“আমরা আন্দোলনকারীদের বলব, আইনের পাশে থাকুন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্ধারিত তারিখের শুনানির জন্য অপেক্ষা করুন।”
Published : 17 Jul 2024, 03:22 PM
‘অস্তিত্বের প্রতি হুমকি এসেছে’ মন্তব্য করে চলমান পরিস্থিতি মোকবিলায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কোটা আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংতার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।
বুধবার দুপুরে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে, ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কাদের কথা বলছিলেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ‘নেতৃত্বে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির’ দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, " এই পরিস্থিতি মোকাবেলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান।
"সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কেন রাস্তাঘাট দখল করতে যাবে? সহিংসতায় জড়াবে? এই আন্দোলনের নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে অশুভ শক্তির হাতে চলে গেছে। সেই অবস্থায় আমরা নিশ্চুত থাকতে পারি না।"
কাদের বলেন, সরকার সবসময় ছাত্রসমাজের দাবির প্রতি ‘সহনশীল’।
তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী আমাদের রাষ্ট্রের অভিভাবক। সবার যৌক্তিক দাবি তার বিবেচনায় রয়েছে। আমরা আন্দোলনকারীদের বলব, আইনের পাশে থাকুন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্ধারিত তারিখের শুনানির জন্য অপেক্ষা করুন। ধৈর্য ধারণ করুন। কোন অপশক্তির উসকানি বা ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। ফাঁদে পা না দিয়ে অপেক্ষা করুন। তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি।”
কোটা সংস্কারের দাবিতে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু আন্দোলন ঘিরে মঙ্গলবার সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা বাড়ে আন্দোলনকারী ও সরকারদলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে। দুই পক্ষের শক্ত অবস্থানে দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ শুরু হয়।
দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সংঘাতের এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। এর মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, রাজধানীতে দুইজন এবং রংপুরে একজন করে মারা গেছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা এবং জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের আট জেলায় বিজিবি নামানো হয়েছে। দেশের সব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সভায় কাদের বলেন, "আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করি, লালন করি, বিশ্বাস করি সেই চেতনা বিশ্বাসীরা আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। এখানে বেশিক্ষণ আপনাদের (ঢাকা জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা) ধরে রাখতে চাই না। যার যার এলাকায় যান, আজকেও তাদের ভয়াবহ তাণ্ডব সৃষ্টির এজেন্ডা আছে, বিধ্বংসী এজেন্ডা আছে।"
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কাদের বলেন, "এখানে শুধু পুলিশের শক্তি নয়, আমাদের দল, দলের যে শক্তি, যে শক্তি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যে শক্তি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করেছে সেই শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমাদের এই শক্তিকে আজ কাজে লাগাতে হবে। আমাদের সারাদেশের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে আমাদের নেত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, সারা দেশে সতর্ক হয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে এই অশুভ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। কোনো অপশক্তির সাথে আপস করা যাবে না।”
‘ছাত্রদল-শিবির কোটা আন্দোলনে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছে’
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য তুলে ধরে কাদের বলেন, “ফখরুল সাহেব দম্ভ করে বলেছেন, আমরা যা পারি নাই ছাত্ররা তা করিয়ে দেখিয়েছে। এতেই বোঝা যায়, কোটার দাবিতে তারা নামেনি। তারা নির্বাচিত সরকারকে হটাতে চায়। ক্ষমতা দখলের জন্য কতটা মরিয়া হলে তারা শিশু কিশোরদের মিছিল ব্যবহার করে।
“ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মীরা উসকানিমূলক স্লোগান, তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের স্ট্যাটাস আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছে।"
এই আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কাদের বলেন, “বিএনপির এক নেতার ফোনালাপের অডিও ক্লিপ থেকে বোঝা গেছে ছাত্রদলের ক্যাডারদের সংঘর্ষ হামলার নির্দেশ দিচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে বিএনপি জামায়াত আবারও সহিংসতার প্রতি হাঁটছে।
"তারা, তাদের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী সারা বাংলাদেশ থেকে এনে এই শহরে গুপ্তহত্যা শুরু করেছে। আরো অনেক বাজে পরিস্থিতি, ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির আহ্বান জানাচ্ছে, উসকানি দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়গুলো আমরা জানতে পেরেছি।"
বিএনপি সারাদেশ থেকে ‘প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের ঢাকায় এনেছে’ দাবি করে কাদের দলটির কেন্দ্রীয় অফিস থেকে লাঠিসোঁটা, অস্ত্র, পেট্রল এবং ককটেল উদ্ধারের কথা বলেন।
সন্তানদের এই আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
কাদের বলেন, "আপনাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানদের এই ধরনের আত্মবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখুন। কারণ বিএনপি জামায়াতের স্বশস্ত্র ক্যাডাররা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব তারা নিজেরাই গ্রহণ করেছে। তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা চরিতার্থ করার জন্য হত্যা, গুপ্ত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। অভিভাবকদের অনুরোধ করব তাদের সন্তানদের বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বাহিনীর এই আন্দোলন থেকে দূরে রাখার।
কোনো অপশক্তির সাথে আপস করা যাবে না বলেও প্রত্যয় জানান কাদের।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হকসহ আরো অনেকে এসময় উপস্থিত ছিলেন।