‘অনেক উকিল সাত্তার’ যোগাযোগ করছে: কাদের

“এই বৈশ্বিক সংকটেও আমরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি। জিনিসপত্রের দাম কমে যাবে, জ্বালানি সংকট কমে যাবে”, বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2023, 02:11 PM
Updated : 10 April 2023, 02:11 PM

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনে লড়ে ফের সংসদ সদস্য হওয়া আব্দুস সাত্তারের মত দলটির অনেকেই ‘গোপনে’ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে দাবি করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

কারও নাম প্রকাশ না করে বিস্তারিত জানতে অপেক্ষায় থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বিএনপি যেসব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে এগোচ্ছে, তাদের কটি শেষ পর্যন্ত দলটির পাশে থাকবে সে প্রশ্নও রেখেছেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

সোমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশে’ এসব কথা বলেন কাদের।

তিনি বলেন, “উকিল আব্দুস সাত্তার একজন নয়, এখন অনেক আছে। উকিল আব্দুস সাত্তারের অভাব নেই, তলে তলে কতজন যোগাযোগ করছে অপেক্ষা করুন।”

২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী ছয় জন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের একজন সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন গত ডিসেম্বরে। এরপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে পদত্যাগীদের মধ্যে উকিল আবদুস সাত্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। আর আওয়ামী লীগ প্রার্থী না দিয়ে সাত্তারের পাশে অবস্থান নেয়। এমনকি জাতীয় পার্টিও ভোটে প্রার্থী দিয়েও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

উকিল আবদুস সাত্তার আবার সংসদে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হলে বিএনপি আর ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। একই দাবিতে ২০১৪ সালেও ভোট বর্জন করে আন্দোলনে ছিল দলটি। তবে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই তারা নির্বাচনে অংশ নেয়।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, বিএনপি না এলে ভোট অপেক্ষা করবে না। আর সে ক্ষেত্রে তাদের দলের ‘অনেকেই’ ভোটে আসবে।

দেশে ‘ষড়যন্ত্রের রাজনীতির নতুন খেলা’ শুরু হয়েছে দাবি করে কাদের বলেন, “বিএনপি জানে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিজয় অনিবার্য। বিদেশিরাও বলে, শেখ হাসিনা অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। এটা বিএনপি নেতারা বুঝে গেছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্বাচন করে লাভ নেই।

“এটা বুঝতে পেরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরদের মনের জোর কমে গেছে। মনের জোর কমে গেলেও গলার জোর বেড়ে গেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে বেড়াচ্ছেন। তাদের কথা শুনলে মনে হয় বেপরোয়া চালকের মতো। বেপরোয়া রাজনৈতির কারণে কখন যে কোথায় দুর্ঘটনা ঘটায়, এটা নিয়ে দেশের মানুষ ভাবছে।”

তিনি বলেন, “আজকে বিএনপি রাজনৈতিক দুর্ঘটনার দিকে হাঁটছে। এই অপশক্তিকে ঠেকাতে হবে, এই অপশক্তি ভোটে আসবে না।”

বিএনপির জোট ‘টিকবে না’

বিএনপি যাদের সঙ্গে সমঝোতা করে সরকারবিরোধী ‘যুগপৎ’ আন্দোলন শুরু করেছে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ‘টিকবে না’ বলেই মনে করেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “বিএনপির ৫২ দলের এখন কত দল আছে জানি না। তাদের মধ্যে মান অভিমান চলছে, ফখরুল একজনকে ঠিক করেন, আরেকজন বের হয়ে যান। মান অভিমানের পালা চলছে, কেউ যায়, কেউ আসে। শেষ পর্যন্ত জোটের কত সংখ্যা হয় সেটাই ভেবে দেখার বিষয়।

“কারণ এই দল বাম-ডানে একাকার। সব এক জায়গায় একাকার, বিভিন্ন মত বিভিন্ন পথ। জগাখিচুড়ির দল, বিএনপির জগাখিচুড়ির ঐক্য গতবারও টেকেনি, এবারও ইনশাল্লাহ টিকবে না। এই জোট টিকতে পারে না।”

সিটি নির্বাচনে বিএনপি আসবে ‘ঘোমটা পরে’

দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশনে ভোট নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথারও জবাব দেন কাদের।

নির্বাচন কমিশন মহানগরগুলোতে নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে ‘ফাঁদ’ হিসেবে দেখার কথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

তার জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “নির্বাচন কমিশন আমাদের জিজ্ঞাসা করে সিটি করপোরেশনের ভোটের তারিখ ঠিক করেনি। সিটি করপোরেশনগুলোর মেয়াদ পার হয়ে গেছে, তাই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচনের তারিখ ঠিক করেছে। যথা সময়ে নির্বাচন করলে বিএনপির মাথা ব্যথা কেন? কী অসুবিধা যথা সময়ে নির্বাচন হলে?”

জাতীয় নির্বাচনের মত সিটি নির্বাচনেও বিএনপি আসবে না, জানিয়ে দিয়েছেন ফখরুল। তবে কাদের মনে করেন, বিএনপি প্রার্থী না দিয়ে কাউকে সমর্থন দিতে পারে।

তিনি বলেন, “তারা (বিএনপি) বলেছে নির্বাচনে আসবে না, তারা প্রকাশ্যে নির্বাচনে আসে না। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা ঘোমটা পরে আসতে পারে।”

কাদের বলেন, “বিএনপির ভোটের বাজার খারাপ।… নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে এসে লাভ কী তারা জানে। এখন হেরে গেলে এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে, জাতীয় নির্বাচনে হার অবশ্যম্ভাবী। সে কারণে এই নির্বাচনে তাদের ভয়।”

জিনিসপত্র, জ্বালানির দাম ‘কমে যাবে’

বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ‘ভালো করছে’ বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, “এই বৈশ্বিক সংকটেও আমরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি। জিনিসপত্রের দাম কমে যাবে, জ্বালানি সংকট কমে যাবে।”

বৈশ্বিক সংকটের জন্য দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করে “শেখ হাসিনার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে” মন্তব্য করে কাদের বলেন, “এত পরিশ্রম করে একজন প্রধানমন্ত্রী কীভাবে বেঁচে আছেন? কার জন্য? সবই মানুষের জন্য। তার নিজের উন্নয়নের জন্য নয়, দেশের এবং দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য।

“শেখ হাসিনা আপনাদের যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা ভঙ্গ করেন না। এই দেশের জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই, নেত্রীর সঙ্গে থাকুন। আল্লার উপর ভরসা রাখুন, নেত্রীর উপর আস্থা রাখুন, এই দুঃসময়, এই দুর্দিন ইনশাল্লাহ কেটে যাবে।”