জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি তুলেছেন তারেক রহমান।
Published : 12 Jun 2014, 01:33 AM
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য জিয়াকে দায়ী করে শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার মালয়েশিয়ায় এক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়ার ছেলে এই দাবি তোলেন বলে সভায় অংশ নেয়া বিএনপির একাধিক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
হুলিয়া নিয়ে লন্ডনে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেকের বহু আলোচিত এই সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মনি, যুবদল নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, সাবেক ছাত্রদল নেতা শহীদুল ইসলাম বাবুলসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কুয়ালালামপুর পুত্রা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ওই অনুষ্ঠানে তারেকের বক্তব্য বিএনপির অনেক নেতা বাংলাদেশে বসে মোবাইল ফোনেও শোনেন।
শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড ছুড়ে হত্যাচেষ্টার মামলায় অভিযুক্ত তারেকের গত সাত বছরে এটা ছিল যুক্তরাজ্যের বাইরে দ্বিতীয় সভা। এর আগে সৌদি আরবে একটি সভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
এছাড়া লন্ডনে কয়েকটি সভায় নিজের বাবা জিয়াকে বাংলাদেশের ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ এবং বঙ্গবন্ধুকে ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’ বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের কঠোর সমালোচনায় পড়েন জিয়ার বড় ছেলে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক তার বাবা হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ ধরে বলেন, “শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ১৭ দিনের মাথায় জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। জিয়াউর রহমান হত্যা সম্পর্কে শেখ হাসিনা জানতেন। শেখ হাসিনাকে রিমান্ডে নেয়া হলেই জিয়াউর রহমান হত্যার রহস্য বের হবে।”
জিয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে এই ধরনের বক্তব্য বিএনপির পক্ষ থেকে আগেও এসেছিল। তার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষমতায় বসেও এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ না নেয়ায় জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে আসছেন।
১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলায় নিজের দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অন্যদের মৃত্যুদণ্ডের সমালোচনাও করেন তারেক।
“১০ ট্রাক অবৈধ অস্ত্র যেসব দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা আটক করল, তাদেরই যদি ফাঁসির আদেশ হয়, তাহলে সাম্প্রতিক সময়ে যারা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে, তাদের কী হওয়া উচিৎ?”
অনুষ্ঠানে র্যাব বিলুপ্তির দাবিতে প্রবাসে বিএনপির উদ্যোগে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিও উদ্বোধন করেন তারেক।
বিএনপির শাসনামলে গঠিত র্যাব বিলুপ্তির দাবি তুলে খালেদা বলছেন, এই বাহিনী এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষ দমনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের সাতখুনে এই বাহিনীর কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে র্যাবকে ‘খুনি বাহিনী’ও বলছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
মায়ের দাবিকে সমর্থন করে তারেক বলেন, “জনগণের টাকায় এই র্যাবের অস্ত্র কেনা হয়, তাদের বেতন হয়। এই সংস্থা এখন মানুষের জীবন হরণ করছে, তা কারো কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
“র্যাবকে আওয়ামী লীগ সরকার ভাড়াটিয়া বাহিনীতে পরিণত করেছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুম-অপহরণ করে খুন করছে তারা।”
নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনার পর র্যাবের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হওয়ার পর হবিগঞ্জে র্যাব অস্ত্র উদ্ধারের ‘নাটক’ করেছে বলেও মন্তব্য করেন তারেক।
আওয়ামী লীগের দেশ শাসনের সমালোচনা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য বোঝা। ’৭২-’৭৫ সালেও এই বোঝা জনগণকে বহন করতে হয়েছিল। এখন আবার ওই বোঝা মাথায় ওপর জেঁকে বসেছে।
আওয়ামী লীগ দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে দাবি করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তারেক।
“এখন চুপ করে বসে থাকার সময় নেই। আবারো বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দেবেন। যার যতটুকু সমর্থন আছে, তা নিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন। যাতে উনি যখনি ডাক দেবেন, তখন সবাইকে নামতে হবে।”
একথা বলে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক বলেন, “আপনারা পারবেন তো?”
সবাই তখন সমন্বরে বলেন - ‘পারব’।
তারেকের এই সভায় মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে প্রবাসী বিএনপি সমর্থকরা যোগ দেন।
গত ৩ জুন লন্ডন থেকে তারেক স্ত্রী জোবাঈদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে কুয়ালালামপুর যান।