“আমরা বলতে চাই, সরকারের ব্যর্থতা এখানে লক্ষ্যণীয়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা এখানে লক্ষ্যণীয়,” বলেন এই বিএনপি নেতা।
Published : 08 Apr 2025, 04:52 PM
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলাকালে দেশের বিভিন্ন শহরে বাটা, কেএফসিসহ বিভিন্ন দোকান, রেস্তোরাঁয় হামলা, ভাঙচুর, লুট্পাটের ‘নিন্দা’ জানানোর পাশাপাশি সরকারের ‘ব্যর্থতার’ সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছেন, “সারা পৃথিবীতে আজকে এক কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে, ইসরায়েলকে যারা মদদ দিচ্ছে তাদেরকে সমস্ত মদদ বন্ধ করতে হবে এবং ইসরায়েলের সমস্ত পণ্য আমরা বর্জন কর।তার মানে এই না যে আমরা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা করব।”
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক প্রতিবাদ সমাবেশে কথা বলছিলেন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, “গতকালকে বাংলাদেশে কিছু স্থাপনায় হামলা হয়েছে আমরা তার নিন্দা জানাই । আমরা বলতে চাই, সরকারের ব্যর্থতা এখানে লক্ষ্যণীয়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা এখানে লক্ষ্যণীয়।তাদের উচিত ছিল আগে থেকে এখানে সর্তকতা অবলম্বন করা। তাহলে বাংলাদেশের নামে এই বদনামটাকে আমাদের নিতে হত না।”
গাজায় নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার প্রতিবাদে সোমবার বিশ্বব্যাপী ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও ধর্মঘট পালন করা হয়।
সকাল থেকে সারাদেশের জেলা-উপজেলা শহর ছিল প্রতিবাদমুখর। এসব বিক্ষোভের মধেই কিছু মানুষ ফাস্ট ফুড চেইন কেএফসি, পিৎজা হাট, বাটার মত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বিক্রয় কেন্দ্রে হামলা চালা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। পাশাপাশি কোমল পানীয় কোকাকোলা, সেভেন আপ রাখায় বিভিন্ন দোকান ও রেস্তোরাঁয় হামলা করা হয়।
এদিন দেশের অন্তত ছয় জেলায় ‘ইসরায়েলি পণ্য রাখা ও বিক্রি’ করার অভিযোগ তুলে ধরে ১৬টি রেস্তোরাঁ ও বিক্রয় কেন্দ্রে হামলা-ভাঙচুরের খবর আসে।
কক্সবাজারে পাঁচটি, চট্টগ্রামে তিনটি, সিলেট পাঁচটি, গাজীপুরে চারটি, কুমিল্লায় একটি এবং বগুড়ায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এমন এক দিনে এসব ঘটনা ঘটেছে, যেদিন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের জন্য দেশে চলছিল ইনভেস্টমেন্ট সামিট। জেলায় জেলায় এই ভাঙচুরের ঘটনা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিভিন্ন মহলে আশঙ্কা রয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার ছাত্রদলের উদ্যোগে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। তাতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের হাতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পতাকা এবং বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
সালাহ উদ্দিন বলেন, “আমি আজকে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি ঘোষণা দিতে চাই, আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে, এই ইসরায়েলি গণহত্যা এবং বর্বর আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিএনপির পক্ষ থেকে অতি শীঘ্রই সারাদেশে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
“আমরা এদেশের জনগণকে আহ্বান জানাই, পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম বিশ্বে যারা আছেন, তাদেরকে আহ্বান জানাই, যারা পরাশক্তির একটি অংশ যারা মদদ দিচ্ছে ইসরায়েলিদেরকে, তাদেরকে আহ্বান জানাই, এই মুহূর্ত থেকে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য আপনাদেরকে পদক্ষেপ নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে জাতিসংঘের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ইসরাইয়েলিরা কখনো জাতিসংঘের রেজুলেশনের প্রতি সম্মান দেখায়নি, এই ইসরায়েলি সরকার জাতিসংঘের কোনো নির্দেশনা কোনো অনুশাসন আজ পর্যন্ত মানে নাই।
“দুই-একটা দেশ সমসময় যখনই ফিলিস্তানি মসুলমানদের পক্ষে জাতিসংঘে রেজুলেশন পাস করেছে, তারা (পরাশক্তি) তার বিরুদ্ধে ভিটো প্রয়োগ করেছে তা আপনারা সবাই জানেন। তার মানে হচ্ছে, ইসরায়েলির মদদদাতা এই কয়েকটি পরাশক্তিকে তাদের ভূমিকা নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।”
সালাহ উদ্দিন বলেন, “যতদিন পর্যন্ত প্যালেস্টাইন মুক্ত না হবে, যত দিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ না হবে, যতদিন পর্যন্ত ইসরায়েলি বর্বর আগ্রাসন বন্ধ না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশ এবং সারা পৃথিবীর জনগণকে আহ্বান জানাব যে, আমাদের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাতে থাকতেই হবে।”
‘বিগত সরকার পরোক্ষভাবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল’
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা অবিলম্বে গাজা ও রাফায় গণহত্যা বন্ধ চাই। সারা পৃথিবীর মানুষ জেগে উঠেছে। গতকালকে সারা পৃথিবীর মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছে। ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ প্রোগ্রাম করেছে। বাংলাদেশেও সেটা পালিত হয়েছে। আমরা সবাই অংশগ্রহণ করেছি। আজকে ছাত্রসমাজের সবচাইতে প্রগতিশীল ঐহিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে।
“আপনারা জানেন, বাংলাদেশের বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার আওয়ামী লীগ পরোক্ষভাবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কীভাবে? তারা বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইসরায়েল ব্যতীত সকল রাষ্ট্রে গমনের যে নিদের্শনা ছিল, সেখান থেকে ‘ইসরায়েল’ শব্দটি রিমুভ করে দিয়েছিল, প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
“তার মানে দাঁড়ায় তারা (ফ্যাসিস্ট সরকার) ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। অথচ তারা বাংলাদেশের মুসলমানদের পক্ষে, সারা পৃথিবীর মসুলমানদের পক্ষে মায়া কান্নাও কাঁদত।
এই বিএনপি নেতা বলেন, “বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী এবং যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, সকল গণতান্ত্রিক শক্তি, সামাজিক শক্তিসহ এদেশের আপামর জনসাধারণের বিরুদ্ধে আড়িপাতা ষন্ত্রের মাধ্যমে যে নির্যাতনের সূচনা তারা করেছিলেন, সেই আড়িপাতা যন্ত্র পেগাসাস স্পাইওয়্যার ইসরায়েল থেকে খরিদ করেছিল এই শেখ হাসিনার সরকার।
“আজকে যেখানেই হাসিনা আশ্রয় নিন না কেন, বাংলাদেশের মানুষ সারাজীবন এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ইসলাম বিদ্বেষী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই ধিক্কার জানিয়েই যাবে যে তারা মুসলিম বিদ্বেষী, ইসলাম বিদ্বেষী, আলেম বিদ্বেষী। তারা পৃথিবীতে ইসরায়েলপন্থিদের সমর্থক ছিল।”
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিকুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, জ্যেষ্ঠ সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বক্তব্য রাখেন।
ছাত্রদলের এই প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।