বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে জানিয়েছে দলটি।
Published : 15 Jul 2023, 06:17 PM
আগামী জাতীয় নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনে হলে তাতে পর্যবেক্ষক না পাঠাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে পরামর্শ দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
নিবন্ধন বাতিল হওয়া দলটির মতে, নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে ‘অর্থহীন’।
আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ সফরে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দলের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেছে দলটি।
সিলেটে জামায়াতকে সমাবেশের ‘অনুমতি’ না দেওয়ার কথাও তুলে ধরে দলটি বলেছে, এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, এমন আশা করার ‘কারণ নেই’।
শনিবার ঢাকার গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন।
একই দিন দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গেও বৈঠক করে ইইউর প্রতিনিধি দলটি।
আওয়ামী লীগ বলেছে, বর্তমান সরকারের অধীনেই ভোট সুষ্ঠু হবে। বিএনপি বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না।
জামায়াত নেতা তাহের সাংবাদিকদের বলেন, “তারা (ইইউ প্রতিনিধিদল) আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, পর্যবেক্ষক পাঠানোটা আপনারা কীভা্বে দেখেন?
‘‘আমরা বলেছি, বাংলাদেশে যে কোনো পর্যবেক্ষককে আমরা স্বাগত জানাই; যদি সেটা কোনো নির্বাচন হয়। আর যদি সেটা নির্বাচনের নামে প্রহসন হয় তাহলে এখানে পর্যবেক্ষক আসা অর্থহীন।
“আপনারা একটা ‘অবৈধ’ নির্বাচন দেখতে আসবেন এটা আপনারা সন্মানবোধ করবেন কি না, এটা আপনাদের বিবেচনার বিষয়। সুতরাং যদি সুষ্ঠু নির্বাচন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে হয়, তাহলে আপনারা পর্যবেক্ষক পাঠালে আমরা আপনাদেরকে স্বাগত জানাব। আর ‘একদলীয় একটা বাজে নির্বাচনের প্রহসনে’ আপনারা এসে তাদেরকে কিছুটা বৈধতা দেবেন, এটা বোধহয় সমীচীন হবে না।”
‘এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে নয়’
বর্তমান সরকারের অধীনে জামায়াত নির্বাচনে যাবে কি না, এই প্রশ্নে তাহের দাবি করেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালেই প্রমাণ হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর নয়।
তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা নির্দলীয় সরকার, যে নামেই হোক, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এর বাইরে বাংলাদেশের মানুষ দলীয় সরকারের অধীনে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।”
সিলেটে জামায়াতকে সমাবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম, সরকার কিছুটা হলে গণতান্ত্রিক হয়েছে, অন্যের অধিকারের ব্যাপারে সন্মান দেখাবে। কিন্তু সিলেটে গতরাতে ঘটনা সেই পুরনো ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের চিত্র আমাদের সামনে আসছে।
“সরকার নির্বাচনের ৪ মাস আগেই রাজনৈতিক দলগুলোকে মিটিং করতে দিচ্ছে না, আমাদের সমস্ত অফিস খুলতে দিচ্ছে না, এ রকম অবস্থায় নির্বাচনের দিন সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হবে, এটা আশা করার কারণ নাই। আমরা সেই কথাটা তাদেরকে পরিস্কার করে বলে দিয়ে আসছি।”
নিবন্ধন প্রসঙ্গ
জামায়াতের নিবন্ধন আছে কি না, সেই বিষয়টিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় দলটির কাছে।
তাহের জানান, তারা বলেছেন, ‘সরকারনির্দেশিত’ রায়ের মাধ্যমে তাদের নিবন্ধনটি হাই কোর্টে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। এর বিপরীতে তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন। আপিল বিভাগে ‘ন্যায়বিচার’ হলে নির্বাচনের আগে তারা নিবন্ধন ফিরে পাবেন বলে আশা রাখেন।
‘ধর্মীয় সহিংসতা জামায়াত করে না’
জামায়াতে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে সহিংসতা করে বলে ইইউ পার্লামেন্টের প্রস্তাব নিয়েও তাহেরের কাছে প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, “আমরা একটা পরিস্কার করেছি যে, জামায়াতে ইসলামী এটা কখনই করে না। জামায়াত কোনো সহিংসতায় বিশ্বাস করে না। আমাদের দল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক, ইতিবাচক, মধ্যমপন্থি একটি ইসলামী সংগঠন।
“তারা (ইইউ প্রতিনিধি দল) এর সঙ্গে একাতত্মা প্রকাশ করেছে এবং আমাদের কথায় তারা আশ্বস্ত হয়েছেন।”
বৈঠক এবি পার্টির সাথেও
জামায়াতের প্রতিনিধি দল বের হয়ে আসার কিছুক্ষণ পর ইইউ মিশনে যায় একই দলের একাংশের নেতা-কর্মীদর উদ্যোগে গঠন করা এবি পার্টির প্রতিনিধি দল।
তাদের মধ্যে ছিলেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম, যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও যুবায়ের আহমেদ ভুঁইয়া, সিনিয়র সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম ও সহকারী সদস্য সচিব নাসরীন সুলতানা মিলি।
বৈঠকের পর তাজুল বলেন, “রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এই থেকে পরিত্রাণের জন্য ‘গায়ের জোরে’ বাতিল করা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশের গণআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব।”