সংলাপের আহ্বান জানিয়ে প্রথম দফা প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনের পর দ্বিতীয়বার বিরোধী দলের উদ্যোগ ক্ষমতাসীন দল প্রত্যাশা করলেও তাতে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি।
Published : 28 Oct 2013, 05:34 PM
এক্ষেত্রেও সরকারের উদ্যোগ প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তা না হলে সরকারের সদিচ্ছা না থাকাটা প্রমাণিত হবে।
সোমবার ১৪ দলের সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন বিএনপির মুখপাত্র।
নাসিম বলেছিলেন, “২৯ তারিখের পরে সংলাপে বসতে চাইলে উদ্যোগ বিরোধী দলকেই নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে সংলাপের বিষয় ঠিক করতে হবে।”
ফখরুল বলেন, “আমরা কেন টেলিফোন করব? সংলাপের উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। অন্যথায় বুঝতে হবে, এই বিষয়ে তাদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা নেই।”
আগামী নির্বাচন নিয়ে দুই প্রধান দলের বিপরীত অবস্থানে রাজনৈতিক সঙ্কটের আশঙ্কার মধ্যে শনিবার বিরল এক ঘটনার জন্ম দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাকে টেলিফোন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি গণভবনে সোমবার যেতে বিরোধীদলীয় নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। তবে হরতাল প্রত্যাহার সম্ভবপর নয় জানিয়ে এই কর্মসূচির পর সংলাপে রাজি থাকার কথা জানান খালেদা।
এরপর নতুন করে টেলিফোন করা নিয়ে দুই প্রধান দলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে।
ফখরুল দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, “বিষয়টা পরিষ্কার হতে হবে। সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। তার ধারাবাহিতকতায় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) শনিবার সন্ধ্যায় বিরোধী দলীয় নেতাকে টেলিফোন করেছিলেন।
“আমাদের দাবি নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এই দাবিতে আলোচনার কথা আমরা বলে আসছি। আমরা নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে আলোচনা কিংবা সংলাপ চাই। এতে সরকার রাজি থাকলে আমরা সংলাপের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি।”
নতুন করে টেলিফোনের বিষয়ে তিনি বলেন, “টেলিফোন করলেই তো সঙ্কটের সমাধান হবে না। এর জন্য আগে কার্যকর উদ্যোগ ও সংলাপের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
“বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের নির্যাতন-গ্রেপ্তার করে সেই পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। যেভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন চলছে, তাতে মনে হচ্ছে- সংলাপে সরকারের আন্তরিকতা নেই।”
বিরোধীদলীয় নেতার নৈশভোজের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় মেন্যু চেয়ে পাঠানো নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে ফখরুল বলেন, “আমরা সুস্পষ্টভাষায় জানাতে চাই, এটি কোনো সৌজন্য সামাজিক দাওয়াতে অংশগ্রহণ নয়।
“জাতীয় এই দুর্যোগময় মুহূর্তে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা সুরাহা করে দেশে শান্তি, স্থিতি ও গণতান্ত্রিক সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে একটি অর্থবহ আলোচনা করাই আমাদের উদ্দেশ্য।”
“গৌণ বিষয়কে প্রমিনেন্ট করে মুখ্য উদ্দেশ্য সংলাপকে পেছনে ফেলার এই চেষ্টা হচ্ছে জনগণকে বিভ্রান্ত করার শামিল।”
টেলিফোন আলাপে বিরোধীদলীয় নেতা ‘মুক্তিবাহিনীও গণহত্যা করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন- প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের এই বক্তব্যের বিষয়ে ফখরুল বলেন, “এসব বানোয়াট কথার উত্তর দেয়ার ভাষা আমার কাছে নেই।”
বিএনপি নেতা সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান, “এই কথাটি আপনারা কোথায় পেলেন।” তখন সাংবাদিকরা এনটিএন বাংলায় প্রচারিত এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কথা বলেন।
এরপর ফখরুল বলেন, “এসব এনটিএন বাংলা ও বিডিনিউজের নিজস্ব চিন্তা। একদম বানোয়াট। প্লিজ প্লিজ, আর নয়।”
টেলিসংলাপের সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকা উপদেষ্টা ইমাম রোববার রাতে এটিএন বাংলার অনুষ্ঠানে বলেন, “খালেদা জিয়া ফোনালাপে বলেছেন, ‘মুক্তিবাহিনীর লোকেরাই গণহত্যা চালিয়েছিল’।”
সেই সঙ্গে টেলিসংলাপের আরো কিছু বিষয়ে কথা বলেন তিনি, যার ভিত্তিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
৬০ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এসে ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, “সরকারকে বলব, বিরোধী দলের নেতা-কর্র্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ বন্ধ করুন। নির্যাতন ও গ্রেপ্তার বন্ধ করুন। সঙ্কট নিরসনে সংলাপ শুরু করতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিন।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে পুলিশসহ আওয়ামী লীগকর্মীদের হামলায় তিনজন নিহত এবং আড়াই হাজার আহত হয়েছে। বিরোধী দলের সাত শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার ও ১৭ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১২ জন নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমের কার্যালয়ের সামনে ও সাংবাদিকদের যানবাহনে বোমাহামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি দাবি করেন, এর পেছনে ‘সরকারের এজেন্ট’রা জড়িত।
“বিরোধী দলের কর্মসূচিকে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সরকার নিজেদের লোক ও এজেন্ট দিয়ে গণমাধ্যমের অফিস, যানবাহন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বাড়িতে বোমাবাজির চক্রান্ত করে চলেছে। এটা স্বতসিদ্ধ যে মিথ্যা অপসৃত হয়ে সত্য উদ্ভাসিত হবেই।”
“আজ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার খবরে থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে- গতকাল (রোববার) গুলশান থানার ককটেল বিস্ফোরণে যাদের আটক করা হয়েছে, তারা যুবলীগের কর্মী।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম, সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মনির খানও উপস্থিত ছিলেন।