি(তারেক রহমান) যখনই মনে করবেন হি ক্যান কাম ব্যাক। আমরা আমাদের অলরেডি অনুরোধ জানিয়েছি যে, দ্রুত চলে আসেন। সেই ব্যবস্থা হবে ইনশাল্লাহ।”
সংবাদ সম্মেলন গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আন্দোলনে হতাহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরনের অঙ্গীকার করেছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দেশের বাইরে থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে যুক্ত হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সালাউদ্দিন আহমেদ।